ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমুদ্রে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করছে জাতিসংঘ

cb258b40 33c3 11f0 8519 3b5a01ebe413.jpg
print news

বিবিসি বাংলা: মিয়ানমারের সমুদ্র উপকূলে ভারতীয় নৌবাহিনী কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সমুদ্রে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ জাতিসংঘ তদন্ত করে দেখছে বলে ঘোষণা করেছে।গত সপ্তাহে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজ থেকে আন্দামান সাগরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জোর করে নামিয়ে দেওয়ার খবরে জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একজন বিশেষজ্ঞকে দিয়ে এ ধরনের ‘অনুচিত ও অস্বীকৃত’ ঘটনার তদন্ত করানো শুরু হয়েছে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।এর আগে গণমাধ্যমে এরকম খবর এসেছিল যে দিল্লির পুলিশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের ঘর থেকে আটক করেছে।ওইসব প্রতিবেদন নিয়ে ভারত সরকার বা ভারতের নৌবাহিনী এখনও পর্যন্ত কোনো বক্তব্য দেয়নি।

তবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কথিত প্রত্যর্পণ নিয়ে শুক্রবার ভারতের সুপ্রিম কোর্টে এক শুনানি হয়েছে। ওই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সন্দেহ প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী কোনো আদেশ দিতে অস্বীকার করেছে।

কী বলেছে জাতিসংঘ?

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, ভারতীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে শরণার্থী পরিচয়পত্র থাকা স্বত্বেও দিল্লিতে বসবাসকারী কয়েক ডজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৪০ জনকে চোখ বেঁধে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজে তোলা হয়।

“ওই জাহাজটি আন্দামান সাগর পেরনোর পরে শরণার্থীদের লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হয় এবং মিয়ানমারে সীমানার অভ্যন্তরে অবস্থিত একটি দ্বীপে সাঁতার কেটে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। শরণার্থীরা সম্ভবত সাঁতরে ওই দ্বীপে পৌঁছান, কিন্তু তাদের বর্তমান অবস্থা এবং তারা কোথায় আছেন- এখনও তা অজানা,” ওই বিবৃতিতে বলেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা।

এছাড়াও আসাম রাজ্যের একটি ডিটেনশন সেন্টার থেকে প্রায় ১০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সরিয়ে নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কোনো জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও খবর পেয়েছে জাতিসংঘ।

তারা ওই বিবৃতিতে এও বলেছে, “মিয়ানমারে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নির্যাতন ও সহিংসতার হুমকির সম্মুখীন হওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জোর করে প্রত্যর্পণের যে কোনো প্রচেষ্টা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।”

সুপ্রিম কোর্টে মামলা

আসামে কথিত বিদেশী চিহ্নিতকরণ এবং এনআরসি নিয়ে কাজ করে, এমন একটি সামাজিক সংগঠন সিটিজেন্স ফর জাস্টিস তাদের এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানিয়েছে যে, আসামের গোয়ালপাড়া জেলার মাটিয়াতে দেশের সবথেকে বড় যে ডিটেনশন ক্যাম্পটি আছে, সেখানে সাজাপ্রাপ্ত ‘বিদেশী’দের গণহারে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও আছেন।

এই সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলা সুপ্রিম কোর্টে শুনানির জন্য উঠেছিল শুক্রবার, এমনটাই জানিয়েছে আইন আদালতের খবর দেয় এমন দুটি ওয়েবসাইট – ‘লাইভ-ল’ এবং ‘কোর্টবুক’।

ওই মামলায় দাবি করা হয়েছে যে, ৪৩ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ভারত সরকার জোর করে মিয়ানমারে প্রত্যর্পণ করেছে এবং জাহাজ থেকে উপকূলে অনেকটা দূরে সমুদ্রে নামিয়ে দিয়েছে। ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, ওই দলে শিশু, নারী এবং ক্যান্সার সহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা আছে, এমন বয়স্ক মানুষও ছিলেন।

অভিযোগগুলো নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি কোটেশ্বর সিং।মামলার বাদিরা একটা অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন আদালতের কাছে। তবে সেই অনুরোধ খারিজ হয়ে যায়। মামলাটির দ্রুত শুনানির আবেদনও নাকচ করে দেন বিচারপতিরা।এছাড়া ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলে কাজ করে, এমন একটি সামাজিক সংগঠন ‘মাসুম’ও পৃথকভাবে শীর্ষ আদালতের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে রোববার।

ভারতের প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়ে ‘মাসুম’ লিখেছে যে, রাজস্থান ও গুজরাতের মতো রাজ্যগুলো থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশী নাগরিকদের যেভাবে প্রত্যর্পণ করানো হচ্ছে, তা, “ভারত মেনে চলতে বাধ্য এমন আন্তর্জাতিক আইন যেমন লঙ্ঘিত হচ্ছে, তেমনই ভারতীয় সংবিধানে যেসব অধিকার দেওয়া হচ্ছে, তারও লঙ্ঘন হচ্ছে।

‘মাসুম’-এর প্রধান কিরীটী রায় প্রধান বিচারপতির কাছে ওই চিঠিতে লিখেছেন, যে ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত অভিযোগে যাদের আটক করা হচ্ছে, তাদের যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদালতে হাজির করা হয় এবং তারা যাতে আইনি সহায়তা পান, সেটাও নিশ্চিত করা হয়।

এর আগে বিবিসি একাধিকবার প্রতিবেদন করেছে যে, গুজরাত ও রাজস্থান থেকে ‘অবৈধ বাংলাদেশী’ সন্দেহে বহু মানুষকে আটক করা হয়েছে এবং তাদের অনেককে ইতিমধ্যেই সম্ভবত বাংলাদেশে ‘পুশ-ব্যাক’ করে দেওয়া হয়েছে অথবা ‘পুশ-ব্যাক’ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

ভারতের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলো অথবা সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা গুজরাত ও রাজস্থানের পুলিশ – কেউই ‘পুশ-ব্যাক’ করার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নি।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.