রাজনীতি

৯ মাসেই বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হলেন পিরোজপুর জেলা বিএনপির নেতা লাভলু গাজী

Lovelu Ghazi 681e89b146b2c
print news

* সন্ত্রাস টেন্ডারবাজি পদবাণিজ্য*মাত্র ৯ মাসেই বদলে গেছে সেই চিত্র

আকতার ফারুক শাহিন,অনলাইন ডেস্ক : অভিযোগটা এসেছে খোদ বিএনপি থেকেই। লিখিতভাবে যা দেওয়া হয়েছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে। পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আট নেতার স্বাক্ষর রয়েছে সেখানে। কমিটির দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তারা। ফ্যাসিস্ট পতনের পর টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস আর দখলের অভিযোগ তোলা হয় তাদের বিরুদ্ধে। সেই দুই নেতার একজন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অহিদুজ্জামান লাভলু গাজী। ৫ আগস্টের আগেও যিনি চলতেন রিকশা কিংবা মোটরসাইকেলে। কথায় কথায় বলতেন আর্থিক সংকটের কথা। মাত্র ৯ মাসেই বদলে গেছে সেই চিত্র। লাভলু এখন ব্যবহার করেন একাধিক দামি গাড়ি। পরিবার নিয়ে বেড়াতে যান বিদেশে। হয়েছেন ইটভাটাসহ বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক। ছেলে নেমেছে গাড়ির ব্যবসায়। সব মিলিয়ে চোখ ধাঁধানো পরিবর্তন তার। ক্ষমতার দাপট দেখাতে গিয়ে দিয়েছেন খেসারতও। রাজধানীতে উবার চালককে মারধর করে দিতে হয়েছে মোটা অঙ্কের জরিমানা। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় তার বাড়ি উবার চালকদের ঘেরাও করার সেই ভিডিও ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। লাভলু গাজী অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ছড়াচ্ছে বলে দাবি তার।

ভাইয়ের জোরে রাজনীতি, সরিয়েছেন জিয়ার মাজারের সেতু :

লাভলুর বড় ভাই বাবুল গাজী ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি। ১৫ ফেব্রুয়ারির এমপি এই ভাইয়ের ক্ষমতায় ছাত্রদলের সভাপতি হন লাভলু। ভাইয়ের মৃত্যুর পর হন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব। এসব তথ্য রয়েছে তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রে জমা হওয়া একাধিক লিখিত অভিযোগে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে যাওয়ার সেতু সংসদ ভবন এলাকা থেকে খুলে নিয়ে যাওয়া হয় সিলেটে। মাজারে যাতে কেউ যেতে না পারে সেজন্যই ছিল ওই ব্যবস্থা। উপ-ঠিকাদার হিসাবে মাত্র ছয় লাখ টাকার টেন্ডারে সেতুটি সরিয়ে সিলেটে নিয়ে যান বাবুল গাজী। তাকে সহায়তা করেন ছোট ভাই লাভলু। পিরোজপুরের এক বিএনপি নেতাকে দেওয়া কারণ দর্শাও নোটিশের জবাবে উঠে এসেছে বিষয়টি। আরো কয়েকজন সিনিয়র নেতাও স্বীকার করেছেন এর সত্যতা। আন্দোলন-সংগ্রামে তেমন ভূমিকা না থাকলেও বিএনপি নেতা হিসাবে লাভলু এখন সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী-এমনটাই বলছেন তারা।

অভিযোগ অস্বীকার করে লাভলু গাজী বলেন, মাজারের সেতু সরানোর সময় আমি কলেজছাত্র ছিলাম। কী ঘটেছে না ঘটেছে বিস্তারিত জানি না। ভাইয়ের জোরে নয়, দলের প্রতি আমার ত্যাগের কারণেই ছাত্রদলের সভাপতি পদ পেয়েছিলাম।

লাভলুর বাড়িতে পোড়ে আ.লীগ নেতার গাড়ি :

গত ২ অক্টোবর রহস্যজনক আগুনে পোড়ে পিরোজপুর শহরে লাভলুর বাড়িতে থাকা তার ব্যবহারের গাড়ি। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সেটি পুড়িয়ে দিয়েছে বলে তখন অভিযোগ করেন লাভলু। পরে জানা যায় পুড়ে যাওয়া গাড়ির (ঢাকা-মেট্রো-চ-১১-৭২৫১) মালিক সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিকদার শরিফুজ্জামান মনির। যার বিরুদ্ধে রয়েছে নারী নির্যাতন ও মাদক বাণিজ্যের অন্তত ১০টি মামলা। বর্তমানে পলাতক এই মনিরের যাবতীয় ব্যবসা লাভলু সামলাচ্ছেন এমন আলোচনাও রয়েছে। জুলাই বিপ্লবের পর আরও একটি গাড়ি নিয়ে বিতর্কে জড়ান লাভলু। গত বছরের ১৫ আগস্ট ঢাকার বারিধারার ‘কার সিলেকশন’ থেকে বিক্রি হয় প্রায় কোটি টাকা দামের একটি হেরিয়ার গাড়ি। ২০১৯ মডেলের এই গাড়ি বিক্রির রশিদে ছিল লাভলু গাজী ও তার শ্যালক শামিমের নাম। ঠিকানার জায়গায়ও লেখা ছিল দুজনের ঠিকানা। পরে গাড়ির রেজিস্ট্রেশনে মালিক হিসেবে শামিমের নাম এলেও আগাগোড়া সেটি ব্যবহার করেন লাভলু। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক পলাতক নেতা নাকি তাকে দিয়েছেন গাড়িটি।

