ইত্তেহাদ স্পেশাল

৩৬ ভূয়া সাব রেজিস্ট্রার এখনো খোশমেজাজে,দাপটের সঙ্গে বহাল

sub reg
print news

সজীব আকবর, সিনিয়র প্রতিবেদক:  ভোলা লালমোহনের সাব-রেজিষ্ট্রার মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম, রাজধানীর ধানমন্ডির মো: আবুল হোসেন, বরিশাল সদরের অসীম কল্লোল, কিশোরগঞ্জ সদরের মিনতী দাস, মিনতী দাসের স্বামী সদ্য রিটায়ার্ডপ্রাপ্ত সাব রেজিস্ট্রার পরিতোষ দাস,গাজীপুর টঙ্গীর আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বাগেরহাট মোংলার স্বপন কুমার দে, সাব-রেজিস্ট্রার কাজী নজরুল ইসলাম, গাজীপুর সদর থেকে সদ্য এলপিআরে যাওয়া সাব রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলম ও গাজীপুর কালিয়াকৈর থেকে এলপিআরে যাওয়া সাব রেজিস্ট্রার নুরুল আমিন তালুকদার, রাজধানীর উত্তরা থেকে সদ্য বদলিকৃত সাব রেজিস্ট্রার লুৎফর রহমান মোল্লা,

ভূয়া সাব-রেজিস্টার লুৎফর রহমান মোল্লা অবৈধ সম্পদের পাহাড় ঢাকতে এখন তিনি জলঢাকাতে

মুজিবনগর সরকারের ভূয়া কর্মচারী হিসেবে চাকরি পাওয়া ভূয়া সাব-রেজিস্ট্রার মোঃ লুৎফর রহমান মোল্লা গত ১৫ বছরে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। তার বর্তমান কর্মস্থল নীলফামারী জেলার জলঢাকাতেও তিনি গড়ে তুলেছেন ঘুষ দুর্নীতি আর জাল দলিল বাণিজ্যের সিন্ডিকেট
অনুসন্ধানে জানা গেছে আওয়ামী সুবিধাভোগী সাব-রেজিস্টার লুৎফর রহমান মোল্লা সম্পর্কে নানান চাঞ্চল্যকর পিলে চমকানো তথ্য।

জানা গেছে, ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষা সনদ ম্যানেজ করে ২০০৯ সালে ঢুকে পড়েন সরকারি চাকরিতে। মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে সাব-রেজিস্টার পদে চাকরি করতে এসেই হাতে পেয়ে যান ম্যাজিক ল্যাম্প। চাকরির মেয়াদ অল্পদিন হওয়ার কারণে শুরু থেকেই দুহাতে অবৈধ টাকা কামাতে শুরু করেন। স্ত্রী-সন্তান ও নিকট আত্মীয়দের নামে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করেন সেসব টাকা। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৫ বছরে তিনি প্রায় ৭০ কোটি টাকা পাচার করেছেন দেশের বাইরে।

বর্তমানে ঢাকার উত্তরা থেকে বদলি হয়ে এখন নীলফামারীর জলঢাকায় কর্মরত সাব- রেজিস্ট্রার লুৎফর রহমান মোল্লা। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ছিল আগে থেকেই। আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ও পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পেতাত্মা হওয়ার কারণে সেসব অভিযোগকে পাত্তা দেননি লুৎফর । সাবেক আইনমন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় চাকরি করে গেছেন। শেষে আওয়ামী নেতাদের দখলদারিত্বকে আইনী বৈধতা দিতে ২০১৮সালে তাকে ঢাকার ধানমণ্ডির সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে বসানো হয় তেজগাঁও রেজিষ্ট্রেশন কমপ্লেক্সে। ধানমণ্ডির অনেক খাস জমি এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের জমি, এনিমি প্রোপার্টি ( শত্রু সম্পত্তি) আওয়ামী নেতাদের দখল ও বৈধকরণ করে দিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন ঘুষ দুর্নীতি আর জাল দলিল বাণিজ্যের মাস্টারমাইন্ড লুৎফর রহমান মোল্লা। ওই সময় সাধারণ জমি মালিকদের মামলার ভয় দেখিয়ে কোনঠাসা করে রাখা হয়। ফলে ধানমন্ডি থেকে বস্তা বস্তা অবৈধ টাকা কামাতে থাকেন তিনি।

চাকরি জীবনে অসংখ্য দুর্নীতি এবং অনিয়ম করে টাকার পাহাড় গড়েছেন লুৎফর রহমান মোল্লা। ভুয়া নামজারী দিয়ে দলিল করা, খাজনা আদায়ের রিসিট ছাড়া দলিল করা, গৃহায়ণের সেল পারমিশন বহিভূর্ত ফ্ল্যাটের দলিল করা, দলিলে ফিস দাগানোর ফলে অবৈধ কাজের দ্বারা অর্জিত বিপুল অর্থ যা দ্বারা তিনি নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এমনকি সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আত্মসাৎ করেছেন সাব- রেজিস্টার লুৎফর রহমান মোল্লা।

 

আরও পড়ুন:

শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড় খেপুপাড়ার ভূয়া সাব রেজিস্ট্রার কাজী নজরুল ইসলাম

 

লুৎফর রহমান মোল্লার আওয়ামী যোগাযোগ এতোই শক্তিশালী ছিল যে, চাকরিবিধি অমান্য করে ধানমণ্ডি থেকে বদলীর দুই বছরের মধ্যে কিশোরগঞ্জ ও গোপালগঞ্জ হয়ে আবারো ফিরে আসেন ঢাকায়। ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর ঢাকার উত্তরায় যোগদানের পর থেকে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষকে নানান বিড়ম্বনায় ফেলে, আইনি ভীতি প্রদর্শন করে অবৈধ অর্থ উপার্জন করতে শুরু করেন।

ধানমণ্ডির মত উত্তরাতেও লীগপন্থী শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন লুৎফর রহমান মোল্লা। দালাল এবং নকল নবিসদের নিয়ে তৈরি এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিমাসে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা টাকা।

উত্তরার বাসিন্দা এক অভিযোগকারী লুৎফর রহমান মোল্লা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘সাব-রেজিস্টার লুৎফর রহমান মোল্লার নাম মুখে নিলেও পয়সা খরচ করতে হয়। তার চারপাশ ঘিরে থাকে দালালদের সিন্ডিকেট। কয়েক দফা তাদের হেনস্তার শিকার হয়েছি আমি এবং অসংখ্য ভূক্তভোগী।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লুৎফর রহমান মোল্লা ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত যত জায়গায় চাকরি করেছেন, প্রত্যেক জায়গাতেই ছিল তার শক্তিশালী সিন্ডিকেট। নিজেকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও শেখ হাসিনার কাছের মানুষ পরিচয় দিয়ে নিজস্ব ক্ষমতার বলয় সৃষ্টি করে কর্মস্থলগুলোতে গড়ে তুলতেন মুজিব ও হাসিনা পন্থী সিন্ডিকেট।
তাছাড়া জুলাই আগস্ট ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে কতিপয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডারদের সাথে মধ্যরাত পর্যন্ত গভীর শলাপরামর্শে লিপ্ত থেকে মোটা অংকের টাকা লগ্নী করেন এই লুৎফর রহমান মোল্লা।

