পাকিস্তানের মিসাইল প্রতিরোধ ক্ষমতা কোথায়? কেন তারা ঠেকাতে পারছে না


অনলাইন ডেস্ক : দীর্ঘদিনের সীমান্ত উত্তেজনা ও কূটনৈতিক হুঁশিয়ারির পর অবশেষে যুদ্ধে জড়িয়েছে ভারত-পাকিস্তান। আর এ যুদ্ধে ভারতের আধিপত্য বেশ স্পষ্ট।
পাকিস্তানে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে দেশটি। সীমান্ত পেরিয়ে আঘাত হানছে। ধ্বংস করে দিচ্ছে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। কিন্তু ভারতের সেই আক্রমণ সীমান্তে থামাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। বেশকিছু যুদ্ধাস্ত্র ধ্বংস করলেও সেগুলো হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরেই, অর্থাৎ শত্রু ঢুকে পড়ার পর।
সহজ ভাষায়, পাকিস্তান ঠেকাতে পারছে না। অথচ সেই একই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পাঠানো ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের আকাশেই ধরা পড়ে। সীমান্ত ছাড়ার আগেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় সেগুলো।
পাকিস্তান যখন ভারতীয় আকাশসীমায় হামলার আশঙ্কা নিয়ে সরব তখন প্রশ্ন উঠেছে, পাকিস্তানের মিসাইল প্রতিরোধ ক্ষমতা কোথায়? কেন তারা ঠেকাতে পারছে না ভারতের সুসংগঠিত মিসাইল আক্রমণ?
তবে পাকিস্তানের এ ব্যর্থতার পেছনে মূল কারণ হিসাবে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, কৌশলগত প্রস্তুতির অভাব ও দুর্বল প্রতিরক্ষা অবকাঠামোকেই চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা। এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, এপি।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তানে আকস্মিক হামলা চালায় ভারত। এ দিন ২৫ মিনিটে ২১ স্থানে ২৪ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে দেশটি। এই অভিযানের নাম অপারেশন সিঁদুর রেখেছে ভারত।
অপারেশন সিঁদুরের পর বৃহস্পতিবার সকালেও পাকিস্তানের ৯টি শহরে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ভারত। এতে শিয়ালকোট এবং লাহোরে এয়ার ডিফেন্স ইউনিটগুলো ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাকিস্তান আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি আইএসপিআর) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেছেন, ভারত আবারও একাধিক স্থানে ড্রোন পাঠিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও একটি স্পষ্ট সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন, ১৩তম ড্রোনটি লাহোরের কাছে একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আংশিকভাবে আঘাত করতে সক্ষম হয়। যার ফলে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ১২টি ভারতীয় ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে অপারেশন সিঁদুরের পরেই ভারতের একাধিক সেনা ছাউনিতে হামলার পরিকল্পনা করেছিল পাকিস্তান। ভারতের বিভিন্ন সেনা ছাউনি ও শহরে হামলার ছক কষলেও তা সফল হয়নি।
ভারতীয় সেনার কড়া নজর ও প্রতিরোধে পাক সেনাদের সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। ৭ মে রাত থেকে ৮ মে সকাল পর্যন্ত পাকিস্তান ভারতের ১৫টি শহরে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
কিন্তু ভারতীয় সেনারা আগাম সতর্কতায় এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ সিস্টেম সব মিসাইল ও ড্রোনকে মাঝপথেই ধ্বংস করে দেয়। এই রাশিয়ান প্রযুক্তি-নির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ৪০০ কিলোমিটার দূর থেকে শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম। এটি ২০১৮ সালে ভারত ৫.৪৩ বিলিয়ন ডলারে কিনেছিল। বর্তমানে পাঠানকোট, রাজস্থান, গুজরাটসহ চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই সিস্টেম মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের তিনটি অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমানসহ একটি সুখোই-৩০ ও একটি মিগ-২৯ ভ‚পাতিত করেছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি ড্রোনও ধ্বংস করার দাবি করেছে দেশটি। এই যুদ্ধে ভারতের ব্যবহৃত যুদ্ধাস্ত্রের আনুষ্ঠানিক বিবরণ পাওয়া গেলেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ ও হামলায় কী ব্যবহার করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
ভারত যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও বোমা ব্যবহার করেছে বলে জানা গেছে। ভারতের বেসরকারি ইন্ডিয়ান ডিফেন্স রিসার্চ উইং ও ওয়াশিংটনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের তথ্য অনুযায়ী, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, দীর্ঘ পাল্লার সক্ষমতা ও বহুস্তরবিশিষ্ট কাঠামোর কারণে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাকিস্তানের চেয়ে উন্নত। তবে পাকিস্তানের কৌশলগত প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও ভারতের জন্য কম হুমকি নয়।
আধুনিক প্রযুক্তি ও সক্ষমতায় পিছিয়ে থাকলেও ভারতের যে কোনো আক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে কার্যকর একটি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে পাকিস্তান।
ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা:
আধুনিক, বহুস্তরবিশিষ্ট ও শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছে ভারত। যা যুদ্ধবিমান, ড্রোন, ক্রুজ এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ যে কোনো ধরনের আকাশপথের হুমকি প্রতিহত করতে সক্ষম।
এর প্রধান কয়েকটি ব্যবস্থা হলো-এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ (রেঞ্জ ৪০০ কিমি.), বারাক-৮ (৭০-১০০ কিমি.), আকাশ ও আকাশ-এনজি (৩০-৭০ কিমি.), কিউআরএসএএম (২৫-৩০ কিমি.), স্পাইডার (১৫-৩৫ কিমি.), পিএডি ও এএডি (বিএমডি ব্যবস্থা), এসআরএসএএম (২৫ কিমি.)।
পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা :
পাকিস্তানও তার আকাশ প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণে উদ্যোগী হয়েছে। তবে এর পরিকাঠামো তুলনামূলকভাবে সীমিত ও চীনের ওপর নির্ভরশীল।
এর মূল ব্যবস্থাগুলো হলো-এইচকিউ-৯ পি/৯ বিই (১০০-২৬০ কিমি.), এফডি-২০০০ (১২৫ কিমি.), এইচকিউ-১৬ এফই/এলওয়াই-৮০ (৪০-৭০ কিমি.), এফএম-৯০ (১৫ কিমি.), ম্যানপ্যাডস (যেমন আরবিএস-৭০ এনজি)।
পাকিস্তানের দুর্বলতা:
এইচকিউ-৯-এর জেএসজি-৪০০ রাডার প্রযুক্তি ভারতের এএসএ-ভিত্তিক সিস্টেমের চেয়ে কম উন্নত। ফলে মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্ট এবং জ্যামিং প্রতিরোধ সক্ষমতা অনেকটা কম। এছাড়া ভারতের বিএমডি সিস্টেমের তুলনায় সীমিত অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।