অতিবর্ষণে আমতলী-তালতলী উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত


ইত্তেহাদ নিউজ,আমতলী : ঘূর্ণিঝড় শক্তি ও অমাবস্যার প্রভাবে গত তিন দিনের অতিবর্ষণে আমতলী-তালতলী উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে আউশের ধানের বীজতলা, মাছের ঘের ও পানের বরজ। পৌর শহরসহ উপজেলার সর্বত্র পানিতে থই থই করছে।
পৌর শহরে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় দেখা দিয়েছে চরম জলাবদ্ধতা। ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন পৌরবাসী।
বৃহস্পতিবার পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাওয়া পায়রা নদীর আমতলী-পুরাঘাটা ফেরিঘাট গ্যাংওয়ে তলিয়ে ৩ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল।
জানা গেছে, গত তিন দিনে আমতলীতে ১১৯.৫৮ এবং তালতলীতে ১১০.৬৯ মিমি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে উপকূলীয় অঞ্চল আমতলী-তালতলী উপজেলার অধিকাংশ আউশ ধানের বীজতলা, মাছের ও পানের বরজ পানিতে তলিয়ে গেছে। আমতলী ও তালতলীতে ১ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধানের বীজতলা করা হয়েছে। এর মধ্যে আমতলী ৮৫০ এবং তালতলী ১৫০ হেক্টর বীজতলা রয়েছে।
অমাবস্যার জোর প্রভাবে পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে বলে জানান গেইজ রিডার আবুল কালাম আজাদ। এতে আমতলী-পুরাঘাটা ফেরি গ্যাংওয়ে তলিয়ে গেছে। গ্যাংওয়ে তলিয়ে যাওয়ায় ফেরিতে গাড়ি ওঠা-নামা করতে পারেনি। ফলে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল বলে জানান ইজারাদার সিদ্দিকুর রহমান।
দুই উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাহিরের অধিকাংশ মাছের ঘের ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভিতরের বিভিন্ন এলাকার পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানান চাষিরা। চাষিরা ঘেরের পাড়ে জাল দিয়ে মাছ আটকে রেখেছেন। অপরদিকে জলকপাট দিয়ে তেমন পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় দুই উপজেলায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
এদিকে আমতলী পৌর শহরে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় দেখা দিয়েছে চরম জলাবদ্ধতা। এতে ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পড়েছেন পৌরবাসী। দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আমতলী পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জলাবদ্ধতায় আমতলী পৌর শহরের বিভিন্ন রোড-ঘাট তলিয়ে গেছে। পৌর শহরের আমতলী মফিজ উদ্দিন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মফিজ উদ্দিন বালক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আমতলী সরকারী কলেজ, বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজ, আমতলী বন্দর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খোন্তাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও উপজেলার সর্বত্র আউশ ধানের বীজতলা, পানের বরজ ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।
হলদিয়া ইউনিয়নের তক্তাবুনিয়া গ্রামের শিবলী শরীফ বলেন, পানিতে মাঠ-ঘাট থৈ থৈ করছে। আউশ ধানের বীজতলা তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হলে বীজতলা পচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পুকুর তলিয়ে গেছে। পুকুরপাড়ে জাল দিয়ে আটকিয়ে রেখেছি। যাতে মাছ নেমে যেতে না পারে।
পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, জলকপাট দিয়ে তেমন পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
তালতলী উপজেলার পশ্চিম গাবতলী গ্রামের মো. ইসহাক হাওলাদার বলেন, পানিতে মাঠ-ঘাট থইথই করছে। আউশ ধানের বীজতলা পানির নিচে রয়েছে।
আমতলী মফিজ উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আলম কবির বলেন, বিদ্যালয় মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের কোয়ার্টার তলিয়ে ঘরের মধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। ঘরের মধ্যে পানি থইথই করছে।
তিনি আরও বলেন, পৌর শহরে চরম জলাবদ্ধতায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।
আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোছা. ফেরদৌসি আক্তার বলেন, পানি কলেজ ভবনের বারান্দা গড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করেছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে ক্লাশে পাঠদান বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের দাবি জানান তিনি।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাসেল মিয়া বলেন, আউশ ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেলেও দ্রুত পানি নেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না। তবে সবজিখেতে কিছু ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পৌর প্রশাসক মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, আমি পৌর শহরের পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকা এলাকা ঘুরে দেখেছি। তাতে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দ্রুত যাতে পানি নিষ্কাশন হয়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।