জমে ওঠেনি বরিশালে কোরবানির পশুর হাট, বেড়েছে দাম


বরিশাল অফিস : পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় কোরবানির পশু কেনাবেচায় বসেছে ৩২৮টি পশুর হাট। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় রয়েছে ৯৩টি হাট—৭৯টি অস্থায়ী ও ১৪টি স্থায়ী। তবে হাটগুলো এখনো জমে ওঠেনি। পশুর সরবরাহ থাকলেও ক্রেতার উপস্থিতি কম। বিশেষ করে বড় গরুর বেচাকেনা একপ্রকার বন্ধই বলা চলে।
বরিশাল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বছর বরিশাল বিভাগে কোরবানির জন্য চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৩২ হাজার ৬১১টি পশুর। যা স্থানীয়ভাবে পূরণ সম্ভব এবং কিছু উদ্বৃত্তও থাকবে। তবে বরিশাল বিভাগের বেশ কয়েকটি পশুর হাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার গবাদিপশুর আমদানি ভালো হলেও বেচাবিক্রি অনেক কম।
জেলার সবচেয়ে বড় গরুর হাট বসে সদর উপজেলার চরমোনাই বাজারে। এখানকার গরু ব্যবসায়ী বশির হাওলাদার আজ বুধবার বলেন, যোগাযোগের সুবিধার কারণে এ হাটে সবচেয়ে বেশি ক্রেতাসমাগম হয়। তাই এ হাটে প্রতিবছর গরু নিয়ে আসেন তিনি। এবার ৪০টি গরু নিয়ে এসেছেন, যেখানে দেড় লাখ থেকে তিন লাখ টাকার গরু রয়েছে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার হাট শুরু হওয়ার পর এখনো কোনো পশু বিক্রি হয়নি। তবে বৃহস্পতি ও শুক্রবারের মধ্যে সব গরু বিক্রি হয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানির পশুর দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে। তাই বাজেটের মধ্যে গরু কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। আমির হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে যত বেশি গরু উঠবে, দাম তত কমার কথা। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে উল্টো। তাই অপেক্ষা করছি দাম কমার।’
বরিশাল অঞ্চলের সবচেয়ে বড় গরুর বাজার বরগুনার আমতলী উপজেলায়। এই উপজেলায় আটটি পশুর হাট রয়েছে, এর মধ্যে আমতলী সদর ও গাজীপুর হাট সবচেয়ে বড়। এই বাজারে সারা বছরই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারেরা আসেন গরু কেনার জন্য। এসব বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, আটটি পশুর হাট গরুতে সয়লাব, কিন্তু ক্রেতা তুলনামূলক কম। ছোট ও মাঝারি গরুর কিছুটা চাহিদা থাকলেও বড় গরু একরকম অবিক্রীতই থেকে যাচ্ছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় খামারিরা।
আমতলী গরুর বাজারের পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, বেশির ভাগ সম্ভাব্য ক্রেতা এখনো এলাকায় ফেরেননি। ফলে বাজারে ক্রেতা কম। যদিও বাজারে পশুর সরবরাহ অনেক বেশি।
আজ আমতলীর গরুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, কিছু ছোট ও মাঝারি গরু বিক্রি হলেও বড় গরুতে ক্রেতার আগ্রহ নেই। আমতলীর স্থানীয় গরুর খামারি সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার খামারের পায়রা বাহাদুর নামের গরুটি বাজারে এনেছি। দাম চেয়েছি সাড়ে ৩ লাখ টাকা, কিন্তু ক্রেতারা বলছেন ২ লাখ ৭০ হাজার। বড় গরুর প্রতি মানুষের আগ্রহ কম। বরং ছোট-মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি।
এ উপজেলার দক্ষিণ রাওগা গ্রামের বাবুল মীর বলেন, ‘তিনটি গরু এক মাস আগে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় কিনেছিলাম। এখন একটি গরু ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করলাম, বাকি দুটি কেনার ব্যাপারে ত্রেতাদের আগ্রহ নেই। মনে হয় এবার লোকসান গুনতে হবে।এই হাটে গরু কিনতে এসেছেন আমতলী পৌরসভার খোন্তাকাটা এলাকার ক্রেতা আল হাসিব। তিনি বলেন, ‘ছোট একটি গরু কেনার জন্য এসেছি। যাচাই করে স্থানীয় গরু কিনব।কাঁঠালিয়া গ্রামের লিটন পেয়াদা বলেন, একটি বড় গরু ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দাম চেয়েছেন, কিন্তু ক্রেতারা ১ লাখ বলেই চলে যাচ্ছেন। ক্রেতাদের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না, তাই লোকসানের শঙ্কায় আছেন তিনি।বাজারে গরু অনেক, কিন্তু সে তুলনায় ক্রেতা নেই। এ জন্য গরু ব্যবসায়ী ও খামারিদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। পটুয়াখালীর গরু ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে আমতলী বাজার থেকে ২১টি গরু ১১ লাখ টাকায় কিনে কুষ্টিয়ায় বিক্রি করেছেন, কিন্তু লাভ হয়নি। বাজারে গরু যত আছে, ক্রেতা তার এক-চতুর্থাংশও নেই। তিনি বলেন, ‘এইবার কী যে অইবে, কইতে পারি না। যে অবস্থা, হ্যাতে মোনে অয় চালান লইয়্যা বাড়ি যাইতে পারমু না।
এমন শঙ্কার কথা জানান পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার আমখোলা গ্রামের ব্যবসায়ী হারুন মিয়া। তিনি বলেন, ‘এক মাস আগে পাঁচটি গরু ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কিনেছিলাম। এখন বাজারের যে অবস্থা, তাতে ওই গরু বিক্রি করলেও মূলধন উঠবে না। লাভ তো দূরের কথা, খাবারের খরচও উঠছে না। বুধবার একটি গরুও বিক্রি হয়নি।’তবে পাইকারদের ধারণা, কোরবানি ঈদের এখনো তিন দিন বাকি। শহরের ক্রেতারা আগেভাগে কোরবানির গরু কিনে লালন-পালনের ঝামেলার কারণে শেষ সময়ে হাটে এসে গরু কেনেন। তাই বৃহস্পতি ও শুক্রবার বেচাবিক্রি অনেকটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।