প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ৩, ২০২৫, ৬:৩৮ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ১৫, ২০২৫, ৮:০৫ অপরাহ্ণ
আলম রায়হান : একজন সাংবাদিক নন-একটি প্রতিষ্ঠান, একটি প্রেরণা
ইত্তেহাদ নিউজ: বাংলাদেশের সাংবাদিকতা অঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, আপোষহীন কলমযোদ্ধা আলম রায়হান-এর আজ শুভ জন্মদিন। সাংবাদিকতার চৌদ্দআনা নীতি মেনে সত্য ও সাহসিকতার পথে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে যিনি হাঁটছেন, তিনি শুধুই একজন সাংবাদিক নন—একটি প্রতিষ্ঠান, একটি প্রেরণা।
বরিশালের সন্তান আলম রায়হানের সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হয় ১৯৭৮ সালে, সরকারি বরিশাল কলেজে অধ্যয়নকালেই। বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত অধ্যাপক মোজাম্মেল হকের অনুপ্রেরণায় ‘বাকেরগঞ্জ পরিক্রমা’ পত্রিকায় তাঁর সাংবাদিকতা যাত্রা শুরু। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে অধ্যায়নকালে যোগ দেন সাপ্তাহিক জনকথায়। সেখান থেকেই শুরু হয় সংবাদভিত্তিক বস্তুনিষ্ঠ লেখার এক বিশাল যাত্রা।
১৯৮১ সালে সাপ্তাহিক সুগন্ধা-য় চিফ রিপোর্টার পদে যোগ দিয়েই অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর কলাম ‘গেদু চাচার খোলা চিঠি’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। আলম রায়হান-ই সেই “আসল গেদু চাচা”, যিনি ব্যঙ্গ-রসের মোড়কে সমাজ-রাষ্ট্রের গভীর অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন ধারালো অথচ মানবিক ভাষায়। তাঁর লেখা তখন থেকেই পাঠকমহলে ছিল সাপ্তাহিক অপেক্ষার বিষয়। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি সাপ্তাহিক সুগন্ধা, আমাদের সময়, বাংলাভিশন, মাই টিভি, আমাদের অর্থনীতি, যায়যায়দিনসহ নানা জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমে কাজ করেছেন।
সাংবাদিকতা জীবনে একাধিকবার জেল-জুলুম সহ্য করে সত্যের পথে অটল থেকেছেন তিনি। বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি—সব রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তাঁর ছিল সুগভীর সম্পর্ক, কিন্তু তিনি থেকেছেন নিরপেক্ষ ও নীতিনিষ্ঠ। বিভিন্ন সময় সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, শেখ রেহানা, ড. কামাল হোসেন, কমরেড তোহা, এমনকি খোন্দকার মোস্তাকের মতো ঐতিহাসিক চরিত্রদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে আলোড়ন তুলেছেন তিনি।
তাঁর লেখা বই “অতি সাধারণ এক সাংবাদিকের কথা” সাংবাদিকতা জগতের জন্য এক অনন্য দলিল। অনেকেই বইটিকে তাঁর আত্মজীবনী হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন, যেখানে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশ, রাজনীতি, সমাজ, এবং সাংবাদিকতার অন্তরালের বহু অজানা তথ্য। ২০১৮ সালে ঢাকার ব্যস্ত সাংবাদিকতা জীবন শেষে আবার ফিরে আসেন নিজের শহর বরিশালে। প্রতিষ্ঠা করেন দৈনিক দখিনের সময়, যা ইতিমধ্যেই দক্ষিণাঞ্চলে গণমানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে।
সাংবাদিকতা জীবনের চার দশকের বেশি সময় পূর্ণ করা আলম রায়হান আজও তরুণ সাংবাদিকদের জন্য এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। তরুণদের মনিটরিং, দিকনির্দেশনা ও সাহস সঞ্চারে তাঁর ভূমিকা অনেকেরই কাছে শিক্ষণীয়। তাঁর জন্মদিনে বরিশাল ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সহকর্মী, পাঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।