তার দায়িত্বকালীন সময়ে জমি রেজিস্ট্রেশনের রাজস্ব হিসেবে জমাকৃত পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট ও চেক ব্যাংকের হিসেবে নির্ধারিত সময়ে জমা দেওয়ার নজির সর্বসাকুল্যে ৫%। তাছাড়া নাটকীয় কায়দায় এসব পে-অর্ডার ও চেক সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস্ সংশ্লিষ্ট দফতর হতে খোয়া গেছে একাধিকবার। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে ঠান্ডা মাথায় এ সব অর্থ আত্মসাত করেছেন তিনি। জমি রেজিস্ট্রিকালে জমাকৃত জাল পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট কিংবা চেক নির্ধারিত সময়ে জমা না দেয়ার কারণে তাৎক্ষণিক জালিয়াতির বিষয়টি ধরতে পারেননি অডিট সংশ্লিষ্টরা। এসব চেক ও পে-অর্ডার এন্ট্রি দেয়ার জন্য রক্ষিত রেজিস্ট্রারের সকল কলামগুলো পূরণ করা হয়নি। রেজিস্ট্রেশন ম্যানুয়েল অনুযায়ী ক্যাশ ট্রানজেকশন রিপোর্ট বা সিটিআর নিয়মিত ব্যাংকের সাথে মিলিয়ে সংরক্ষণ করার বিধান থাকলেও বাস্তবে তা সংরক্ষণ করা হয়নি। পে-অর্ডার কিংবা চেক সময়মতো রাজস্ব খাতে জমা না হলে তা সংশ্লিষ্ট ইস্যুকারী ব্যাংকে দাবিদারবিহীনভাবে পড়ে থাকে। এক সময় তা ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তারা আত্মসাতের সুযোগ পায়। এভাবে এই খাত থেকেও টাকার ভাগ নিয়েছেন লুৎফর রহমান মোল্লা।

এ ছাড়া বিতর্কিত জমিগুলো রেজিস্ট্রেশন করে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করার একাধিক প্রমাণ এসেছে তার বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে আরও ভয়াবহ চিত্র। আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে সরকারি খাস জমি নিবন্ধন, শত্রু সম্পত্তি নিবন্ধন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ খাজনা খারিজ ব্যাতিত ভূমি নিবন্ধন করেছেন শত-শত । ফলে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।

দুর্নীতিবাজ এ সাব-রেজিস্ট্রার ২০০৯ সালে মুজিবনগর সরকারের ভূয়া সনদ দাখিল করে সাব-রেজিস্ট্রার পদে গত ১৯/১২/২০০৯ইং তারিখে খুলনার তেরখাদা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যোগদান করেন। সেখানে যোগদান করেই নানা অপকর্ম করে দুহাতে কামিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। তারপর বদলী হন খুলনার ফুলতলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। সেখানে খাস জমি ব্যক্তিমালিকানায় দলিল রেজিস্ট্রি করে হয়ে যান অবৈধ টাকার কুমির। এরপর গোপালগঞ্জের কাশিয়ানিতে বদলি হয়ে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানীর নামে শ্রেণী পরবর্তন করে দলিল রেজিস্ট্রি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে চলে যান তিনি।

বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলেও সেসবকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে বদলী হন দেশের লোভনীয় সব সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে।

সাতক্ষীরা সদর, মাগুরা সদর ও কিশোরগঞ্জ সদরে চাকরির সময়ে দলিল মূল্যের ১% অগ্রিম গ্রহণ ব্যতিত দলিল করতেন না তিনি। সেরেস্তা ফি’র নামেও আদায় করেন দলিল প্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। হেবার ঘোষণা দলিলে প্রতি শতাংশে ৩শ টাকা, বিনিময় দলিলে প্রতি শতাংশে ৫শ টাকা, হাইভেল্যুর নামে আদায় করেন ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। নকল প্রতি সাব-রেজিস্ট্রার লুৎফর রহমান মোল্লা নিতেন ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা। মানে পদে পদে ঘাটে ঘাটে ছিলো তার ঘুষ দুর্নীতির জাল বিছানো।

এমনও হয়েছে, জেলা রেজিস্ট্রারের অনুমতি ব্যতিত বহু দলিল কমিশনে রেজিস্ট্রি করেছেন তিনি। আওয়ামী প্রভাব খাটিয়ে এসব হালাল করতেন তিনি। তাছাড়া ডিআর ডিস্ট্রিক্ট রেজিস্ট্রার) এর নামেও বিভিন্ন খাত থেকে আদায় করে থাকেন প্রতি মাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা।

সব মিলিয়ে গত পনের বছরে প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করেছেন সাব-রেজিস্টার লুৎফর রহমান মোল্লা। যার বড় একটা অংশ পাচার করেছেন দেশের বাইরে।

স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর এই সাব-রেজিস্টার এখনো তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
শেষ সময়ে তাকে যেন উত্তরা থেকে বদলি করা না হয়, সে চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। ওই সময় বদলি ঠেকাতে আইজিআর বরাবর আবেদনও করেছিলেন।

সাব-রেজিস্ট্রার লুৎফর রহমান মোল্লার দুর্নীতি অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মোঃ নূর ইসলাম মহোদয় বলেন, ‘অভিযুক্ত সকল সাব- রেজিস্ট্রারের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। আমাদের একটু সময় দিন। সময়মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
তবে সচেতন মহলের আশঙ্কা আর কিছুদিনের মধ্যেই অবসরে যাবেন লুৎফর। এরপর রাতের আঁধারে পালাতে পারেন বিদেশে। আর একবার বিদেশে উঠতে পারলেই বাকি জীবন পায়ের উপর পা তুলে কাটিয়ে দিতে পারবেন রাজার হালে। কলকাতা, দুবাই, কানাডার টরেন্টোর বেগম পাড়াতে রয়েছে প্লট ফ্লাট ও বিভিন্ন ব্যবসায় মোটা টাকা লগ্নী। তাই একবার প্লেনে চেপে বসতে পারলেই লুৎফর রহমান মোল্লা চলে যাবেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। কারণ দেশের প্রচলিত আইনের ধীরগতি ও বন্ধি বিনিময় চুক্তি এবং সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজদের ফেরাতে বিদেশে আইনের নানারকম ফাঁকফোকর থাকায় এসব বিচারের বাণী লাল ফাইলেই আটকা পড়ে থাকবে বলে আশঙ্কা সচেতন মহলের।

নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের সাবেক সাব রেজিস্ট্রার রাউজানের আবু তাহের মো. মোস্তফা,

