কাউখালীতে তিন শিক্ষক ও ৮ শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়!


ইত্তেহাদ নিউজ,পিরোজপুর : পিরোজপুরের কাউখালীতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে মাত্র আট শিক্ষার্থী ও তিন শিক্ষক নিয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে নেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হইহুল্লোড়, চারদিকে রয়েছে শুধু সুনসান নীরবতা।
সরেজমিনে উপজেলার ৬নং জব্দকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে গিয়ে এমন চিত্রই চোখে পড়ে।সংশ্লিষ্টরা জানান, পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলায় ১৯৪২ সালে স্থাপিত হয় ৬নং জব্দকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের বাস্তবায়নে বিদ্যালয়টি শেষ পুনর্নির্মাণ করা হয় ২০১৮-১৯ সালে। অবকাঠামোগতভাবে উন্নত থাকলেও বিদ্যালয়টিতে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা মাত্র আটজন এবং শিক্ষক তিনজন।
বিদ্যালয়ের কাগজে কলমে দেখা যায়, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোনো ছাত্র-ছাত্রী নেই। আট ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে প্রাক প্রাথমিকে তিন, তৃতীয় শ্রেণিতে দুই, চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে তিনজন রয়েছে। সব শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রী একই ক্লাসে বসে ক্লাস করে। অন্য ক্লাসরুম তালাবদ্ধ ও ফাঁকা পড়ে থাকে। নির্জন ও ভাঙা রাস্তা এবং কোনো শিক্ষিকা না থাকার কারণে অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানকে এই স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী নয়।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিম আখতার বলে, ‘বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী কম থাকায় লেখাপড়া তেমন একটা হয় না। স্যারেরা আসেন এবং সব শিক্ষার্থীকে এক জায়গায় নিয়ে ক্লাস করান। বিদ্যালয় বার্ষিক বনভোজন হয় না, খেলাধুলা হয় না, অন্যান্য স্কুলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়; কিন্তু আমাদের এই স্কুলে কিছুই হয় না। তাই আমাদের মন খারাপ।’
বিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জেসমিন বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে আগে ওই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো। আমি ওখান থেকে নিয়ে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছি। বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার রাস্তা খুবই খারাপ এবং নির্জন। ওই বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষিকা না থাকায় বাচ্চাকে পাঠাতে সাহস পাই না। তাই অন্য বিদ্যালয় ভর্তি করে দিয়েছি।’
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর সিকদার বলেন, ‘শিশু জন্মহার, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং কাছাকাছি অন্য বিদ্যালয় থাকার কারণে ছাত্র-ছাত্রী সংকট। তারপরও আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী বৃদ্ধি করা জন্য।’
কাউখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিবুর রহমান বলেন, ‘কাউখালী উপজেলা ৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও শুধুমাত্র ৬নং জব্দকাঠি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ২০ জনেরও কম শিক্ষার্থীর তালিকায় আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে; যাতে এই বিদ্যালয়টি অন্য বিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়।
একসময় জাঁকজমকপূর্ণ বিদ্যালয়টি এখন নীরব নিস্তব্ধ, শিক্ষকদের উদাসীনতা বিদ্যালয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ম্যানেজিং কমিটির মনোমালিন্যকেই দায়ী করছেন এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র-ছাত্রীরা।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।