ইত্তেহাদ স্পেশাল

আড়াইহাজার সাব রেজিস্ট্রার অফিস ঘুষ দুর্নীতি আর দলিল বাণিজ্যের অভয়ারণ্য

GridArt 20250416 062218333 300x160 1
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার সাব রেজিস্ট্রি অফিস ঘুষ দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এই অফিসে ঘুষ ছাড়া মেলেনা সেবা, নড়েনা দলিল। তবে চাহিদা মোতাবেক উৎকোচ বুঝে পেলে জমির নিবন্ধন, নামজারি, জাল দলিলে জমি দখলসহ সমস্ত কাজ সম্পাদন হয় চোখের পলকে।

জমির শ্রেণী পরবর্তন করে হাইয়ার ভ্যালু ও আন্ডার ভ্যালুর মারপ্যেঁচে ফেলে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় শ’খানেক দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে সাজ্জাদ হোসেন রানার নেতৃত্বাধীন আড়াইহাজার সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে। তার কথিত সহকারী, উমেদার আর নকলনবিশরা চাহিদা মোতাবেক ঘুষের টাকা বুঝে নিয়ে দলিলের মাথায় দেন বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন। আর এসব দলিল সাব রেজিস্ট্রার স্বাক্ষর করেন চোখ বন্ধ করে। আর এভাবেই সাব রেজিস্ট্রার সাজ্জাদ হোসেন রানা নামে বেনামে গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়।

সাব রেজিস্ট্রার এর নির্দেশ মোতাআেক দলিল আটকে রেখে ভুক্তভোগীদের চাপের মুখে ঘুষ দাবি সাব-রেজিস্ট্রারের কথিত সহকারী, উমেদার ও নকলনবিশদের নিয়মিত আচরণে পরিণত হয়েছে। ঘুষ আদায়ের কৌশল হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রারের রুটিন মাফিক কাজ নকলনবিশ, উমেদার ও পিওন দিয়েও করানো হচ্ছে।

এই সুযোগে সহকারী, নকলনবিশ, উমেদাররাও বিপুল অর্থের মালিক বনে যাচ্ছে। নিবন্ধন ম্যানুয়াল অনুযায়ী সাব রেজিস্ট্রার তাদের নিজের কাজ নকলনবিশ, উমেদার ও পিওনদের দিয়ে করাতে পারেননা। যেমন দলিল চেক করার কাজ সাব-রেজিস্ট্রারদের করার নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না অফিস স্টাফরা।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন ম্যানুয়াল-২০১৪-এর অধ্যায়-২৬-এ উল্লেখ আছে যে, সহকারীগণ কর্তৃক দলিল পরীক্ষাকরণ কাঙ্ক্ষিত নয়, এই কাজটি অবশ্যই স্বয়ং নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা অর্থাৎ সাব রেজিস্ট্রার কর্তৃক সম্পাদিত হতে হবে।

আড়াইহাজার সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে সেবাগ্রহীতাদের জিম্মি করে বিভিন্ন কৌশলে অফিস খরচের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে গোপন চুক্তিতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে অফিস সহকারী, উমেদার, মোহরার ও নকলনবিশদের বিরুদ্ধে। আর এর সব কিছুই হচ্ছে সাব-রেজিস্ট্রারের চোখের ইশারায়। মূল দলিলের নকল উত্তোলন করার জন্য সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি ফি আদায়, টাকার বিনিময়ে মূল দলিলের নকল কপিতে ভূয়া গ্রহীতার নাম লিখে নকল সরবরাহ করা, মূল দলিলে গ্রহীতার নাম পরিবর্তন করে দেয়াসহ নানা অপকর্মের মহোৎসব চলছে আড়াইহাজার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে।

আবার দাগ নাম্বার ও জাতীয় পরিচয় পত্রে বানানে কিঞ্চিৎ ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলে ” এসব দলিল কস্মিনকালেও রেজিস্ট্রি সম্ভব নয় ” বলে আওয়াজ তুলে সহকারী হাফিজ, দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ বা উমেদারের সাথে কথা বলার ইঙ্গিত করা হয়। আর এই ধরনের দলিল থেকে গোপনে লুটে নেন লক্ষ লক্ষ টাকা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাজ্জাদ হোসেন ২০১৭ সালে সাব-রেজিস্ট্রার পদে গত ০৮/০১/২০১৭ইং তারিখে দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যোগদান করেন। খুলনা, গোয়ালন্দঘাট, রাজবাড়ী, ঢাকা দক্ষিণ, সিলেট দক্ষিণ সুরমায় কর্মস্থলের সুযোগ হলে পরবর্তীতে বদলী আদেশে আড়াইহাজারে ০৪-০৭-২০২৪ তারিখে যোগদান করেই নানা অপকর্ম করে দুহাতে কামিয়ে নিচ্ছেন বিপুল পরিমান অর্থ। আড়াইহাজারে যোগদান করেই সাব-রেজিস্ট্রার সাজ্জাদ হোসেন শুরু করেন নানা ফন্দি ফিকিরের দুর্নীতি। দলিল মূল্যের ১% অগ্রিম গ্রহণ ব্যতিত দলিল করেন না তিনি। সেরেস্তা ফি’র নামেও আদায় করেন দলিল প্রতি ২/৩ হাজার টাকা১। হেবার ঘোষণা দলিলে প্রতি শতাংশে ৩শ টাকা, বিনিময় দলিলে প্রতি শতাংশে ৫শ টাকা, হাইভেল্যুর নামে আদায় করেন ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতিদিন অফিসের কাজ শেষে উমেদার হাফিজ সাব-রেজিস্ট্রার সাজ্জাদ হোসেনের নামে সব ঘুষ-দুর্নীতির টাকা আদায় করে থাকেন। আদায়কৃত টাকার ৬০% নেন সাব রেজিস্ট্রার, ২০% অফিস স্টাফ, আর বাকি ২০% দলিল লেখক সমিতি, কতিপয় রাজনৈতিক নেতা ও আইজিআর অফিস ম্যানেজের নামে বন্টন হয়ে থাকে।

ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা শেখ হাসিনার শাসনামলে নিজেকে শেখ হাসিনা ও আইনমন্ত্রীর কাছের মানুষ পরিচয় দিয়ে নিজস্ব ক্ষমতার বলয় সৃষ্টি করে কর্মস্থলগুলোতে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি সিন্ডিকেট।

তাছাড়া জুলাই আগস্ট ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে প্রতিদিন মধ্যরাত পর্যন্ত কতিপয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের সাথে গভীর শলাপরামর্শে লিপ্ত থাকতেন। তাছাড়া আন্দোলন দমাতে মোটা অংকের টাকা ক্যাডারদের মাঝে লগ্নী করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দলিল লেখক বলেন, ৫ই পতিত শেখ হাসিনা দিল্লি পালিয়ে গেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাব রেজিস্ট্রার সাজ্জাদ হোসেন রানা দিন পনেরো চুপচাপ আত্মগোপনে চলে গেলেও তারপর থেকে আবারও স্ব মহিমায় উদ্ভাসিত।

এই অফিসে সকল অবৈধ লেনদেনগুলো হয়ে থাকে নিয়োগবহির্ভূত উমেদারদের মাধ্যমে। এছাড়া দাতাগ্রহীতার মধ্যে জমির প্রকৃত বিনিময় মূল্য বেশি হলেও তা সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের সহায়তায় কম দেখানো হয়। যে কারণে প্রতিনিয়ত প্রকৃত রেজিস্ট্রেশন ফি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

তাই আড়াইহাজার সাব রেজিস্ট্রার অফিস থেকে সাজ্জাদ হোসেন গংকে অপসারণ পূর্বক এঁদের অবৈধ সম্পদের খোঁজতল্লাশি নিতে আইন উপদেষ্টা, আইজিআর মহোদয় দুদক এনফোর্সমেন্ট টিমের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভূক্তভোগীবৃন্দ ও সচেতন মহল।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.