নোয়াখালীর চাটখিলের মো. আবুল বাশার,

ফেনী সদরের বোরহান উদ্দিন সরকার,

নওগাঁ মহাদেবপুরের রফিক উদ্দিন,

নওগাঁর নিয়ামতপুরের মুক্তিয়ারা খাতুন,

রংপুর সদর থেকে সদ্য বোদা পঞ্চগড়ে বদলি হওয়া সাব রেজিস্ট্রার রাম জীবন কুন্ডু,

পটুয়াখালী সদরের মো. ফারুক,

ভোলার লালমোহন থেকে সদ্য বদলি হওয়া সাব-রেজিস্ট্রার রফিকুল ইসলাম,

২০২৪ সালে মেহেরপুরের জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত মো. আকবর আলী,

কিশোরগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার শফিকুল ইসলাম

এঁরা সকলে খোশমেজাজে বহালতরিয়াতে রয়ে গেছেন সকল ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ, ভুয়া শিক্ষার সনদ ও বয়স জালিয়াতি করে সাব-রেজিষ্ট্রার পদে চাকুরী হাতিয়ে নেন উল্লিখিত মহা দুর্নীতিবাজ ৩৬ সাব রেজিস্ট্রার। এই ৩৬ জনের মধ্যে পদোন্নতি পেয়ে আকবর আলী ও শফিকুল ইসলাম হয়েছেন জেলা রেজিস্ট্রার।

চাকুরীতে যোগদানের পরে ঘুষ দুর্নীতি আর দলিল বাণিজ্যে লিপ্ত হয়ে এরা সকলেই এখন কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। দূর্নীতি দমন কমিশন দুদকে অনেকেই হাজিরা দিচ্ছেন আবার অনেকেই পতিত সরকারের আমলে দুদকের অসৎ কর্মকর্তাদেরকে কালো টাকায় ম্যানেজ করে তাদের অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়ে গেছেন মর্মে জানা গেছে গোপন সূত্রে। ঢাকা জেলার ধামরাইয়ের কালামপুরের সদ্য বদলি হওয়া মুজিবনগর সরকারের কথিত কর্মচারী সাব-রেজিস্ট্রার মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম এর মতো এদের দূর্নীতির কারণে সরকার বছরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।

সূত্রে জানা যায়, ০৭-১২-২০০৯ সালে মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী নামধারী মঞ্জুরুল সাব রেজিষ্ট্রার হিসাবে চাকরী পেয়ে যান ভুয়া শিক্ষা ও মুক্তিযোদ্ধা সনদে। চাকুরী শুরু হতে তজিমুদ্দিন ভোলা, আমতলী বরগুনা, মটবাড়ীয়া, পিরোজপুর, লক্ষীপাশা, নড়াইল, সোনাইমুড়ি, নোয়াখালী, বগুড়া সদর, গাইবান্ধা সহ পরবর্তীতে ঢাকা জেলা কালামপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস ঘুরে এখন আবার লালমোহন ভোলার সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে লুটপাট আর দলিল বাণিজ্য অব্যহত রেখেছেন।

চাকুরী জীবনে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বনে গেছেন শত কোটি টাকার মালিক। লীগ সরকারের আমলে দাপিয়ে বেড়ানো সাব-রেজিষ্ট্রার মঞ্জুরুল ইসলাম এখন ভোল পাল্টে হয়ে গেছেন বিএনপি পন্থী নেতা। চলতি বছরের ১৫-০৬-২০২৫ সালে অবসরে যাবেন তিনি, যে কারণে ঢাকার ধামরাই কালামপুরের স্ট্যাইলে বেপরোয়া হয়ে ঘুষ দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন লালমোহন সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসকে।

কালামপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে চাকরিকালীন সময়ে মঞ্জুরুল ইসলাম ও নকলনবিশ পারুল সিন্ডিকেট একচ্ছত্র আধিপত্য ও দূর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। সাব-রেজিষ্ট্রার ও নকল নবিশ পারুল গং ২০২৪ সালে ১৩৪৬, ৭৫২, ১০৮৬, ১১৫৬, ২১৩৭ নং দলিলগুলো থেকে ব্যাপক ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে মোটা অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করেছেন সাব-রেজিষ্ট্রার মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম ও নকল নবিশ পারুল আক্তার। অল্প কিছুদিনের ভিতরে অবসরে যাবেন বলে বেপরোয়া হয়ে ঘুষ, বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। ধামরাই কালামপুরের দলিল লেখক সমিতির দুজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নারী কেলেঙ্কারীতেও পিছিয়ে নেই সাব-রেজিষ্ট্রি মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম।

সূত্র মতে চাকুরী প্রাপ্ত সময় ভুয়া শিক্ষা সনদ (বিএ পাস) এর সার্টিফিকেট দিয়ে সাব-রেজিষ্ট্রার পদ বাগিয়ে নেন তিনি। সাব-রেজিষ্ট্রার মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম এর জন্ম ১৯৬৬ সালের ১৬ জুন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ছিল মাত্র ৪ বছর ৯ মাস। মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত অধিকাংশ সাব রেজিস্ট্রার ৪ থেকে ৬ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন?? ওই বয়সের দুধের শিশুরা কিভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেন এবং কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন তার কোন সদুত্তর অভিযুক্ত সাব রেজিস্ট্রারদের কেউই দিতে পারেননি।

সাব-রেজিস্ট্রার কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৯৬৭ সালের ২রা এপ্রিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় চার বছর এক মাস বয়স ছিল তার। এত অল্প বয়সেও তারা মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি।

এই দুজনের মতো মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ৩৬ জন ভূয়া সাব-রেজিস্ট্রার এখনো কর্মরত। মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে কর্মস্থলে তাদের রয়েছে ব্যাপক আধিপত্য প্রভাব প্রতিপত্তি ।

প্রভাবশালী এসব কর্মকর্তা পদায়ন বাগিয়েছেন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে।
সূত্রে জানা যায়, স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে তৎকালীন আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিকুর রহমান ও প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম কয়েক কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও ভূয়া শিক্ষা সনদে চাকুরী পাইয়ে দেন এই সকল সাব-রেজিষ্ট্রারদেরকে। এদের নিয়োগের তালিকা অনুযায়ী ১৯৬৭, ১৯৬৬, ১৯৬৫ সালে জন্মতারিখ আছে এমন সংখ্যা ছিল অনেক। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধকালে তাদের বয়স ছিল ৪ থেকে ৬ বছর। জালিয়াতির মাধ্যমে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া নিয়ে তৎকালীন নিবন্ধন অধিদপ্তরসহ আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছিলো বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইজিআর অফিসে একাধিক কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

সর্বশেষ ২০২০ সালের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ৬৭০ জন। এই মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই ভুয়া বলে অভিযোগ ছিল শুরু থেকেই। নিয়োগের কিছুদিন পরই নিয়োগপ্রাপ্তরা ভুয়া, তাদের অনেকেই মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী নন এবং মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে তারা যে সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন, তাও ভুয়া এমন অভিযোগ ওঠে।

এই অভিযোগ তদন্তে আইন মন্ত্রণালয় থেকে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এরপর ২০১১ সালের জুন মাসে মুজিবনগর সরকারের কর্মচারীর ভুয়া পরিচয়ে চাকরি নেওয়া ১৬ জন সাব-রেজিস্ট্রারকে বরখাস্ত করে নিবন্ধন অধিদপ্তর। পরে তারা ফের হাইকোর্টে রিট করে আইনের ফাঁক গলে চাকরিতে ফিরে আসেন বলে সূত্র জানায়।

৪-৫ বছর বয়সী যেসব মুক্তিযোদ্ধা এখনো কর্মরত: মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সাব-রেজিস্ট্রার লুৎফর হোসেন মোল্লা রাজধানী ঢাকার উত্তরা থেকে বদলী হয়েছেন সম্প্রতি। তিনি ৫ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা। জন্ম ১৯৬৬ সালের ১লা জানুয়ারি।

মো: আবুল হোসেন, সাব রেজিস্ট্রার ধানমন্ডি ঢাকা

সাড়ে ৩ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা ঢাকার ধানমন্ডির সাব-রেজিস্ট্রার মো. আবুল হোসেন। তার জন্ম ১৯৬৬ সালের ১১ নভেম্বর। অর্থাৎ আবুল হোসেন তার জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার আইডি কার্ড অনুসারে সাড়ে ৩ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা। এরপরও তিনি স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে তৎকালীন আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিকুর রহমান ও প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে মোটা টাকা ঘুষের বিনিময়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাগিয়ে নিয়ে হয়ে যান মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী। এরপর ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও ভূয়া শিক্ষা সনদে টাকার জোরে পেয়ে যান সাব রেজিস্ট্রার নামের লোভনীয় চাকরী।

এরপর থেকে আর ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও ভূয়া শিক্ষা সনদের সাব রেজিস্ট্রার আবুল হোসেনকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। হাতে পেয়ে যান সাব রেজিস্ট্রার নামের আলাদীনের চেরাগ। হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। নামে বেনামে গড়ে তুলেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। এসব ভূয়া সনদের সাব রেজিস্ট্রারদের নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি শুরু হলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। বরং রাজধানীকে জঞ্জাল মুক্ত করতে এদেরকে বিভাগীয় শাস্তির আওতায় না এনে তড়িঘড়ি বদলি করা হচ্ছে। এভাবে ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ আইজিআর মোঃ নূর ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বদলি আদেশে রাজধানীর ধানমন্ডি সাব রেজিস্ট্রার অফিস থেকে তার কথিত সহকারী কোটিপতি উমেদার রানার মাধ্যমে দলিলের শ্রেণী পরবর্তন, জাল দলিল সম্পাদন করে কোটি কোটি হাতিয়ে নিয়ে এখন যশোর জেলার চৌগাছা সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেছেন।

সাব রেজিস্ট্রার ওসমান গণি মন্ডল

গাজীপুর শ্রীপুরের ওসমান গনি মন্ডল। তার জন্ম ১৯৬৬ সালের ২৪ জুলাই। যদিও তিনি বেশ কিছুদিন ধরে ডিউটি করেছেন পাবনা সদর সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে। তবুও তাকে অধিকাংশ মানুষ চেনে কেরানীগঞ্জ ও গাজীপুর শ্রীপুরের সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে। ২০ শে ফেব্রুয়ারী ২০২৫ আইজিআর মো: নূর ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বদলি আদেশে তিনি আবারো ফিরে এসেছেন গাজীপুরে। তবে এবার শ্রীপুর নয় তিনি যোগদান করেছেন কাপাসিয়া সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে।

কেরানীগঞ্জ মডেল অফিসের সাব-রেজিষ্ট্রার থাকালীন ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম, দূর্নীতির অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ঘুষ ছাড়া কোন দলিল সম্পাদন হতো না তার নিকট। নারীঘটিত বিষয়েও তিনি সিদ্ধহস্ত। অফিসে সুন্দরী নকল নবিশদের কে বিভিন্ন অজুহাতে সম্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে ও অসৎ আচারণের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই। ওসমান গণি রাজধানীর উত্তরায় ৬ তলা আলিসান বাড়ী নির্মাণ করেছেন কয়েক কোটি টাকা খরচ করে। তার নিজ জেলা কুড়িগ্রামে ডুপ্লেক্স বাড়ী নির্মাণ করেছেন কোটি টাকা খরচ করে। এভাবে নামে-বেনামে অবৈধ পন্থায় কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি।

গাজীপুর কালিয়াকৈর সাব রেজিস্ট্রার নুরুল আমিন তালুকদার

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর জন্ম ১৯৬৪ সালের ১২ ডিসেম্বর। সে অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র সাত বছর। ছিলেন প্রথম শ্রেণির ছাত্র। তাঁর পরিবারের কেউ মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নেননি। তার পরও ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী ছিলেন—মর্মে সনদ সংগ্রহ করেন নূরুল আমিন। ২০২৪ সনের ১ লা জানুয়ারি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সাবরেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন তিনি।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, সাবরেজিস্ট্রার নূরুল আমিন তালুকদার নিজ, স্ত্রী ও সন্তানের নামে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। ঢাকা, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরে রয়েছে তাঁর একাধিক বাড়ি-ফ্ল্যাট। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ঘাটান্দি গ্রামে তাঁদের অঢেল সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুদক। তাঁর স্ত্রী গৃহবধূ নুরুন্নাহার খানম এবং মেয়ে জিনাতের নামে থাকা প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা জব্দ করেছে দুদক। দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় ২০২৩ সালের ২৩ জুলাই টাঙ্গাইল জেলা দায়রা জজ আদালতে সম্পদ জব্দের আবেদন করে দুদক। পরে ২০২৪ সালের ৫ই জুন টাঙ্গাইলের সিনিয়র দায়রা জজ নাজিমুদ্দৌলা সাবরেজিস্ট্রার নূরুল আমিন তালুকদার, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেন।

দুদক সূত্র জানায়, নূরুল আমিনের চারটি ব্যাংক হিসাবে ১২ লাখ ১ হাজার ১১১ টাকা, স্ত্রী নুরুন্নাহারের ১০টি ব্যাংক হিসাবে ৪ কোটি ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৬৮ টাকা এবং মেয়ে জিনাত তালুকদারের চারটি ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ২৪ লাখ ৮২ হাজার ১৩৩ টাকাসহ সর্বমোট ৫ কোটি ৪১ লাখ ৩৬ হাজার ৬১২ টাকা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া নুরুন্নাহারের ৭৫ শতাংশ স্থাবর সম্পত্তি এবং জিনাত তালুকদারের নামে থাকা দুটি ফ্ল্যাট ও একটি টয়োটা গাড়ি জব্দের নির্দেশ দেন আদালত।
ডিসেম্বর ২০২৪ সালে এলপিআরে যান নুরুল আমিন তালুকদার ।

পটুয়াখালী সদরের মো. ফারুক, জন্ম ১৯৬৮ সালের ২৫শে মে।

ভোটার আইডি কার্ড ও তার জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী মোহাম্মদ ফারুক একজন আড়াই বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকা ফারুক বিতাড়িত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অর্থের বিনিময়ে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ম্যানেজ করে বনে যান মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী। এরপর এই ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদের বদৌলতে বাগিয়ে নেন সাব রেজিস্ট্রার পদে লোভনীয় চাকরি। সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করে হাতে পেয়ে যান আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ। এরপর থেকে দ্রুত বদলে যেতে থাকে ভাগ্যের চাকা। নামে বেনামে গড়ে তুলেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়।

জুলাই আগস্ট ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে সাব রেজিস্ট্রার ফারুক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের সাথে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকতেন এবং ছাত্র আন্দোলন দমন করতে মোটা অংকের টাকা লগ্নী করেন বলেও পটুয়াখালী সদরে জনশ্রুতি রয়েছে।

বরিশাল সদরের সাব রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও ভূয়া শিক্ষা সনদে চাকরী করে বেশুমার লুটপাট আর জাল দলিল সম্পাদন করে এখন শত শতকোটি টাকার মালিক।।

বরিশাল সদর সাব-রেজিস্ট্রার অসীমের অবৈধ সম্পদের পাহাড়, দেখার কেউ নেই

বরিশাল সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল। সর্বশেষ সরকারি বেতন স্কেলে নবম গ্রেডের কর্মকর্তা তিনি। ৩৪ বছর ধরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে সাব-রেজিস্ট্রার পদে বরিশাল সদর উপজেলায় কর্মরত। নবম গ্রেডের সর্বোচ্চ বেতনের হিসাব ধরলে ৩৪ বছর চাকরি জীবনে তার আয় আড়াই কোটি টাকার বেশি নয়। কিন্তু অসীম কল্লোলের বরিশাল ও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে রয়েছে শতকোটি টাকার বেশি সম্পদ। এমনকি তার স্ত্রী সন্তানদের রয়েছে বাড়ি গাড়ি। সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকরি করে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ার উৎস খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

এদিকে বরিশাল সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যোগদানের পর থেকে অসীম কল্লোলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং ঘুষ গ্রহণসহ নানা অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে আগেও কয়েকবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তিনি।

এর মধ্যে রয়েছে বরিশাল সদর উপজেলায় ১ একর ২৫ শতাংশ জমির ওপর সোনার বাংলা মৎস্য খামার ও অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সদর উপজেলার কাগাসুরা মুকুন্দপট্টি রাস্তার দুই পাশে ৮০ শতাংশ জমির ওপরে সুগন্ধা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ নামে মাছের ঘের। কাগাসুরা বাজারসংলগ্ন এক একর জমির ওপরে মালটা বাগান, নগরীর ৪নং ওয়ার্ড ১২ শতাংশের একটি প্লট। লাকুটিয়া এলাকায় ২০ শতাংশ জমির ওপরে সুগন্ধা পোলট্রি খামার নামে মুরগির ফার্ম, নগরীর পোর্ট রোডে ৫ তলার ভবন। নগরীর হাসপাতাল রোডে অগ্রণী হাউজিং লিমিটেডের ‘ড্রিম প্যালেসে’ কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট (ফ্ল্যাট নং-৩/এ)।

এ ছাড়া পরিবারের সদস্যদের চলাচলের জন্য রয়েছে ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৬৪৮১ নম্বরের টয়োটা ব্র্যান্ডের গাড়ি। স্ত্রীর নামে সদর উপজেলার তালতলী বাজারে ইট, বালু ও রড-সিমেন্টের ব্যবসা। তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন অসীম কল্লোল এলাকায় চাকরি করেছেন সেসব এলাকায় কিনেছেন জমি ও ফ্ল্যাট। তার এসব সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য রয়েছে শতকোটি টাকার ওপরে।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন স্কেল অনুযায়ী একজন সাব-রেজিস্ট্রার ৯ম গ্রেডের বেতন প্রাপ্ত হন। ২২ হাজার থেকে শুরু করে চাকরির শেষ সময়ে এসে মাসে সর্বোচ্চ বেতন দাঁড়ায় ৫৩ হাজার ৬০ টাকায়। সর্বশেষ বেতন অনুযায়ী ৩৪ বছর চাকরি জীবন হিসাব করলে ২ কোটি ১৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি।’

সেই আয় দিয়ে সংসার পরিচালনা, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনাসহ আনুষঙ্গিক খরচ মিটিয়ে লাখ দশেক টাকার বেশি সম্পদ গড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবে সাব-রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল এবং তার পরিবারের যে সম্পদের কথা শোনা যায় তার মূল্য রয়েছে শতকোটি টাকার বেশি, যা আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একজন সাব-রেজিস্ট্রারের এত সম্পত্তির উৎস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা দরকার।

কাগাসুরা এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কাগাসুরার মুকুন্দপট্টি সুগন্ধা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ, বাজারসংলগ্ন মালটা বাগান, লাকুটিয়া এলাকায় সুগন্ধা পোলট্রি খামার নামে মুরগির ফার্ম, সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রারের বলে আমরা জানি। ওই বাগান দেখাশোনার জন্য একজন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

সুগন্ধা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ ও মালটা বাগান দেখভালের দায়িত্বে থাকা আসমত আলী খান বলেন, ‘আমি যতদূর জানি মালটা বাগান ও মাছের ঘের ও তার জমির মালিক সাব-রেজিস্ট্রার। তিনি মাঝেমধ্যে এখানে এসে ঘুরে যান। এ ছাড়া এই এলাকায় তার আরও কয়েকটি জমি রয়েছে বলে শুনেছি।’

তালতলী এলাকার বাসিন্দা আবদুল মান্নান বলেন, ‘এই বাজারে ইট, সিমেন্ট ও বালু বিক্রির প্রতিষ্ঠানের মূল মালিক সাব-রেজিস্ট্রার কল্লোল। তবে কাগজে-কলমে এই প্রতিষ্ঠানের মালিক তার স্ত্রী।’

এ বিষয়ে অসীম কল্লোল বলেন, ‘বরিশাল সদর উপজেলার কাগাসুরায় আমার কোনো জমি নেই। সেখানে সম্বন্ধি (স্ত্রীর বড় ভাই) গোলাম রাব্বানীর নামে ৬০ শতক জমি আছে। তিনি ময়মনসিংহ জেলায় থাকেন। তার অসুস্থতার কারণে ওই সম্পত্তি আমি দেখাশোনা করি। নগরীর উত্তর মল্লিক রোড এলাকায় ড্রিম প্যালেস নামে ৯১০ ফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। পোর্ট রোড এলাকায় সরকারি খাস জমিতে ৫তলা ভবন নির্মাণের অভিযোগ সত্য নয়। ওই এলাকায় আমার বাবার নামে একটি বাড়ি আছে। যেখানে আমরা ৪ ভাই একসঙ্গে থাকি।’

তবে ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট থাকার সত্যতা স্বীকার করে অসীম কল্লোল বলেন, ‘ডিবিএইচ থেকে ৮৫ লাখ টাকার লোন নিয়ে দুটি ফ্ল্যাট কিনেছি। এ ছাড়া সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদে ১ একর ২৫ শতাংশ জমি স্ত্রীর নামে রয়েছে, যা হেবা দলিল মূলে কেনা হয়েছে। এর বাইরে আমার এবং আমার পরিবারের কোনো সম্পদ নেই। ইনকাম ট্যাক্স ফাইলে হিসাব দেওয়া আছে।’

তিনি আরও বলেন, বরিশাল সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদানের পর এখানকার কিছু অসাধু দলিল লেখক এবং অফিসের কিছু কর্মচারী আমার কাছ থেকে অবৈধ সুযোগ নিতে চেয়েছে। আমি তাদের কথামতো কাজ না করায় ওই চক্রটি বিভিন্নভাবে আমাকে হয়রানি ও হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া তথ্য দিচ্ছে।’

কিশোরগঞ্জ সদরের মিনতী দাস। তার জন্ম ১৯৬৬ সালের ১৪ মার্চ। তিনিও ৫ বছর বয়সে মুক্তিযোদ্ধা। তিনিও বহু আগেই হয়েছেন কোটিপতি। বিতাড়িত শেখ হাসিনার এই পেতাত্মা মিনতী দাস নামে বেনামে গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়।

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত মহা ক্ষমতাধর সাব-রেজিষ্ট্রার মিনতি দাস স্বৈরাচারের দোষরা রয়ে গেছেন এখনো বহাল তরিয়াতে। অবৈধ পন্থায় চাকুরি নেয়ার অপরাধে দুদক কর্তৃক ২০১৭ সালে স্বামী-স্ত্রীর গ্রহনকৃত বেতন-ভাতা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ থাকলেও বেতন-ভাতা জমা না দিয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও শিক্ষা সনদে চাকুরি করে যাচ্ছেন। বর্তমানে তার স্বামী পরিতোষ কুমার দাষ চাকুরী হতে অবসরে আছেন। সূত্রে জানা যায়, মুজিবনগর সাব-রেজিষ্ট্রার মিনতি দাসের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও শিক্ষা সনদে সাব-রেজিষ্ট্রার পদে চাকুরী হাতিয়ে নেন।

স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকুরী পাওয়ার সুবাদে বনে যান যাদুর কাঠির মতো রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক। রাজধানী ঢাকায় ফ্ল্যাট, প্লট নামে বেনামে কোটিকোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনি। মাসে বেতন লাখ টাকার কম হলেও চলাচল সামন্ত আমলের রাজা বাদশাদের মতো।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও শিক্ষা সনদের চাকুরী পাওয়ার সুবাদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে বানিয়েছেন উত্তরায় বহুতল বাড়ি, একাধিক গাড়ী, অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি। পল্লবী সাব রেজিষ্ট্রার অফিসে কর্মরর্ত থেকে সেখানেও তার গঠিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছিলো। বিগত সময়ে আইজিআর মান্নান এর নিকট তার বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগ দিলেও তার অবৈধ্য টাকার প্রভাবে সেই সকল অভিযোগ ধামা চাপা পড়ে যায়।

পল্লবী সাব রেজিষ্ট্রার অফিস থেকে তিনি লোভনীয় জায়গা গাজীপুর সদর সাব রেজিষ্ট্রার অফিসে বদলী হয়ে যান অবৈধ টাকা দিয়ে। সেখানেও তিনি দুর্নীতির স্বর্গ রাজ্য পরিণত করেছিলেন। গাজীপুর সদর থেকে তাকে অন্যত্র বদলী করা হলে লীগ সরকারের মন্ত্রীদের ক্ষমতা দাপট দেখিয়ে পুনরায় সে আদেশ বাতিল করে গাজীপুর সদর সাব রেজিষ্ট্রার অফিসে রয়ে যান বহাল তরিয়াতে।

সূত্রে জানা যায়, বিগত সময়ে জাল সনদে চাকরি নেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় দুই সাব রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক ২০১৭ সালে। দুদক সূত্রে জানা যায়, মহা ঘুষখোর সাব-রেজিস্ট্রার মিনতি দাস ও পরিতোষ কুমার দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয় এবং যাচাই বাছাই জন্য তাদের শিক্ষা সনদ, মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে দুদকে হাজির হওয়ার জন্য বলা হলে লীগ সরকারের প্রভাবে মন্ত্রি, আমলাদের দিয়ে সেই অভিযোগ দামা চাপা পড়ে যায়। যা আজও পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।

সূত্রে জানা যায়, সাব রেজিস্ট্রার মিনতি দাস ২০০৯ সালের ৯ ডিসেম্বর নিবন্ধন পরিদপ্তরে যোগ দান করেন সাব রেজিস্ট্রার পদে। মিনতি ১৯৮৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির আগে পাস না করা সত্ত্বেও এইচএসসি এবং বিএ (সম্মান) এর জাল সনদ দাখিল করে চাকরিতে যোগ দান করেন। “তিনি পাবলিক সার্ভেন্ট হিসাবে ভুয়া ও জাল সার্টিফিকেটের মাধ্যমে চাকরি নিয়ে ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত অবৈধভাবে বেতন-ভাতাদি বাবদ সরকারের ১০ লাখ ৯২ হাজার ৭৬৮ টাকা আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন মর্মে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।”সেই অভিযোগের পরিপেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করে দুদক মিনতি দাস ও পরিতোষ কুমার দাসের বিরুদ্ধে।

অন্যদিকে পরিতোষ কুমার দাস ১৯৮৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির আগে পাস না করা সত্ত্বেও বিএসসি (সম্মান) পাসের জাল সনদ দাখিল করে সাব রেজিস্ট্রার হিসাবে ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর যোগ দেন। তিনি রাজধানীর বাড্ডা সাব রেজিস্ট্রার অফিস সহ গুরুত্বপূর্ণ সাব রেজিষ্টার অফিসে দায়িত্ব থাকা অবস্থায় কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ ছিলো। এই দুই মুজিব নগর সাব রেজিষ্টারের ঘুষ, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সরকার হারিয়েছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। শুধুমাত্র তাদের আর্থিক সুবিধার কারনে ।

সূত্রে আরও জানা যায়, সাব রেজিষ্টার পরিতোষও অবৈধভাবে বেতন-ভাতাদি বাবদ সরকারের ১১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৬ টাকা আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে অপরাধ করেছিলেন বলে দুদক সূত্রে জানা যায়। সম্প্রতি মুজিবনগর কর্মচার্রী মহা ঘুষখোর সাব রেজিষ্টার মিনতি দাস কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরর্ত আছেন। কিশোরগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ঘুষ, দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে দেদারছে। লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া অনেক কর্মকর্তাকে অপসারণ হলেও মিনতি দাস রয়ে গেছেন, সকল ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।

অভিযোগ ছিল কিশোরগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার অফিসে যোগদানের পর থেকে অর্থের বিনিময়ে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দলিল রেজিস্ট্রি করে আসছেন।এমন অভিযোগ থাকার পরও নীরব ভূমিকায় দলিল দাতা ও গ্রহীতারা। দাতা, গ্রহিতাদেরকে জিম্মি করে বিভিন্ন অযুহাতে পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে লক্ষ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয় তাকে। তার চাহিদা মাফিক ঘুষ না দিলে হতে হয় বিভিন্ন ভাবে নাজেহাল।

সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নে বিজ্ঞ আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে দলিল রেজিস্ট্রি করেছেন সাব রেজিস্ট্রার মিনতি । সূত্র মতে, মারিয়া মৌজাস্থ আরএস ৮৫৩ খতিয়ানের মালিক জুবেদা খাতুন আরএস ৩৯০৫ দাগে ২০১০ সালের ১৯ জুলাই ৮১৮২ নং দলিলে আরএস ৩৭৬৪ দাগে ২৫ শতাংশ ভূমি ছেলে মোমতাজ উদ্দিন মন্তু’র কাছে সম্পাদন দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর করেন। পরবর্তীতে একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রিকৃত করে দেন।

মোমতাজ উদ্দিন মন্তু’র রেজিষ্ট্রিকৃত দলিলের সেই জায়গায় জুবেদা খাতুনের অপর ছেলে আবু হানিফ ২০১০ সালের ১৬ আগষ্ট রেজিষ্ট্রিকৃত দলিল নং ৬৮৯৭ হেবা ঘোষণা করে নিজে জমির মালিক দাবি করেন। বিষয়টি জানতে পেরে মোমতাজ উদ্দিন কিশোরগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেন। আদালত শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে উল্লেখিত জমিতে দু’পক্ষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেন।

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিপক্ষ হইতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জমিটি রেজিষ্ট্রি করে দেন। বিবাদমান জমির মোট পরিমান ৪১ শতাংশ। সেখান থেকে ৮ শতাংশ জমি ১৯৯০ সালে মা জুবেদা খাতুন ছেলে মোমতাজ উদ্দিন মন্তুকে দিয়ে দেন। পরে ওই জমি ফাতেমা খাতুনের কাছে হস্তান্তর করেন। বাকি জমি মোমতাজ উদ্দিনের কাছে থাকা অবস্থায় ২০১০ সালে আবারও ২৫ শতাংশ জমি মোমতাজ উদ্দিনকে লিখে দেন জুবেদা খাতুন। শুরু থেকেই জমির দখলে ও খাজনা দিয়ে আসছিলেন মোমতাজ উদ্দিন। সবকিছু ঠিক থাকলেও কৌশলে দলিল করে নিজের বলে দাবি করেন মোমতাজ উদ্দিনের সহোদর ভাই আবু হানিফ। এমতাবস্থায় ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আবু হানিফকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তফসিল বর্ণিত জমিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।

আদালতের নিষেধাজ্ঞার সেই নোটিশ আবু হানিফের পাশাপাশি পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ৩৮ লাখ টাকা মূল্যে ১৯ শতাংশ জমি বিক্রি করে দেন আবু হানিফ এবং চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সাব কাবলা দলিল রেজিস্ট্রি করা হয় সাব-রেজিস্ট্রার মিনতি দাসের যোগ সাজসে। এভাবেই ভুয়া সনদ দিয়ে চাকুরী নিয়ে দেদারছে কামিয়ে যাচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। পূর্বের দুদককের অভিযোগের অভিযুক্ত সাব রেজিষ্ট্রার মিনতি দাস মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে দুদকের সেই কর্মকতা কে ম্যানেজ করেছিলেন বলে প্রকাশ্যে তিনি তার সহকর্মীদেরকে জানিয়েছেন।

গাজীপুর সদর থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলম। তার জন্ম ১৯৬৪ সালের ২১ নভেম্বর। এর আগে রাজধানীর বাড্ডার সাব রেজিস্ট্রার থাকাকালীন সময়ে তিনি অবৈধ পথে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে নামে বেনামে গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। এসব অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় বর্তমানে জাহাঙ্গীর আলমের নামে দুদকের মামলা চলমান।

বাড্ডার সাব রেজিস্ট্রার থাকাকালীন জাহাঙ্গীর আলমের যত দুর্নীতি

বাড্ডার সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকরিকালীন জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী রিনা পারভিনের নামে সোয়া ৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পায় দুদক।

সোয়া ৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও দুই কোটি টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের মামলার আসামি বাড্ডা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দায়ের করা মামলার নথিতে দেখা যায়, স্ত্রী বেগম রিনা পারভীন গৃহিণী হওয়া সত্ত্বেও সাব-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলমের চেয়ে অবৈধ সম্পদ বেশি। অর্থাৎ স্বামীর অবৈধ আয়ে বিত্তবান হয়েছেন স্ত্রী। যে কারণে স্বামী-স্ত্রী পৃথক দুই মামলার আসামি।

ওই সময় দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক মামলার বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

২০২১ সালের ৬ই অক্টোবর দুদক আরও জানায়, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ উপ-পরিচালক মো. আলী আকবর বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামি বাড্ডা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে প্রথম মামলায় জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ১ কোটি ৯ লাখ ৮ হাজার ৫০৮ টাকার সম্পদের মালিকানা এবং মোট ৬৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৮০ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অন্যদিকে সাব-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী বেগম রিনা পারভীনের নামে ২ কোটি ১৭ লাখ ১৭ হাজার ৯৫৬ টাকার অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ পাওয়া যায় দুদকের অনুসন্ধানে। এছাড়া ১ কোটি ৫১ লাখ ৮ হাজার ৭০৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ মিলেছে।

এ বিষয়ে এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, বেগম রিনা পারভীন ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। তিনি ২০০১-০২ করবর্ষ থেকে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে আসছেন। তার উল্লেখযোগ্য সম্পদের মধ্যে রয়েছে নিজ নামে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল হসপিটাল লিমিটেডের ১৫ লাখ টাকার শেয়ার, টি.এম.এইচ. ব্রিকের ১৮ লাখ টাকার শেয়ার, ১০ লাখ টাকা মূল্যের ট্রাক, রংপুরের এম.আর.বি ব্রিকের ৪০ শতাংশ শেয়ার (১৮ লাখ টাকা), নগদ ব্যাংকে জমা ৭ লাখ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় জমির মালিকানা রয়েছে তার।

গাজীপুর সদর সাব রেজিস্ট্রার থাকাকালীন জাহাঙ্গীর আলমের দুর্নীতির আমলনামা:

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী মিয়া। তার জন্ম ১৯৬৫ সালের ২৮ জানুয়ারি।

চট্টগ্রামের রাউজানের আবু তাহের মো. মোস্তফা। তার জন্ম ১৯৬৫ সালের ১৯ আগস্ট।

নোয়াখালীর চাটখিলের মো. আবুল বাশার। তার জন্ম ১৯৬৭ সালের ১৫ই মে।

ফেনী সদরের সাব-রেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন সরকার। জন্ম ১৯৬৫ সালের ৩১শে ডিসেম্বর।

সাব রেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন সরকার ও তার স্ত্রী নাসরিন হকের অঢেল সম্পত্তির সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। নামে-বেনামে এই দম্পতির রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট, বাড়ি এবং বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকার এফডিআর। এ ছাড়া এই দম্পতির বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২০ ডিসেম্বর কালবেলায় ‘এক ভবনেই আট ফ্ল্যাট সাব-রেজিস্ট্রারের স্ত্রীর, স্বামীর দুর্নীতির টাকায় সম্পদ’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এর পরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। রাষ্ট্রীয় একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত শুরু করে।

জানা গেছে, বিএফআইইউ গত ১ জানুয়ারি ২০২৫ সাব-রেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন সরকার এবং তার স্ত্রী নাসরীন হকের সম্পদ বিবরণ চেয়ে ৩টি দপ্তরে একাধিক চিঠি দেয়। যার মধ্যে রয়েছে নিবন্ধন অধিদপ্তর, বাংলাদেশে কর্মরত সব তপশিলি ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান/মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডার এবং বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ।।

নওগাঁর মহাদেবপুরের সাব-রেজিস্ট্রার রফিক উদ্দিন। জন্ম ১৯৬৫ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি।

নওগাঁর নিয়ামতপুরের মুক্তিওয়ারা খাতুন। তার জন্ম ১৯৬৫ সালের ২৮শে অক্টোবর।

রংপুর সদরের রামজীবন কুন্ডু, জন্ম ১৯৬৫ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর। দুর্নীতি ও জালিয়াতির দায়ে বরখাস্ত হলেও উচ্চ আদালতে গিয়ে চাকরি ফিরে পাওয়াদের মধ্যে একজন রংপুর সদর থেকে সদ্য বোদা পঞ্চগড়ে বদলি হওয়া সাব-রেজিস্ট্রার রামজীবন কুণ্ডু। তার জন্ম ১৯৬৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ৬ বছরেরও কম। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও রয়েছে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রচুর সম্পদ অর্জনের অভিযোগ।

সম্প্রতি সাব রেজিস্ট্রার রাম জীবন কুন্ডু রংপুর সদর থেকে বদলি হয়ে পঞ্চগড় জেলার বোদা সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

গত ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ আইজিআর মো: নূর ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বদলি আদেশে রাম জীবন কুন্ডুকে রংপুরের পীরগাছা সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে বদলি করা হয়েছে। পীরগাছায় আরেক ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদের সাব রেজিস্ট্রার আফছার আলীর স্থলাভিষিক্ত হলেন রাম জীবন কুণ্ডু।।

রংপুরের পীরগঞ্জের আফছার আলী। তার জন্ম ১৯৬৬ সালের ১১ই অক্টোবর।

বাগেরহাট মোংলার সাব-রেজিস্ট্রার স্বপন কুমার দে। তার জন্ম ১৯৬৬ সালের ১৮ই এপ্রিল।

ভোটার আইডি কার্ড ও তার জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী স্বপন কুমার দে একজন ৪ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকা স্বপন কুমার দে বিতাড়িত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অর্থের বিনিময়ে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ম্যানেজ করে বনে যান মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী। এরপর এই ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদের বদৌলতে বাগিয়ে নেন সাব রেজিস্ট্রার পদে লোভনীয় চাকরি। সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করে হাতে পেয়ে যান পরশপাথর। এরপর থেকে দ্রুত বদলে যেতে থাকে ভাগ্যের চাকা। নামে বেনামে গড়ে তুলেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়।

জুলাই আগস্ট ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে স্বপন কুমার দে কতিপয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের সাথে গভীর শলাপরামর্শে লিপ্ত থাকতেন এবং ছাত্র আন্দোলন দমন করতে মোটা অংকের টাকা লগ্নী করেন বলেও এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে।

ভোলার লালমোহন থেকে সদ্য বদলি হওয়া সাব-রেজিস্ট্রার রফিকুল ইসলাম, জন্ম ১৯৬৫ সালের ২ ডিসেম্বর।

২০২৪ সালে মেহেরপুরের জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত মো. আকবর আলী। তার জন্ম ১৯৬৫ সালের ২রা জানুয়ারি।

কিশোরগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার শফিকুল ইসলাম। তার জন্ম ১৯৬৫ সালের ৩১শে মার্চ।

গাজীপুরের টঙ্গীর সাব-রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল। তার জন্ম ১৯৬৫ সালের ৭ জুলাই। তিনি ৬ বছর বয়সে মুক্তিযোদ্ধা।

ন্যাশনাল আইডি কার্ড ও জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী আবু হেনা মোস্তফা কামাল একজন ৫ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকা পতিত স্বৈরাচারী শাসক বিতাড়িত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অর্থের বিনিময়ে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ম্যানেজ করে বনে যান মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী। এরপর এই ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদের বদৌলতে বাগিয়ে নেন সাব রেজিস্ট্রার পদে লোভনীয় চাকরি। সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করে হাতে পেয়ে যান পরশপাথর। এরপর থেকে দ্রুত বদলে যেতে থাকে ভাগ্যের চাকা। নামে বেনামে দিনাজপুর, গাজীপুর ও ঢাকাতে গড়ে তুলেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়।

জুলাই আগস্ট ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে আবু হেনা মোস্তফা কামাল টঙ্গীর কতিপয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের সাথে গভীর শলাপরামর্শে লিপ্ত থাকতেন এবং ছাত্র আন্দোলন দমন করতে মোটা অংকের টাকা লগ্নী করেন বলেও এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে।

উল্লিখিত সবাই মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধা। এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কাম সাব রেজিস্ট্রারদের পতিত স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার আমলে নিবন্ধন অধিদপ্তরে ছিলো দুর্দান্ত দাপট। ফলে এরা ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সাব-রেজিষ্ট্রীর অফিসগুলোতে পদায়ন বাগিয়ে নেন।

সাব-রেজিষ্ট্রার মোঃ মঞ্জুরুল, রংপুরের রাম জীবন কুণ্ডু, জাহাঙ্গীর আলম( গাজীপুর), বরিশালের অসীম কল্লোল, ধানমন্ডির আবুল হোসেনের মোবাইল ফোনে দলিলের রাজস্ব ফাঁকি, শিক্ষা সদন জালিয়াতি, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদে চাকুরী, ৪ বছর ৯ মাস বয়সে কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হলেন বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তাঁরা কোন মতামত দিতে রাজি হননি।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.