২৬টি ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমের মধ্যে ২২টি ব্র্যান্ডে বিপজ্জনক মাত্রার পারদ


ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া ২৬টি ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমের মধ্যে ২২টি ব্র্যান্ডে বিপজ্জনক মাত্রার পারদ (মার্কারি) পাওয়া গেছে। পারদের মাত্রা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সীমা ১ পার্ট পার মিলিয়ন (পিপিএম) থেকে অনেক গুণ বেশি। যা ব্যবহারকারীদের জন্য গুরতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।
ক্রিমগুলো ব্যবহারকারীদের ৬০ শতাংশ নারী। ইউরোপীয় এনভায়রনমেন্টাল ব্যুরো (ইইবি) ও ফিলিপাইনভিত্তিক সংস্থা ব্যান টক্সিকসের সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় এসডোর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
গবেষকরা জানিয়েছেন, পারদ স্নায়ুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করে। পারদযুক্ত ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম দীর্ঘমেয়াদে চোখ, ফুসফুস, কিডনি, হজম ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে। এসব পণ্যে থাকা পারদ শুধু ব্যবহারকারীর নয়, আশপাশের মানুষের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে শিশু, নবজাতক ও গর্ভস্থ ভ্রুণের জন্য বেশি ক্ষতিকর।
গবেষণায় ২০১৭ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত মোট ৮৫টি ক্রিম পরীক্ষা করা হয়। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে সংগ্রহ করা ২০টা ক্রিম পরীক্ষা করে ১৮টিতে উচ্চমাত্রার পারদ পাওয়া যায়। পরীক্ষায় সর্বোচ্চ পারদ পাওয়া দুটি ব্র্যান্ড হলো-‘ডিউ বিউটি ক্রিম’ (২৪ হাজার ৮০০ পার্ট পার মিলিয়ন) এবং ‘গোল্ডেন পার্ল বিউটি ক্রিম’ (২০ হাজার ৭০০ পার্ট পার মিলিয়ন)। দুটিই বাংলাদেশে ত্বক ফর্সাকারী জনপ্রিয় ক্রিম হিসাবে পরিচিত।
এছাড়া গৌরি বিউটি ক্রিম, এফইআইকিউই হার্বাল অ্যাকট্রাক্ট হোয়াইটিনিং ফ্রিক্যাল রিমুভিং ক্রিম, পার্ল বিউটি ক্রিম, কিম হোয়াইটিনিং জিনসেং অ্যান্ড পার্ল ক্রিম। এসব প্রসাধনীর মধ্যে পারদের পরিমাণ আন্তর্জাতিক নিরাপদ মাত্রার তুলনায় হাজার গুণ বেশি।
২০২৪ সালের পরীক্ষায় জিয়াওলি হোয়াইটিনিং নাইট ক্রিম, কোলাজেন প্লাস ভিটামিন এ নাইট ক্রিম, জিয়াওলি ডে ক্রিম এবং আরও কয়েকটি পণ্যে উচ্চমাত্রার পারদ পাওয়া যায়।
ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাশেম বলেন, এখনো বাজারে এসব পণ্য সহজলভ্য, এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
বিএসটিআইর উপপরিচালক এসএম আবু সাঈদ বলেন, ত্বক ফর্সাকারী ক্ষতিকর ক্রিম বিক্রি বন্ধে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি, বাজার ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নিয়মিত মনিটর করছি। এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, মার্কারি অনেক সময় কোনো তাৎক্ষণিক উপসর্গ ছাড়াই ধীরে ধীরে শরীরের ক্ষতি করে।
ব্যান টক্সিসের অ্যাডভোকেসি ও ক্যাম্পেইন অফিসার থনি ডিজন বলেন, এগুলো বন্ধে জোরালো সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং মিনামাটা কনভেনশন অন মার্কারির মতো আন্তর্জাতিক চুক্তি কঠোরভাবে পালন জরুরি।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রং ফর্সাকারী ক্রিমের মধ্যে ১৮ ধরনের ক্রিম ও একটি লোশনে বিপজ্জনক মাত্রায় মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পারদ (মার্কারি) এবং দুই ব্র্যান্ডের ক্রিমে পারদ (মার্কারি) ও হাইড্রোকুইনোন উভয়ই পাওয়া গেছে। এসব ক্রিম দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে চর্মরোগসহ বিভিন্ন জটিলতা হতে পারে। এজন্য এসব ক্রিম বিক্রি ও বিতরণ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিষিদ্ধ ক্রিমগুলো হলো:
পাকিস্তানের গৌরী কসমেটিকসের (প্রা.) গৌরী ক্রিম, এসজে এন্টারপ্রাইজের চাঁদনী ক্রিম, কিউসি ইন্টারন্যাশনালের নিউ ফেস, ক্রিয়েটিভ কসমেটিকসের ডিউ, নুর গোল্ড কসমেটিকসের নুর হারবাল বিউটি ক্রিম, নুর গোল্ড কসমেটিকসের নুর গোল্ড বিউটি ক্রিম, গোল্ডেন পার্ল কোম্পানির গোল্ডেন পার্ল ক্রিম, হোয়াইট পার্ল কসমেটিকস ইন্টারন্যাশনালের হোয়াইট পার্ল ক্রিম, পুনিয়া ব্রাদার্স (প্রা.) লিমিটেডের ফাইজা ক্রিম, লোয়া ইন্টারন্যাশনালের পাক্স ও নাভিয়া ক্রিম, লাইফ কসমেটিকসের ফ্রেশ অ্যান্ড হোয়াইট ক্রিম, ফেস লিফট কসমেটিকসের ফেস লিফট ক্রিম, শাহিন কসমেটিকসের ফেস ফ্রেশ ক্রিম ও আনিজা কসমেটিকসের আনিজা গোল্ড।
এ ছাড়া, চীনের শুয়াংজ বায়ো টেকনোলজির ডা. রাসেল নাইট ক্রিম ও ভারতের অ্যারোমা কেয়ার কসমেটিকসের ডা. ডেভি স্কিন লোশন বিক্রি ও বিতরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নামবিহীন প্রতিষ্ঠানের ফোর কে প্লাস এবং জাওলি নামের দুটো ক্রিম রয়েছে নিষিদ্ধের তালিকায়।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।