বাংলাদেশ ঢাকা

গাজীপুর বিআরটিএ অফিস’ যেন ঘুষ ও দুর্নীতির আখড়া

IMG 20250506 WA0019
print news

সজীব আকবর,ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা: ঘুষ দুর্নীতি আর রমরমা লুটপাট বাণিজ্যের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে গাজীপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অফিস। এখানে ঘুষ ছাড়া মেলেনা সেবা, নড়েনা ফাইল। এসবের নেপথ্যের মাস্টারমাইন্ড সহকারী মোটরযান পরিদর্শক গোলাম সারোয়ার। আর তাকে সার্বক্ষণিক বটগাছের ন্যায় ছাঁয়া দিয়ে যাচ্ছেন সহকারী পরিচালক ( ইঞ্জি:) আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মোটরযান পরিদর্শক সাইদুল ইসলাম সুমন। ফলে কোনো জবাবদিহি না থাকায় তগোলাম সারোয়ারের নেতৃত্বে মাসে লুটপাট হচ্ছে কোটি টাকা। সরকার প্রতিমাসে হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। আর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে চেয়ারম্যান মহোদয়সহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের।

মালিকানা পরিবর্তন:

প্রতি গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করতে এখানে সেবা প্রত্যাশীদের গুণতে হয় অতিরিক্ত ৫/৭ হাজার টাকা। গাড়ি ও মালিক ছাড়া মালিকানা পরিবর্তন করতে লাগে ২৫/৩০ হাজার টাকা।
মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন করতে অতিরিক্ত দক্ষিণা দিতে হয় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। ফিটনেস ক্লিয়ারেন্স নিতেও গোলাম সারোয়ারকে দিতে হয় ১৫শ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। তার পোষ্য সিন্ডিকেটের দালাল সোলেমান, জিন্নাত, আহমদ, কাজল, রাজ্জাক, সাত্তার, মনির, জাহাঙ্গীর, শাহীন, সাগর, মফিজদের মাধ্যমে কালেকশন হয় এসব অবৈধ ঘুষের টাকা।

ঘুষের টাকা কে কত পান:::

এসব ঘুষের টাকার ৫০% পান সহকারী পরিচালক (এডি) আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মোটরযান পরিদর্শক সাইদুল ইসলাম সুমন। ৩৫% পেয়ে থাকেন সহ: পরিদর্শক গোলাম সারোয়ার। আর বাকি টাকা দিনশেষে ভাগাভাগী করে নেন অফিস স্টাফ, দালাল গং ও কতিপয় কথিত সাংবাদিক ।
সরজমিনে বিআরটিএ গাজীপুর ::
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘুষ দিয়েই ফিটনেস সার্টিফিকেট পাওয়া যায় ফিটনেসবিহীন গাড়ির। সহকারী মোটরযান পরিদর্শক সারোয়ার তার দালালদের সাথে নিয়ে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করছেন। দেখা মিলে গাড়ির চালকরা দালালের সাথে গোপনে লেনদেন করছেন। গোলাম সারোয়ারের পাশে দাঁড়িয়েই বেশ ক’জন দালালকে ঘুষের টাকা প্রকাশ্যে গুনে নিতে দেখা যায়।

মালিকানা পরিবর্তন:

মালিকানা পরিবর্তন করার বিষয়ে নাম পরিচয় গোপন রেখে সহকারী মোটরযান পরিদর্শক গোলাম সারোয়ারের দালালদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, মালিকানা পরিবর্তনের জন্য সারোয়ার স্যারকে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার ও ফাইল বের করা বাবদ ৫/৭ শ টাকা করে দেওয়া লাগে। আর এই টাকা পেয়ে সারোয়ার স্যার গ্রীন সিগন্যাল দিলে “” বড় স্যাররা এসব কাগজ সহি ( স্বাক্ষর) করবেন চোখ বন্ধ করে।

অভিযান:

