অনুসন্ধানী সংবাদ

শ্রমিক লীগ নেতা হয়ে ‘আলাদিনের চেরাগ’ পান গাইবান্ধার হায়দার

GAIBANDHA 6808bb5ddf7e0
print news

গাইবান্ধা অফিস:  গাইবান্ধার সাঘাটার বোনারপাড়া ইউনিয়নের শিমুল তাইড় গ্রামের হায়দার আলী ছিলেন অতি সাধারণ ঘরের সন্তান। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগের ফায়ারম্যান হিসেবে কাজ করতেন। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ফায়ারম্যান থেকে রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বনে যান। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে।শ্রমিক লীগ সভাপতির পদ পেয়ে যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান হায়দার। ঘুস, দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, রেলের মার্কেটে দোকানঘর বরাদ্দ নিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি। করেছেন আলিশান বাড়ি, কিনেছে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি। নিজের প্রভাবে রেলওয়েতে দিয়েছেন ছেলেকেও চাকরি।স্বৈরাচারের দোসর এ দুর্নীতিবাজকে গ্রেফতারের আবেদন জানিয়ে একটি অভিযোগ করা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও গাইবান্ধার জেলা প্রশাসকের কাছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, স্বৈরাচার সরকারের আমলে রেলওয়ে শ্রমিক লীগ নেতা হিসাবে তিনি শুয়েবসে থাকতেন রেল ভবনে। নেতাদের সঙ্গে তদবিরবাজ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সে কারণে ফায়ায়ম্যানের কাজ আর করতে হয়নি। তখনকার রেলমন্ত্রী আর আ.লীগ নেতাদের ম্যানেজ করে শুরু করেন চাকরি ও বদলি বাণিজ্য। কর্মস্থল বাদ দিয়ে প্রায়ই থাকতেন ঢাকায়। তারপর শুরু করেন নিয়োগ ও ঘুস বাণিজ্য।আওয়ামী লীগ আমলে রেল বিভাগে যত নিয়োগ হয়েছে এ ফায়ারম্যান হায়দার আলী ছিলেন এজেন্ট। প্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুস নিয়ে গায়েব হয়ে যেতেন। এভাবে শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে চলে আসেন বোনারপাড়ায়। টাকা দিয়েও চাকরি না পাওয়া ভুক্তভোগী লোকজন দিনের পর দিন ধরনা দিয়েছেন তার বোনারপাড়ার বাড়িতে।

আওয়ামী লীগ আমলে হায়দার যখন রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন তখন তার বড় ছেলে রায়হান কবীরকে রেলওয়ে বিভাগের বুকিং ক্লার্ক হিসাবে চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। তারপর বদলি করে ছেলেকে নিয়ে আসেন নিজ এলাকা বোনারপাড়া রেলস্টেশনে।ক্ষমতার দাপটে চাকরি আর বদলি বাণিজ্য করে ১৬ বছরে তিনি অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান। রাজকীয় জীবনযাপন করেও তিনি বোনারপাড়ায় জমি কিনেছেন অন্তত পাঁচ কোটি টাকার। জায়গা কিনে গড়ে তুলেছেন পাঁচতলা আলিশান বাড়ি। বগুড়া শহরে দুটি ফ্ল্যাট ও ঢাকা শহরে একটি ফ্ল্যাট এবং বগুড়া রেলওয়ে মার্কেটে ৫০টিরও বেশি দোকান রয়েছে তার।রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ও আ.লীগের প্রভাব খাটিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলেন বিভিন্ন স্থানে। এরপর চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ঢাকা থেকে স্থায়ীভাবে চলে আসেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়ায়। তারপর যোগ দেন সাঘাটা উপজেলা আ.লীগে। টাকা বিলিয়ে আ.লীগ নেতাদের হাতে নিয়ে নিজে বনে যান সাঘাটা উপজেলা আ.লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। তারপর স্থানীয় এমপির কাছের মানুষ হয়ে নিজের অবস্থানকে শক্ত করে তোলেন। তিনিও বনে যান আ.লীগের ডাকসাইটের নেতা।সাঘাটা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন বরাদ্দে ভাগ বসিয়ে টাকা কামাতে থাকেন হায়দার। এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লোকজন বলেন, আ.লীগ আমলে হায়দার আলী ছিলেন ওই এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। মারামারি, চাঁদাবাজি, থানার দালালি, জমি দখল ছাড়াও টেন্ডারবাজিতে ছিলেন দক্ষ।

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় জনরোষ থেকে বাঁচতে উপজেলা আ.লীগের অন্য নেতাদের মতো হায়দার আলীও তার আলিশান বাড়ি, বগুড়ায় ফ্ল্যাট, দোকান রেখে গা-ঢাকা দিয়েছেন তিনি। এখন তার ছেলে রায়হান কবীর দোকানের ভাড়া তোলার দায়িত্বে আছেন বলে ভাড়াটেরা জানান। অভিযোগের বিষয়ে জানতে হায়দার আলীর ফোনে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.