অনলাইন ডেস্ক : এক সময় জেলার শাহরাস্তি উপজেলার নিজমেহার গ্রামের পালপাড়া ও রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রসন্নপুর পালপাড়া ছিল মৃৎশিল্পের জীবন্ত নিদর্শন। ঘরের কোণে কোণে মাটির কলস, হাঁড়ি-পাতিল, প্রদীপ, খেলনা—সবখানেই ছিল মাটির ছোঁয়া। কিন্তু আজ সেই শিল্পের আলো নিভু নিভু, হার মানেননি কিছু সংগ্রামী শিল্পী। এখনও তারা কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন এই প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রহরী হয়ে।
নিজমেহার গ্রামের মনি রানী পাল (৪৬) প্রায় তিন দশক ধরে রেখেছেন মৃৎশিল্পের এই প্রাচীন পেশা। একই গ্রামের সুভাষ পাল (৬৬) ও কুমেশ্বর পাল (৬৮) অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তারা শুধু কাজ করছেন না, এককভাবে বহন করছেন একটি সংস্কৃতির উত্তরাধিকার।
এই পাড়ার আরও ২০টি পরিবার—যাদের মধ্যে আছেন দুলাল পাল, নেপালী রানী পাল, মঞ্জু রানী পাল ও সেফালী পাল—নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ধরে রেখেছেন পূর্বপুরুষের পেশা। অথচ একসময় এই পাড়ার প্রায় ৩০০টি পরিবার মাটির সামগ্রী তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।
সুভাষ পাল বলেন, জন্ম থেকেই যেন মাটির গন্ধ লেগে আছে শরীরে। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে কাজ শিখেছি, কাঁধে করে মাটির হাঁড়ি-বাটি নিয়ে বিক্রি করেছি ধান, চাল, বা টাকায়।
বাঁশঝাড় থেকে সংগ্রহ করা হতো কাঁচামাল। কখনও হেঁটে, কখনও ভ্যানে করে ঘুরে বেড়াতেন গ্রামে গ্রামে। পরে রহিমানগর ও ঠাকুরবাজারে দোকান দেন। কিন্তু এখন আর মৃৎপণ্য তৈরি না করে কুমিল্লার বিজয়পুর ও হাজীগঞ্জ বাজার থেকে মাল এনে বিক্রি করছেন। তার একমাত্র ছেলে সঞ্জয় পাল থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
কুমেশ্বর পাল জানান, বরিশাল থেকে সামগ্রী এনে হাটে বিক্রি করি। হাটের দিনে ১২’শ থেকে ১৫’শ টাকা আয় হলেও, অন্য দিনগুলোতে দু-চারশ’ টাকাও রোজগার হয় না।
মনি রানী পাল এখনো নিজ হাতে মাটির সামগ্রী বানান, আগুনে পোড়ান, বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন। কিন্তু এঁটেল মাটির অভাব ও মূল্যবৃদ্ধি বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থাভাবে বাজারের চাহিদা পূরণ করাও কঠিন।
পালপাড়ার উচ্চশিক্ষিত যুবক গণেশ পাল জানান, একসময় ৩০০ পরিবারের মধ্যে ১৫ থেকে ২০টি পরিবার এখনো মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত। তবে খরচ বাড়ায় তারা চাপে পড়েছেন। নতুন প্রজন্ম আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে এই পেশায়।
শাহরাস্তি মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই ঐতিহ্য বাঁচাতে হলে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, বাজারজাতকরণসহ নানা উদ্যোগ নিতে হবে।
শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মঈনুল ইসলাম কাজল বলেন, আজ মানুষ প্লাস্টিক, মেলামাইন, স্টিলের দিকে ঝুঁকছে। ফলে এই শিল্প চরম সংকটে পড়েছে। একে টিকিয়ে রাখতে হলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
তিনি আরো বলেন, এই শিল্প শুধু মাটি নয়-এই শিল্পে গাঁথা আছে বাংলার আত্মা, ইতিহাস, সংস্কৃতি। যতদিন এই পরিবারগুলো টিকে থাকবে, ততদিন শাহরাস্তির মাটিতে মৃৎশিল্পের আলো জ্বলবে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত