শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড় খেপুপাড়ার ভূয়া সাব রেজিস্ট্রার কাজী নজরুল ইসলাম


সজীব আকবর, সিনিয়র প্রতিবেদক: খেপুপাড়া পটুয়াখালীর ভূয়া সাব রেজিস্ট্রার কাজী নজরুল ইসলাম এখনো বহাল তবিয়তে রামরাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন। তার কাছে আছে নামে বেনামে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড়।
১৯শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ আইজিআর মোঃ নূর ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বদলি আদেশে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থেকে তাকে এই পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় বদলি করা হয়।
খেপুপাড়ার সাব-রেজিস্ট্রার কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৯৬৭ সালের ২রা এপ্রিল হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় মাত্র ৩ বছর ১০মাস বয়স ছিল তার। তারপরও তিনি অবৈধ টাকা ঘুষ দিয়ে বাগিয়ে নেন মুজিবনগর সরকারের কর্মচারীর পদ পদবী। আর রাতারাতি বনে যান ভূয়া শিশু মুক্তিযোদ্ধা। এখানেই শেষ নয়। এরপর ভূয়া শিক্ষা সনদ আর ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদের বদৌলতে মোটা অংকের টাকা লগ্নী করে তিনি বাগিয়ে নেন ভূয়া সাব রেজিস্ট্রারের লোভনীয় পদ।
শুধু কাজী নজরুল ইসলামই নন, এখনো ৩৬ ভূয়া সাব রেজিস্ট্রার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দুর্দান্ত দাপটে প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন আর সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। ভূয়া সাব রেজিস্ট্রার কাজী নজরুল ইসলামসহ এদের অনেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ।। তবে এদের অধিকাংশই এই বছরে অবসরে চলে যাবেন।
পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত মুজিবনগর সরকারের কথিত কর্মচারীদের মধ্যে আছেন পটুয়াখালী সদরের মোহাম্মদ ফারুক, বরিশাল সদরের অসীম কল্লোল,ভোলা লালমোহনের সাব-রেজিষ্ট্রার মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম, রাজধানীর ধানমন্ডির মো: আবুল হোসেন, কিশোরগঞ্জ সদরের মিনতী দাস, মিনতী দাসের স্বামী সদ্য রিটায়ার্ডপ্রাপ্ত সাব রেজিস্ট্রার পরিতোষ দাস, গাজীপুর টঙ্গীর আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বাগেরহাট মোংলার স্বপন কুমার দে, গাজীপুর সদর থেকে সদ্য এলপিআরে যাওয়া সাব রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলম ও গাজীপুর কালিয়াকৈর থেকে এলপিআরে যাওয়া সাব রেজিস্ট্রার নুরুল আমিন তালুকদার, রাজধানীর উত্তরা থেকে সদ্য বদলিকৃত সাব রেজিস্ট্রার লুৎফর রহমান মোল্লা, নরসিংদী সদরের সোহরাব হোসেন,
নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের সাবেক সাব রেজিস্ট্রার রাউজানের আবু তাহের মো. মোস্তফা,নোয়াখালীর চাটখিলের মো. আবুল বাশার,ফেনী সদরের বোরহান উদ্দিন সরকার,নওগাঁ মহাদেবপুরের রফিক উদ্দিন,নওগাঁর নিয়ামতপুরের মুক্তিয়ারা খাতুন,রংপুর সদর থেকে সদ্য বোদা পঞ্চগড়ে বদলি হয়ে বর্তমানে রংপুর পীরগাছার সাব রেজিস্ট্রার রাম জীবন কুন্ডু, ভোলার লালমোহন থেকে সদ্য বদলি হওয়া সাব-রেজিস্ট্রার রফিকুল ইসলাম,২০২৪ সালে মেহেরপুরের জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত মো. আকবর আলী,কিশোরগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার শফিকুল ইসলাম এঁরা সকলে খোশমেজাজে বহালতরিয়াতে রয়ে গেছেন সকল ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ, ভুয়া শিক্ষার সনদ ও বয়স জালিয়াতি করে সাব-রেজিষ্ট্রার পদে চাকুরী হাতিয়ে নেন উল্লিখিত মহা দুর্নীতিবাজ ৩৬ সাব রেজিস্ট্রার। এই ৩৬ জনের মধ্যে পদোন্নতি পেয়ে আকবর আলী ও শফিকুল ইসলাম হয়েছেন জেলা রেজিস্ট্রার।
চাকুরীতে যোগদানের পরে ঘুষ দুর্নীতি আর দলিল বাণিজ্যে লিপ্ত হয়ে এরা সকলেই এখন কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। দূর্নীতি দমন কমিশন দুদকে অনেকেই হাজিরা দিচ্ছেন আবার অনেকেই পতিত সরকারের আমলে দুদকের অসৎ কর্মকর্তাদেরকে কালো টাকায় ম্যানেজ করে তাদের অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়ে গেছেন মর্মে জানা গেছে গোপন সূত্রে।
ভূয়া সাব রেজিস্ট্রার কাজী নজরুল ইসলাম তার চাকরিজীবনের শুরু থেকেই তাঁর কর্মস্থলগুলোতে নিজেকে মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী, মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে নিজস্ব ক্ষমতার বলয় সৃষ্টি করে কর্মস্থলগুলোতে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি সিন্ডিকেট। এছাড়া জুলাই-আগস্ট ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে কতিপয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের সাথে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকতেন মধ্যরাত পর্যন্ত। এছাড়া ছাত্র আন্দোলন দমন করতে কতিপয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের মাঝে মোটা অংকের টাকা লগ্নী করেন ভূয়া সাব রেজিস্ট্রার কাজী নজরুল ইসলাম।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।