লাভলু গাজীর ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকার বাসায় গিয়ে জানা যায়, এটিসহ তার পরিবারের ব্যবহৃত গাড়ির সংখ্যা এখন একাধিক। একসময় বিদেশে ছিলেন লাভলুর শ্যালক শামিম। বর্তমানে বিক্রমপুর এলাকায় ছোটখাটো ব্যবসা করছেন তিনি। প্রায় কোটি টাকা দামের হেরিয়ার গাড়ি কেনার সক্ষমতা তার আছে কিনা তা তদন্তের দাবি উঠেছে দল থেকেই।

অভিযোগ সম্পর্কে লাভলু গাজী বলেন, আমার বাড়িতে পুড়ে যাওয়া গাড়িটি ছিল ভাড়ার গাড়ি। ঢাকার রেন্ট-এ কার মালিক রাসেল সিকদারের কাছ থেকে সেটি ভাড়া এনেছিলাম। গাড়িটি পিরোজপুরের কোনো আওয়ামী লীগ নেতার কিনা তা জানা নেই। আমি কোনো হেরিয়ার গাড়ি কিনিনি। আমাদের পরিবারে এমনিতেই ৪-৫টি গাড়ি। সবই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার।

টেন্ডারবাজি, পদবাণিজ্য, বিরুদ্ধে গেলেই বহিষ্কার :

পিরোজপুরের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ৫ আগস্টের পর সবধরনের ঠিকাদারি কাজে আধিপত্য খাটান লাভলু। জেলা সদরসহ সবকটি উপজেলায় একই পরিস্থিতি। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ঠিকাদারদের সাথে গোপন সমঝোতায় তাদের ফেলে যাওয়া শতকোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ নিজের ঘনিষ্ঠ লোকজনকে দিয়ে করানোর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। মঠবাড়িয়ার এক বিএনপি নেতা বলেন, সম্প্রতি লটারিতে ভান্ডারিয়া পৌরসভার ১৬ লাখ টাকার কাজ পেয়েছি। ফোন করে কাজটি দিয়ে দিতে বলেন লাভলু। রাজি না হওয়ায় ভান্ডারিয়ায় আমাকে কাজ করতে না দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। বিভিন্ন উপজেলা, পৌর এমনকি ইউনিয়ন কমিটির দলীয় পদ নিয়ে বাণিজ্য করার অভিযোগও রয়েছে লাভলুর বিরুদ্ধে। নেছারাবাদ উপজেলায় ২৩ ও পৌর বিএনপিতে ১৫ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে বিএনপির কমিটিতে। স্থানীয় বিএনপির এক নেতা বলেন, যুগ্ম আহ্বায়কের এই সংখ্যাই প্রমাণ করে কী পরিমাণ বাণিজ্য হয়েছে এখানে পদ-পদবি নিয়ে। একই অভিযোগ রয়েছে জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও। বিএনপির চেয়ে ‘জাতীয়তাবাদী লাভলু দল’ প্রতিষ্ঠায় যেন ব্যস্ত এই নেতা। যে কারণে দলের কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললেই বহিষ্কার কিংবা তার পদ-পদবি স্থগিত করেন তিনি। যার সর্বশেষ সংযোজন নেছারাবাদ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সজিব। ভোটের মাধ্যমে স্বরূপকাঠি কলেজ কমিটি গঠনের দাবি জানানোর পরদিনই পদ-পদবি স্থগিতের চিঠি পান তিনি। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, পুরো জেলায় এমন অন্তত ছয় জনকে বহিষ্কার কিংবা পদ-পদবি স্থগিত করেছেন লাভলু।

অভিযোগ অস্বীকার করে লাভলু গাজী বলেন, একসময় ঠিকাদারি করলেও এখন আর করি না। অতএব টেন্ডারবাজির প্রশ্নই আসে না। পদবাণিজ্যের অভিযোগও সত্য নয়। যারা অপকর্ম করেছে তারাই দল থেকে বহিষ্কার হয়েছে। আমার কোনো ইটভাটা নেই। ছেলে তার বন্ধুর শোরুমের গাড়ি অনলাইনে বিক্রি করে। তার নিজের কোনো শোরুম নেই। দল করতে গিয়ে গত ১৬ বছরে কম করে হলেও ১০ বার জমি বিক্রি করে সংসার চালিয়েছি। আমি কোনো দুর্নীতির সাথে জড়িত নই। আমাকে রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস করতে এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.