সংবাদ আন্তর্জাতিক

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অবস্থান ইসরাইলি নাগরিকদের

Israelis signing petitions 68027e710c4d5
print news

অনলাইন ডেস্ক : একটি যুদ্ধ যে কতদূর গড়াতে পারে এবং সেই যুদ্ধ যখন বন্দিদের ফিরিয়ে আনার পথ রুদ্ধ করে ফেলে—তখন কি দেশপ্রেম আর যুদ্ধপ্রেম এক জায়গায় দাঁড়ায়? খোদ ইসরাইলের ভেতরেই এখন এ প্রশ্নটিই তোলপাড় সৃষ্টি করছে। যার জবাবও মিলছে ইসরাইলিদের থেকেই।

সম্প্রতি ‘রিস্টার্ট ইসরাইল’ (Restart Israel) নামক প্ল্যাটফর্মে চলমান একাধিক অনলাইন পিটিশনে ইতোমধ্যেই সই করেছেন ১ লাখ ২৮ হাজারেরও বেশি ইসরাইলি নাগরিক। তাদের মূল দাবি— গাজায় বন্দি থাকা ইসরাইলি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে যদি যুদ্ধ থামাতে হয়, তাও মেনে নেওয়া হবে।

এমনকি তারা খোদ যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সরকারের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছেন।

এসব অনলাইন পিটিশনে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্বাক্ষরের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার। শুক্রবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ১১৪-তে। এছাড়া নতুন করে অন্তত চারটি পিটিশন যুক্ত হওয়ায় মোট পিটিশনের সংখ্যা এখন ৪৭।

সামরিক বাহিনীর মধ্যেও ভাঙনের সুর

পিটিশনে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে শুধু সাধারণ ইসরাইলি নাগরিকই নন, রয়েছেন ১১ হাজারের বেশি রিজার্ভ ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যও। তারা অন্তত ২০টি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। যা দেশটির সেনাবাহিনীর নানা ইউনিটকে প্রতিনিধিত্ব করে।

অভ্যন্তরীণ এই চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একপ্রকার ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করে উলটো ওই সেনাসদস্যদেরই হুঁশিয়ার করেছেন বরখাস্ত করার হুমকি দিয়ে।

এমনকি নেতানিয়াহু দাবি তুলেছেন, ‘বাইরের অর্থে পরিচালিত গোষ্ঠীগুলো’ নাকি এই পিটিশন প্রচারে জড়িত। যার লক্ষ্য তার জোট সরকারকে উৎখাত করা।

তবে, যখন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয় এবং যুদ্ধের মূল ব্যাখ্যাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে—তখন রাষ্ট্রের ভেতরে তৈরি হয় নতুন মনোভাব। বন্দিদের পরিবারগুলো এখন শুধু সরকার নয়, গোটা সমাজের কাছে প্রশ্ন রাখছে:

‘আমার সন্তান বন্দি আছে, আর আপনি বলছেন যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে হবে?’

ইসরাইলিদের এই পিটিশনগুলো যেন কেবল স্বাক্ষরই নয়—বরং ইসরাইলি জনমানসে ক্রমশ জন্ম নেওয়া এক নৈতিক দ্বন্দ্বের দলিল। যুদ্ধের ফলাফল কী? কে জয়ী? আর বন্দিরা কি কেবল আরেক দফা সংঘাতের সোপান হয়ে থাকবে?

যুদ্ধবিরতির ব্যর্থতা ও হস্তক্ষেপের রাজনীতি

এদিকে দীর্ঘ ১৫ মাসের অব্যাহত আগ্রাসনের পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি ও বন্দি-বিনিময় প্রক্রিয়ার সূচনা হয়। তবে ওই প্রক্রিয়ার প্রথম পর্যায় শেষ হওয়ার পর নেতানিয়াহু দ্বিতীয় পর্যায়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান। তার কট্টরপন্থি জোটসঙ্গীদের চাপে তিনি গাজায় আবার হামলা চালানোর পক্ষে অবস্থান নেন। যার ফলে গাজায় গত ১৮ মার্চ থেকে আবারও পূর্ণমাত্রায় বিমান, ড্রোন ও স্থল হামলা শুরু হয়।

গণহত্যার দ্বিতীয় বর্ষ

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে অব্যাহতভাবে চলা ইসরাইলি সামরিক অভিযানে গাজায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৫১,০৬৫ জনে ঠেকেছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

তবে গাজার তথ্য অফিসের মতে, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এখনো কয়েক হাজার মানুষ নিখোঁজ থাকায় তাদেরকে মৃত বলে ধরা হচ্ছে। যা নিয়ে নিহতের মোট সংখ্যা ৬২ হাজারের বেশি। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ফিলিস্তিনি।

গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) ইতোমধ্যেই নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগে বিচার চলছে।

শেষ কথা হলো- যুদ্ধে কখনো শুধু ফ্রন্টলাইনে মরে না—সে ভেঙে দেয় অভ্যন্তরের মেরুদণ্ড, প্রশ্ন তোলে নৈতিকতায় এবং একসময় নিজেই প্রশ্ন করে পিতৃভূমিকে। আজকের ইসরাইলে হয়তো সেটাই ঘটছে।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.