ইত্তেহাদ স্পেশাল

ঘুষ দুর্নীতির অঘোষিত শাহাজাদা,লুটে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা

WhatsApp Image 2025 04 18 at 17.23.15 4db1a58e
print news

* দুর্নীতি আর দলিল বাণিজ্যের মাধ্যমে লুটে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা

মামুনুর রশীদ নোমানী, অনুসন্ধানী প্রতিবেদক: ৫ বছর বয়সী কথিত মুক্তিযোদ্ধা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সাব-রেজিস্ট্রার খোন্দকার গোলাম কবিরের জন্ম ১৯৬৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি।

আর নরসিংদী সদরের সোহরাব হোসেন সরকারের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২৫ অক্টোবর। জন্মসনদ অনুযায়ী গোলাম কবিরের চেয়ে সাড়ে ৪ মাসের সিনিয়র মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেন।

সাব-রেজিস্ট্রার খোন্দকার গোলাম কবির ও সোহরাব হোসেন সরকার ভূয়া শিক্ষাসনদ ও ভুয়া মু্ক্তিযোদ্ধা সনদ ম্যানেজের দুর্দান্ত কারিগর। সাব-রেজিষ্ট্রার গোলাম কবির চাকুরী নিয়োগের সময় তার ভুয়া শিক্ষা সনদ দাখিল করেন এমবিএ পাশের। আসলে তিন এমবিএ কোর্সে কোনোদিন ভর্তিই হননি।

মধ্য বয়সে চাকরি পাওয়া ভূয়া সাব রেজিস্ট্রার খন্দকার গোলাম কবির ও সোহরাব হোসেন সরকার চাকরির শুরু থেকেই ঘুষ দুর্নীতি আর দলিল বাণিজ্যের মাধ্যমে লুটে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। দুজনেই নামে বেনামে গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। রয়েছে একাধিক ব্যাংক একাউন্ট। এই দুজনসহ নরসিংদী জেলা রেজিস্ট্রার এর নামে আছে বিদেশে টাকা পাচার ও কানাডার টরেন্টোর বেগমপাড়ায় আলিসান বাড়ি তৈরি ও বিদেশে ব্যবসায় টাকা লগ্নীর অভিযোগ। এছাড়া ঢাকার উত্তরা, মতিঝিল, খিলগাঁওয়ে রয়েছে নামে-বেনামে একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট।

অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হওয়া নরসিংদী ও রূপগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার অফিস নিয়ন্ত্রণ করছেন দুই ভূয়া সাব রেজিস্ট্রার। এদের হাতে আছে ম্যাজিক স্টোন বা পরশ পাথর। এই পরশ পাথরের ছোঁয়ায় নরসিংদী জেলা রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ আরিফুর রহমান, সাব রেজিস্ট্রার সোহরাব হোসেন সরকার ও রূপগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার খোন্দকার গোলাম কবির সপ্তার ৫ কর্ম দিবসে অবৈধ পথে আয় করেন ২৫/ ৩০ লাখ টাকা। শুনতে অবাস্তব মনে হলেও এটাই নির্মম সত্য।

রূপগঞ্জ, নরসিংদী সদর ও জেলা রেজিস্ট্রার নরসিংদীর দপ্তর ঘুষ ছাড়া চলতেই চায়না। ঘুষের বিনিময়ে চলে শ্রেণি বদল। আর এই শ্রেণি বদলের মাধ্যমেই হয় দলিল রেজিস্ট্রেশন। বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি দলিল সম্পাদনে নেওয়া হয় সাড়ে ৫ থেকে ৯ হাজার টাকা। তল্লাশ ও নকল লেখার নামে নেওয়া হচ্ছে আরও অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা। এ ছাড়া বালাম বইয়ের পাতা ছিঁড়া, ঘষাঘষি ও চুরিসহ নানা জাল-জালিয়াতি করে সংগোপনে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এছাড়া নাল জমিকে ডোবা নালা জলাশয় বা ধানি জমি বলে লক্ষ লক্ষ টাকা সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে গোপনে সেসব টাকা লুটে নিচ্ছেন নিজেরা।

এসবের বিনিময়ে মাসে শুধু দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা যাচ্ছে নরসিংদী জেলা রেজিস্ট্রার, সদর সাব-রেজিস্ট্রার, রূপগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার, দলিল লেখক সমিতি, দলিল লেখক ও তল্লাশকারক সমিতি এবং কতিপয় নামধারী নেতার পকেটে।

নরসিংদী জেলা রেজিস্ট্রার ও সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং রূপগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার অফিস ঘিরে রয়েছে কতিপয় গুন্ডা, নেতা, দালাল চক্র, দলিল লেখক সমিতি ও কতিপয় নামসর্বস্ব কথিত সাংবাদিক চক্র। এরাই মূলতঃ সকল অনিয়মের শেল্টার দিচ্ছেন টাকার বিনিময়ে।

এই দুই সাব রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল গ্রহিতাদের কয়েকটি ধাপে ঘুষ দিতে হয়। প্রথমত, দলিল লেখক সমিতি নামের একটি নামসর্বস্ব সমিতি আছে এখানে। আগে এই দুই অফিসে ছড়ি ঘুরাতো পতিত শেখ হাসিনার পেতাত্মারা। এখন সেখানে ভিড়ে গেছে নামসর্বস্ব কথিত বিএনপির ক্যাডার।

প্রতিটি দলিলের জন্য এই কমিটিকেই দিতে হয় দুই হাজার টাকা করে। কেরানি, মোহরার, টিসি মোহরারদের চেয়ারের পাশে বসে প্রকাশ্যে টাকা সংগ্রহ করেন এই কথিত দলিল লেখক সমিতি।

অফিস খরচ বাবদ সেরেস্তাদারের হাতে দিতে হয় ৩ হাজার টাকা। আর বড় সাহেবের কথা বলে জেলা রেজিস্ট্রার এর সহকারী নেন আরও এক হাজার টাকা।

অনুসন্ধানে জানা যায় এই দুই অফিসে দিনে গড়ে ২ শতাধিক দলিল সম্পাদিত হয়। দলিল তল্লাশ ও নকল লেখার আবেদন নিষ্পত্তি হয় প্রায় দু’শতাধিক। প্রতিটি দলিল সম্পাদন থেকে ঘুষ নেওয়া হয় এক হাজার টাকা, নকল থেকে এক হাজার ও তল্লাশ থেকে আরও এক হাজার টাকা। গড়ে প্রতিদিন জেলা রেজিস্ট্রারের পকেটে ঢুকছে ৮/১০ লাখ টাকা।

অর্থাৎ মাসে শুধু এই দুই অফিস থেকেই অবৈধভাবে টাকা উত্তোলন ২ কোটি থেকে আড়াই কোটি টাকা। এ ছাড়াও নানা অনিয়মের বিপরীতে লেনদেন হয় গোপনে আরও ১৫/ ২০ লাখ টাকা।
নরসিংদী জেলায় আরও ৫টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস রয়েছে। পলাশ, শিবপুর, মনোহরদী, বেলাবো ও রায়পুরা উপজেলা অফিস। এসব অফিস থেকে প্রতি মাসে সদর অফিসে যায় কমপক্ষে আরও ৪০/৫০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে এক জেলা রেজিস্ট্রারের পকেটেই মাসে কমপক্ষে যাচ্ছে দেড় কোটি টাকা। তদ্রুপ নারায়ণগঞ্জের ৭ সাব রেজিস্ট্রার অফিস থেকেও জেলা রেজিস্ট্রারের অবৈধ ধান্দা প্রায় ২ কোটি টাকা।

সমিতির নামে দলিল প্রতি দুই হাজার টাকা করে নেওয়ার কথা স্বীকার করে সমিতির নেতা বলেছেন এই টাকা দিয়ে আমাদের অফিস ভাড়া, মৃত্যু-দাবিসহ অসহায় দলিল লেখকদের সহায়তা করা হয়। তবে সেরেস্তার নামে দলিল প্রতি তিন হাজার এবং বড় সাহেবের নামে দলিল প্রতি এক হাজার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে ওই নেতা বলেন, টাকা না দিলে এখানে কাজ করার সুযোগ নেই।

সরজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ প্রভাবশালী দলিল লেখক প্রতি মাসে শ্রেণি পরিবর্তন করে দু-চারটা দলিল করে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের টাকা।

তাই এদের বিরুদ্ধে আইজিআর ও আইন উপদেষ্টা কঠোর পদক্ষেপ নিবেন এবং দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম আকষ্মিক অভিযান চালিয়ে এদের ঘুষ দুর্নীতির টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করবে এ প্রত্যাশা ভূক্তভোগী ও সচেতন মহলের।।

( চলবে )

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.