বরিশালে ঈদপুনর্মিলনীর নামে বাধ্যতামুলকভাবে প্রাথমিক শিক্ষকদের থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়


মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল:
বরিশাল সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ঈদপুনর্মিলনীর নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকে বাধ্যতামূলকভাবে চাঁদা আদায় করা হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে পারছেন না বলে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন।
চাদাঁ আদায়ের বিষয়টির সত্যতা স্বিকার করে রায়পাশা -কড়াপুর ক্লাষ্টারের দ্বায়িত্তপ্রাপ্ত সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার এ, কে, এম আল মামুন বলেন,১ লা বৈশাখ সকালে স্কুলে অনুষ্ঠানের পর ঈদ পুনর্মিলনীতে যোগদান করবে শিক্ষকরা। প্রতি পনেরশত টাকা ধার্য্য করা হয়েছে এটা সঠিক।
রায়পাশা -কড়াপুর ক্লাষ্টারের ২২ স্কুলের দুই শতাধিক শিক্ষকদের বাধ্যতামুলকভাবে জনপ্রতি পনেরশত টাকা চাদাঁ আদায় করা হয়েছে ঈদ পুনর্মিলনীর নামে।বরিশাল জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নাম ভাঙ্গিয়ে সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার এ, কে, এম আল মামুন ইতিমধ্যে তিন লক্ষ টাকায় আদায় করছে। চাদাঁ আদায়ের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের।
চাঁদার টাকা দিতে অনেক শিক্ষক অস্বীকৃতি জানালেও কর্মকর্তাদের ভয়ে বাধ্য হয়েই ১৫০০ টাকা করে চাঁদা দিচ্ছেন।
কয়েকজন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চাঁদা তুলে এত টাকা খরচ করে ঈদপুনর্মিলনীর যৌক্তিকতা কোথায়? আমাদের মতো নিরীহ শিক্ষকদের টাকা তুলে অফিসারদের তোষামোদী ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য দেখতেছি না। এটার কোনো প্রয়োজন নেই।
১৪ এপ্রিল ১লা বৈশাখ বরিশাল সদর উপজেলার নিসর্গ রিসোর্টে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান,১লা বৈশাখ ছুটির দিন।স্কুলে বৈশাখের অনুষ্ঠান বাধ্যতামুলক আবার ঈদ পুনর্মিলনীতে থাকাও বাধ্যতামুলক।এনিয়ে বুপাকে পরেছি।তিনি বলেন স্কুলের প্রোগ্রাম শেষে পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটির দিনটি উপভোগ করবো। কিন্তু সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঈদপুনর্মিলনীর অনুষ্ঠানে থাকলে কিভাবে ছেলে সন্তান নিয়ে সময় কাটাবো। ঐ শিক্ষক বলেন এটিও মামুন স্যার নিজের বাহাদুরি প্রকাশ ও ভালো সাজতে এই গরমে দিনব্যাপী একটি আয়ের আয়োজন করছে।অনুষ্ঠানে লক্ষাধিক টাকা তার আয় হবে।
একাধিক শিক্ষকদের অভিযোগ সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার এ, কে, এম আল মামুন শিক্ষকদের বদলি, বিদ্যালয়ের রুটিন মেইনটেইনেন্স, ওয়াশ ব্লক, প্লেয়িং এক্সেসরিজসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খাত থেকে শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্য করে থাকেন। বদলি, পদায়ন ও তদন্তের নামে নানা কায়দায় শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেন। বিভিন্ন সরকারি দিবসের বরাদ্দ করা টাকা যথাযথভাবে ব্যয় করতে না দেওয়াসহ শিক্ষকদের ভ্রমণ বিল, বিনোদন ভাতা থেকেও টাকা কর্তন করে রাখেন। তার রয়েছে কয়েকজন বিশ্বস্ত শিক্ষক। তারা মূলত বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে এসব ঘুষ বাণিজ্যের টাকা তুলে থাকেন আর এর মূল নেতৃত্ব দেন সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার এ, কে, এম আল মামুন।তার বিরুদ্ধে নারী শিক্ষকদের কুপ্রস্তাব দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।কু প্রস্তাবে রাজি নাহলে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করেন।
তার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য, বদলি নিয়ে অনিয়ম, বিদ্যালয়ের বরাদ্দ অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগে দ্রুত তদন্ত এবং তার অপসারণের দাবি জানিয়েছেন বরিশাল সদর উপজেলার শিক্ষকরা। শিক্ষাউপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার এ, কে, এম আল মামুন বলেন,শিক্ষা সফর করা হয়নি তাই ঈদপুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়েছে।এতে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও তাদের পরিবার অংশ নিবেন।শিক্ষক প্রতি পনেরশত টাকা চাদাঁ আদায়ের সত্যতা স্বিকারও করেন। তিনি বলেন, অতিরিক্ত টাকা দিয়ে অফিসারদের উপহার দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে বরিশাল সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন খলিফা বলেন,আমাকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে তবে পনের শত টাকা অতিরিক্ত। এছাড়া এটা অনেক বেশী নেয়া হয়েছে।এটা কোন সরকারি প্রোগ্রাম নয় তাই বাধ্যতামুলক করা যাবেনা।
এ্যাপারে বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ,মো: আল এমরান খন্দকার বলেন,আমাকে আমন্ত্রন জানানো হয়েছে।আমার নাম ভাঙ্গিয়ে যদি চাঁদা আদায় করা হয় তা দুঃখজনক।তিনি বলেন,চাঁদা ম্যান্ডেটরী নয়।যদি চাদাঁ উঠিয়ে থাকে তাহলে সঠিক করেন নি।তিনি বাধ্যতামুলক চাঁদার বিরোধীতা করে বলেন প্রশ্নই ওঠেনা।এমনটি করা হলে আমি ঐ অনুষ্ঠানে যাবো কিনা সন্দেহ।