দালালদের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে সরকারের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালিত হয়। কিছুদিন পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত ভালো থাকে; তারপর আবার সবকিছু “” যথা পূর্বং তথা পরং “”।।
এ কারণে সারাবছর দালালদের তৎপরতা চলে বিআরটিএ’র গোলাম সারোয়ার এর মতো এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে। মূলত তারাই দালালদের পৃষ্ঠপোষক। তাই বন্ধ হয় না বিআরটিএ কার্যালয়ের দুর্নীতি এবং দালালদের অপতৎপরতা। ফলে প্রতিদিন চলে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্য । বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

সড়কের নিরাপত্তা:

বিআরটিএ অফিস”ই মূলত: সড়ক নিরাপত্তার রক্ষাকবচ। তবে
অদক্ষ ও অযোগ্য চালক লাইসেন্স পেয়ে গাড়ি চালালে অথবা সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চললে এর পরিণতি কী হতে পারে, তা দেশবাসী জানে। আর এ কারণেই দেশে সড়ক দুর্ঘটনা মারাত্মক মহামারি আকার ধারণ করেছে। তাই সরকারের উচিত এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া এবং বিআরটিএ কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা করা।

পতিত সেতুমন্ত্রীর আত্মীয় সারোয়ার:
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডার গোলাম সারোয়ার সড়ক যোগাযোগ ও সেতু বিভাগের সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নিকট আত্মীয় আলোচিত মাসুদের শ্যালিকার স্বামী( মাসুদের ভায়রাভাই)। তাই সব অফিসেই সারোয়ার সমানে ছড়ি ঘোরাতো, মানতোনা কোনো এডিকেও।
সাপে বর::
হঠাৎ করে সারোয়ার ওবায়দুল কাদেরের বদৌলতে পদন্নোতি পেয়ে বিশাল কেউকেটা বনে যান।৷ সহকারী পরিদর্শক সারোয়ার অফিস সহকারী পদে চাকরিতে যোগদান করেন। বিআরটিএর আলোচিত কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আত্মীয় মাসুদের শালিকার স্বামী হওয়ার সুবাদে সারোয়ার যেখানে যান, সেখানেই ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দুর্নীতি চালিয়ে যান। সেই সাথে সহকারী মোটরযান পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পেয়ে টাঙ্গাইল বিআরটিএ অফিসে ব্যাপক রামরাজত্ব কায়েম করেন।
অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগে শাস্তি মূলক গাজীপুরে বদলি হয়ে আসার পর থেকেই তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
গাজীপুর এসে হাতে পেয়ে যান “”” আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ। দু’হাতে লুটতে থাকেন টাকা। নামে বেনামে গড়ে তুলেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। এসময় তার বিরুদ্ধে উঠে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গোলাম সারোয়ারের ভূমিকা:
জুলাই আগস্ট ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে গোলাম সারোয়ার স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের সাথে মধ্যরাত পর্যন্ত গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকতেন। এছাড়া ছাত্র আন্দোলন দমন করতে ওইসব রাজনৈতিক ক্যাডারদের মাঝে ধারাবাহিকভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা লগ্নী করতে থাকেন।
দুদক ও কর্তৃপক্ষের করনীয়:
তার সীমাহীন ঘুষ দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের খোঁজতল্লাশি নিতে মাননীয় উপদেষ্টা, চেয়ারম্যান মহোদয় ও দুদক এনফোর্সমেন্ট টিমের আকষ্মিক অভিযান চান সচেতন মহল ও ভুক্তভোগীবৃন্দ।
এবিষয়ে অভিযুক্ত বিআরটিএ সহকারী মোটরযান পরিদর্শক গোলাম সারোয়ারকে মোবাইলে একাধিকবার কল করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও উনি ফোন রিসিভ করেননি। তাছাড়া ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও উনি থেকেছেন নির্বিকার।

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে গাজীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) এর সাথে যোগাযোগ করলে উনি জানান, গোলাম সারোয়ারের বিষয়ে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ যেনো সেই গৎবাঁধা ডায়লগ ” অনেকটা ভূতের মুখে রাম নাম “।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.