বাংলাদেশ বরিশাল স্বাস্থ্য

বরিশালে স্বৈরাচারের দোসর ও স্বাচিপের কোষাধ্যক্ষ ডাঃ ফেরদৌস রায়হান এখনো বহাল তবিয়তে

dr ferdaus
print news

মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল : জুলাই আগস্ট আন্দোলনের পেক্ষাপটে বদলে গেছে অনেক কিছু। বিদায় নিয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকার। দেশ ছেড়েই পালিয়ে গেছেন ওই সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা। পালিয়ে গেছেন তার অনেক সহযোগী। যারা পালাতে পারেননি তারা রয়েছেন আত্মগোপনে।
বর্তমান সরকারের সময় রাষ্ট্র ও প্রশাসনের সর্বত্র নতুন করে ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে । কিন্তু সরকারের সাড়ে দশ মাসেও পরিবর্তন বা সংস্কারের ছোয়া লাগেনি বরিশালের স্বাস্থ্য বিভাগে। ফ্যাসিবাদি সরকারের প্রায় পুরোটা সময় আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ,সাদিক আব্দুল্লাহ,আমির হোসেন আমু ও পঙ্কজ দেবনাথের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল বরিশালে চিকিৎসা বানিজ্য সিন্ডিকেট।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর নেতারাই মূলত এ সিন্ডিকেটের হয়ে কাজ করতো। কথিত ওইসব নেতারা নিজেরা প্রাইস পোস্টিং নিয়ে যাকে খুশি বদলি, নিয়োগ, পদোন্নতিসহ খেয়াল-খুশিমতো ক্লিনিক,ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রাইভেট ভাবে রোগী ও অপারেশনসহ চিকিৎসা বানিজ্য করতো।

dr pic 555
স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের নেতারা কাউকে তোয়াক্কা করতেন না। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পেত না। কেউ মুখ খুললেই তাকে জামায়াত-শিবির,সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীসহ নানা ট্যাগ দিয়ে বদলি করানোসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হতো। সরকার বদল হলেও এখনো পুরোনা সিন্ডিকেটের শক্ত অবস্থানে নিয়ন্ত্রণ করছেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই স্বাস্থ্য সেবা খাত।সরকার পরিবর্তন হলেও সিন্ডিকেট পরিবর্তন হয়নি।বরিশালে সিভিল সার্জন ও শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ছাড়া সকলেই বহাল তবিয়তে। এখনো ফ্যাসিস্টদের দোসরদের শাস্তি ,বিচার ও বদলী প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারন চিকিৎসক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তারা বলেছেন এখনো দোসররা বহাল থাকায় এটা বর্তমান সরকারের অযোগ্যতা ,অদূরদর্শিতা, অক্ষমতাও বলা যায়।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন তারা এখনও কিভাবে বহাল তবিয়তে থাকে এ প্রশ্ন সচেতন মহলের। বিগত ১৬ বছরে যারা পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের এখন পদোন্নতি দেয়া হয়নি।কারো কারো দেয়া হলেও অদ্যাবধি পদায়ন হয়নি অধিকাংশের।
এদিকে বরিশালের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে নীরব অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে স্বাস্থ্য সেবায় স্বাভাবিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন ১৬ বছরের সুবিধাভোগী, পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার অন্ধ সমর্থক ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠরা। তারাই প্রশাসনের যাবতীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কৌশলে বাধা সৃষ্টি করছেন। বিগত সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক আছেন এখনো বহাল তবিয়তে।
ফ্যাসিস্ট সরকারের সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্তদের অন্যতম বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের সহকারি অধ্যাপক ও হাসপাতালের অর্থপেডিক্স বিভাগের ডাঃ মোঃ ফেরদৌস রায়হান (কোড নং ১০০৫১৩৪)।তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী ডাক্তারদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর ঝালকাঠি শাখার পুর্নাঙ্গ কমিটির কোষাধ্যক্ষ । আমির হোসেন আমুর দাপট দেখিয়ে তিনি একই কর্মস্থলে যুগ পার করছেন।তিনি ২০১৫ সালের ১৮ মার্চ আমুর সুপারিশে রেজিষ্টার থেকে জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদে পদোন্নোতি পেয়েছেন।এর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার।তাকে অন্য কোথাও বদলী হতে হয়নি।আমুর ছোয়ায় একের এক পদোন্নতি লাভ করেন।তার
কর্মস্থল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল রেখে প্রাইভেট প্র্যাক্টিসে ব্যস্ত থাকেন সব সময়।চেম্বার করেন বরিশালের পপুলার ডায়াগনস্টিক হাসপাতালে আর রোগীদের অপারেশন করেন ডায়াবেটিকস হাসপাতালে।শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাইন বোর্ড ব্যবহার করে প্রাইভেট চিকিৎসা বানিজ্য করে দু হাতে কামাই করছেন টাকা।লাখ লাখ টাকা মাসে আয় করলেও আয় অনুযায়ী ভ্যাট ও ট্যাক্সের খাতা প্রায় শূন্য। ইতিমধ্যে বরিশাল নগরীর কালুশাহ সড়কের মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় সাড়ে ৬ তলা ভবনের নির্মান কাজ শেষ করেছেন।এখন ভবনে চলছে রংয়ের কাজ।জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ গড়েছেন বরিশাল থেকে ঢাকা।ঢাকায় ফ্লাটও ক্রয় করেছেন নামে বেনামে।সরকারি পদ পদবীকে বানিয়েছেন আলাদিনের চেরাগ।অবৈধ সম্পদ,টাকা আর বাড়ি গাড়িতে ফুলে ফেপে উঠেছেন তিনি।কাউকে তিনি থোরাই কেয়ার করেন না।
রোগী ধরা দালাল পোষেন তিনি।দালাল ও প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করে আজ শত শত কোটি টাকার মালিক। এক যুগ ধরে একই কর্ম স্থলে থাকার সুবাদে দালাল নির্ভর ডায়াগনস্টিক সেন্টার ,ক্লিনিক ও দালালদের মাধ্যমে রোগী সংগ্রহ করে অপারেশন করেন।
দীর্ঘ সময় একই কর্মস্হলে চাকরীর নেপথ্যে রয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহারও বিধিবহির্ভূত কর্মকান্ড। কয়েকবার বদলীর আদেশ আসলেও প্রতিবারই বিচক্ষণতায় তা ঠেকানোর দুঃসাহস দেখিয়েছেন তিনি।এভাবেই অবৈধ টাকা অর্জনে অনেক দুর এগিয়ে গেছেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের অন্যতম ডোনার ও দূর্নীতির এই স্বপ্নবাজ।
ডাঃ ফেরদৌস রায়হানের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমান অর্থ,ব্যাংকে এফডিআর এবং নামে বেনামে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এ যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন। একের পর এক বেরিয়ে আসছে ডাঃ ফেরদৌস রায়হানের অবৈধ সম্পদের খবর। একজন সরকারি ডাক্তার হয়ে তিনি কীভাবে এত সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ডাঃ ফেরদৌস রায়হানের অবৈধ সম্পদ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান করলেই শত শত কোটির চেয়েও বেশী সহায় সম্পদের তথ্য প্রকাশ পাবে যা জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ।তার বিরুদ্ধে রয়েছে নারী কেলেংকারীরও অভিযোগ।

দ্রুততম সময়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘনিষ্ঠজন ও স্বাচিপ নেতাদের বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে বদলী ও অপসারনের দাবী জানিয়েছেন সাধারন ডাক্তার,কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

 

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.