ঘুষ দুর্নীতি আর দলিল বাণিজ্যে সাভারের পলাশ এখন কোটিপতি


সজীব আকবর,ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা: অভিনব ঘুষ দুর্নীতি আর রমরমা দলিল বাণিজ্যে সাভার সাব রেজিস্ট্রার অফিসের কথিত সহকারী পলাশ এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।
পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মদদপুষ্ট পলাশ কীভাবে সাভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অফিসে বছরের পর বছর টিকে আছে তেজগাঁও রেজিষ্ট্রেশন কমপ্লেক্সসহ সাভারের বাতাসেও সে প্রশ্ন ভেসে বেড়াচ্ছে।
দীর্ঘদিন যাবৎ সাভার সাব রেজিস্ট্রার অফিসে কোন তাবিজ কবজের বলে পলাশ বহাল তবিয়তে টিকে আছে, সে কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে আসলো ভয়াবহ তথ্য।
মূলত: স্থানীয় সাংবাদিকের শ্রেণী বিশেষে মাসে মাসে ১০হাজার, ৫হাজার, ৩ হাজার, ২ হাজার টাকা করে বিকাশে পাঠিয়ে থাকেন। এছাড়া নাম সর্বস্ব অনলাইন নিউজ পোর্টাল সাংবাদিকদের প্রতি মাসে ৫০০ ও ১ হাজার টাকা করে বিকাশে পাঠিয়ে থাকে এই পলাশ। তাছাড়া পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরকেও ঈদে পার্বণে মূল্যবান উপঢৌকন পাঠিয়ে নিজেকে রেখেছেন নিষ্কন্ঠক।
পাশাপাশি স্থানীয় কতিপয় রাজনৈতিক নেতা আর রংবাজরাও নিয়মিত মাসোহারা পেয়ে থাকে পলাশের ঘুষ দুর্নীতির টাকার।
তবে পলাশের মূল রক্ষাকবজ রয়েছে আইজিআর অফিস বা নিবন্ধন অধিদপ্তরের বড়বাবুর হাতে। যাকে প্রতিমাসে পলাশ ২ লক্ষ করে টাকা দিয়ে বদলি আদেশ ঠেকিয়ে রাখা এবং দীর্ঘদিন সাভার অফিসে একই স্থানে থেকে নিজের অবস্থান শক্ত করেছেন।
সাব রেজিস্ট্রার আসে, সাব রেজিস্ট্রার যায়, পলাশ সাভার অফিসে থেকেই যায়।
অবৈধ ঘুষ দুর্নীতি, জমির শ্রেণী পরিবর্তন, খাস জমি রেজিষ্ট্রি এবং ভূয়া আইডি কার্ডে জাল দলিল সম্পাদন করে পলাশ হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক।
এভাবে অবৈধ টাকায় সাভার, ঢাকা, লক্ষীপুর নোয়াখালীতে নামে বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।
দলিল লেখক সমিতির কয়েকজন নেতা, দালাল সিন্ডিকেটের কতিপয় সদস্য, নকলনবিশ ও রেকর্ড কিপারের মাধ্যমে প্রতিদিন পলাশ হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। সেই টাকার ৫০% সাব রেজিস্ট্রারকে দিয়ে বাকি টাকা জেলা রেজিস্ট্রার, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও আইজিআর অফিসের নামে রেখে দিয়ে সমূদয় টাকা পলাশ সন্ধ্যায় তুলে নন নিজের ঝুলিতে।
সহজ সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে “কাগজপত্রে সমস্যা আছে ” এ কথা বলে পলাশ দাবি করে মোটা অংকের উৎকোচ। না দিলে জমি রেজিস্ট্রির ক্ষেত্র শুরু হয় নানান টালবাহানা। এই অফিসের ক্লার্ক থেকে শুরু করে মোহরার, টিসি মোহরার ও উমেদারসহ সবাইকে ঘুষ দিতে সুকৌশলে বাধ্য করা হয়।
সরকারি ‘ফি’ এর বাইরে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় পলাশের প্রতিদিনের রুটিন ওয়ার্ক।
ফ্রেশ নাল জমিকে ডোবা, নালা, পতিত ও ধানী জমি বলে মোটা অংকের নজরানা নিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয় গোপন চুক্তিতে। এতে প্রতিমাসে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। চাহিদা মোতাবেক টাকা বুঝে পেলে পলাশ দলিলে দেন বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন। আর সাব রেজিস্ট্রার সেসব দলিল স্বাক্ষর করেন খোশমেজাজে।
সূত্র জানায়, সাভার সাব রেজিস্ট্রার সহকারী পলাশ প্রতিমাসে ৫০ লাখ টাকা অবৈধ উপায়ে উপার্জন করছেন।
সাবেক যুবলীগ নেতা এই পলাশ দাম্ভিকতার সুরে বলে থাকেন, তার বিরুদ্ধে কেউ কিছুই করতে পারবেনা। কারণ তিনি সব জায়গাতেই সিস্টেম করে চলেন।
অভিযোগ রয়েছে জুলাই-আগস্ট ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে পলাশ স্থানীয় কতিপয় যুবলীগ নেতা ও কতিপয় ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে গভীর রাত পর্যন্ত গোপন শলাপরামর্শে লিপ্ত থাকতেন। তাছাড়া ওইসব ছাত্রলীগ যুবলীগ ক্যাডারদের হাতে মোটা অংকের অর্থ তুলে দেন বলে বলে শোনা যায়।
এরপর শেখ হাসিনা ভারতের দিল্লিতে পালিয়ে গেলে দিন ১৫ চুপচাপ থেকে আবারো পূর্বের মূর্তি ধারণ করে পলাশ হয়েছেন স্ব মহিমায় উদ্ভাসিত।
অবৈধ ঘুষ দুর্নীতি আর দলিল বাণিজ্যের টাকায় গড়েছেন বিলাসবহুল আলিশান মহল, কিনেছেন দুটি বহু মূল্যবান প্রাইভেটকার। গড়েছেন নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। আইনের হাত থেকে বাঁচতে চতুর পলাশ এসব সম্পদ কিনেছেন পরিবারের সদস্যদের নামে। সরকারের চোখে ধুলো দিতে খুলেছেন আয়কর ফাইল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ৮/ ৯ বছর আগে সাব রেজিস্ট্রার এর কথিত সহকারী পলাশের এতোটা রমরমা ছিলোনা। সাভার সাব রেজিস্ট্রার অফিসে যোগদান করে হাতে পেয়ে যান আলাদীনের চেরাগ। দ্রুত দলিল বাণিজ্য আর দুর্নীতির টাকায় ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় পলাশের। সাভারের মহা মূল্যবান জমি হেরফের করে অফিসের বাইরে এখন তিনি ” পলাশ সাহেব “।
ঘুষ দুর্নীতির অভয়ারণ্য সাভার সাব রেজিস্ট্রার অফিস থেকে পলাশকে অপসারণ ও তার অবৈধ সম্পদের খোঁজ তল্লাশি নিতে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিমসহ আইজিআর কাজী আব্দুল হান্নান ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মহোদয়ের কঠোর হস্তক্ষেপে কামনা করেছেন ভুক্তভোগী ও সচেতন এলাকাবাসী। ( চলবে)
বি:দ্র: দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচনে আমরা আছি আপনার পাশে।।
তথ্য দিয়ে আমাদেরকে সহযোগিতা করুন। অবশ্যই আপনার নাম পরিচয় গোপন রাখা হবে।