মামুনুর রশীদ নোমানী :
২০২৩ সালে ভোলার শিবপুর নতুন-কালীকির্তি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩৫০জন শিক্ষার্থী ছিল। ২০২৫সালে এসে দাঁড়িয়েছে ২০০। বাকী শিক্ষার্থীদের পরিবার ভাঙনের কারণে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। বিদ্যালয়টিও দাঁড়িয়ে আছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে ভাঙনের মুখে। দ্রুত মেঘনার তীরে ব্লক বা বালু-সিমেন্ট ভর্তি জিওটেক্সটাইল বস্তা না ফেলা হয়, তাহলে বিদ্যালয়টি সামনের বর্ষায় টিকবে না। কারণ এবার শীতেও ভেঙে বিলীন শিবপুর-কালীকির্তি গ্রাম দুটি। কথাগুলো বলেন-বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরউদ্দিন।
তিনটি মৌজা নিয়ে ভোলার সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়ন গঠিত।কালীকির্তি, শিবপুর ও রতনপুর মৌজায় মোট জমি ছিল ১হাজার ৩২৯ হেক্টর(৩হাজার ২৮৩একর)। গত ৫বছরে শিবপুর ও কালীকির্তির প্রায় ৬৫০একর জমি মেঘনায় বিলীন হয়েছে। এসব তথ্য দিয়েছে ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় ও ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপিসদস্য আবুল কালাম, ও গ্রাম পুলিশ আবুল বাশার।
গত বৃহষ্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়- দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া ইউনিয়নের সীমানা গরীবের দুবাই নামক এলাকা থেকে উত্তরে সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের নাছিরমাঝি পর্যন্ত ভাঙনপ্রবণ এলাকা। গত বর্ষা থেকে বর্তমান চৈত্র পর্যন্ত এলাকার মেঘনা তীর ভেঙে বিলীন হচ্ছে। ভোলা খালের মাথা মাছঘাট এলাকার একটি সেতু, পাকা ঘাটলা, মাটিরবাঁধ, সড়ক, বসত ঘর, মাছের আড়ৎ, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাঙনের মুখে পড়েছে। গ্রীষ্মের শুরুতেই নদীর তীরের ফসলি ও বাগান জমি ও বসত বাড়ি তীব্র ভাঙনে বিলীন হচ্ছে। এর মধ্যে ভোলা খালের মাথা মাছঘাট এলাকার প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেছে। আর মাত্র ৬০মিটার ভাঙলেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করবে বলে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসি।
জেলে মো. আবুল কালাম (৫৫) মাছঘাটে বসে জানান, ৫-৬বছরে এখান থেকে সাড়ে ৩কিমি দূরে তাঁদের বাড়ি ছিল। তাদের ওমর আলী হাওলাদার বাড়িতে ৫টি পরিবার ছিল। ভাঙনে তারা ছড়িয়ে বিভিন্ন এলাকায় বসতি করেছে। তিনি বার ভাঙনের শিকার হয়ে আবার ভাঙনের মুখে পড়েছেন।
এলাকাবাসি আরও জানান, সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের নাছিরমাঝি থেকে শিবপুর, ও দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া পর্যন্ত চার কিলোমিটার মেঘনা তীর ভাঙনকবলিত। ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ২লাখ মানুষ। যেভাবে মেঘনা ভাঙছে, তাতে দ্রুত বালু-সিমেন্ট ভর্তি জিওটেক্সটাইল ব্যাগ ফেলে সমস্যার সমাধান করতে হবে। এবং আগামী শীতে অথবা দ্রুত ব্লক ফেলতে হবে। ভাঙনের কারণে শিবপুর ইউনিয়নের কালীকির্তি ও শিবাপুরের প্রায় ২শতাধিক পরিবার এলাকা ছেড়েছে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। বাঁধ ভাঙলে সদর উপজেলার অর্ধেকই বেশি জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাতে ইউনিয়নের ফসল ও মাছের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
শিবপুরের বাসিন্দা নুর হোসেন জানান, দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে সাড়ে ৩কিমি দূরে ভোলা শহরও হুমকির মুখে পড়বে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়া উদ্দিন আরিফ জানান, শিবপুর ইউনিয়নের বেশি ঝুঁকিতে থাকা বাঁধসংলগ্ন ২০০ মিটার তীর সংরক্ষনে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেখানে বালুভর্তি জিওটেক্সটাইল বস্তা ফেলা হবে। এর জন্য ৮০ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ৪কিলোমিটার মেঘনার তীর সংরক্ষণ ও ৬ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ ও ঢাল(স্লপ)সংরক্ষণের জন্য ৬২৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।
এলাকাবাসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৫আগস্টের পরে প্রভাবশালী কিছুলোক শিবপুর ইউনিয়নের পূর্ব পাশের মেঘনা থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলণ শুরু করেছে। এরপরে থেকে উত্তরের স্রোত সরাসরি তীরে এসে শিবপুরে বাড়ি খাচ্ছে। আর তাতেই ভাঙন বেড়েছে। এলাকাবাসি বৈধ বালু উত্তোলণ বন্ধে গত বৃহষ্পতিবার মানববন্ধন করেছে। তারা বালু উত্তোলণ বন্ধ করে তীর সংরক্ষণের দাবি জানান।
জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান বলেছেন-অবৈধ বালু উত্তোলণ বন্ধে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যাকে পাচ্ছেন তাঁকে ধরছেন।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত