ইত্তেহাদ স্পেশাল

দুঃস্বপ্নে দিন কাটছে শহীদ কবিরের দুই কিশোর সন্তানের

image 209681 1750598276
print news

বাসস : পাঁচ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর খবরে হাজারো উল্লাসমুখর মানুষের সঙ্গে বিজয় মিছিলে যোগ দিয়ে শহীদ হন টঙ্গীর আরিচপুর এলাকার বাসিন্দা মো. কবির (৪৯)।

কবিরের দদুই ছেলে আসাদুল্লাহিল গালিব (১৪) ও নাহিআন বিন গালিস (১২) পিতার সঙ্গে বিজয় মিছিলে যাওয়ার জন্য বায়না ধরেছিলো। রাস্তার পরিস্থিতি দেখে পরে এসে ছেলেদের নিয়ে যাবেন বলে তাদের ঘরে রেখে যান। টঙ্গী থেকে বিজয় মিছিলের সাথে তিনি উত্তরার আজমপুর পর্যন্ত যাওয়ার পর পাশের একটি মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েন। মসজিদ থেকে বের হওয়ার পরেই গুলির শব্দ শোনেন। বিজয় মিছিল থেকে মানুষ আতঙ্কে ছুটাছুটি করছিলেন।

কবির হোসেন ছেলেদের ঘর থেকে বের না হতে বাসায় ফোন দেন। ততক্ষণে দুই ছেলেও বিজয় মিছিলে যোগ দিতে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। বড় ছেলের বাটন ফোনে কল দিয়ে রাস্তায় খারাপ পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তাদেরকে দ্রুত বাসায় ফিরে যেতে বলেন। নিজেও বাসায় চলে আসবেন বলে জানান।

এরই মধ্যে পুলিশের একটি গুলি কবিরের নাকের নিচ দিয়ে ঢুকে দাঁত ও মুখ ছেদ করে মাথার পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। তিনি লুটিয়ে রাস্তায় পড়েন। আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর আগেই কবির মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। কথাগুলো কান্নাজড়িত কন্ঠে বাসসকে জানান শহীদ কবিরের স্ত্রী মোসাম্মৎ সালমা খাতুন।

সালমা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী মো. কবির ট্রাভেল এজন্টের ব্যবসা করতেন। তিনি ছিলেন খুব সৎ, পরিশ্রমী আর শান্ত স্বভাবের একজন মানুষ। উনি আমাদের সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। ৫ আগস্ট উনি বাসা থেকে বের হয়ে বিজয় মিছিলে অংশ নেন। তার আর ফিরে আসা হয়নি। উত্তরায় পুলিশের গুলিতে তিনি শহীদ হন।’

‘সবার কাছে শুনেছি, পুলিশের স্নাইপারের গুলিতে তিনি শহীদ হয়েছেন। আমি ফোনে খবর পেয়ে সেদিন হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলাম। হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার স্বামীর নিথর দেহ পড়ে আছে। উনার সঙ্গে আর একবারের জন্যও কথা বলতে পারিনি।’ কথাগুলো বলার সময় সালমা খাতুনের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসছিল। কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তিনি।

ওইদিনই কবিরের লাশ হাসপাতাল থেকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কিশোরীনগর গ্রামের শহীদ কবিরের নিজ বাড়িতে নিয়ে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়।

শহীদ মো. কবিরের দুই ছেলে চৌদ্দ বছর বয়সী আসাদুল্লাহিল গালিব ও বারো বছর বয়সী নাহিআনান বিন গালিস টঙ্গীর মিরাশপাড়া দাখিল মাদ্রাসার ছাত্র। একজন অষ্টম শ্রেণিতে এবং অন্যজন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। পিতাকে হারিয়ে গালিব ও গালিস দুই কিশোরের এখন দুঃস্বপ্নে দিন কাটছে।

শহীদ কবিরের বড় ছেলে গালিব বলেন, ‘আব্বু বলতেন জীবনে অনেক বড় হতে হবে। ভলো মানুষ হতে হবে। আব্বু সবসময় অনেক সাহস দিতেন। তখন মনে অনেক সাহস ছিল। জীবনে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল। আব্বুর মৃত্যুর পর সবকিছু এলোমেলো মনে হয়। পড়াশোনা, খেলাধুলা কোন কিছুতে আর আগের মতো মন বসে না।’

ছোট ছেলে গালিস মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বাবাকে কথা দিয়েছিল পড়াশোনা করে অনেক বড় আলেম হবে। কিন্তু হঠাৎ করে বাবাকে হারিয়ে তারও এখন সবসময় মন খারাপ থাকে। গালিস বলেন, ‘আব্বু না থাকায় ঘরে একদম ভালো লাগে না। আব্বুকে যারা মেরেছে আমরা তাদের বিচার চাই।’

শহীদ কবিরের স্ত্রী সালমা খাতুন বলেন, ‘ওদের বাবার মৃত্যুর পর ছেলেমেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে বুকটা ফেটে যায়। আমরা এখন বলতে গেলে দিশেহারা। ওরা বাবা হারিয়েছে, আমি স্বামী হারিয়েছি। যে লোকটা আমাদের জন্য দিনরাত কষ্ট করতো, আজ সে-ই নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে বিচার চাই। আমার স্বামীর হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি চাই। উনি কোনো অপরাধ করেননি। উনি শুধু গণতন্ত্র আর মানুষের অধিকারের পক্ষে বিজয় মিছিলে গিয়েছিলেন। আমি চাই, যেন আর কোনো মায়ের কোল খালি না হয়, আর কোনো স্ত্রীকে এভাবে বিধবা হতে না হয়।’

সালমা খাতুন আরো বলেন, মৃত মোজাহার আলী ও আমেনা খাতুনের (৬৫) বড় ছেলে কবির পরিবারে সকলের ভরসার প্রতীক ছিলেন। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে কবির ছিলেন সবার বড়। ব্যবসা ও ছেলেদের পড়াশোনার সুবিধার জন্য তিনি টঙ্গীর আরিচপুরে থাকতেন।

বৃদ্ধা মা ও অন্য ভাই বোনরা গ্রামে থাকলেও সবসময় পরিবারের সকলের ভালো মন্দ খোঁজ-খবর রাখতেন তিনি। মা আমেনা খাতুন সুযোগ পেলেই ছেলে ও নাতিদের দেখতে কবিরের বাসায় আসতেন।

সরকার, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দেওয়া অনুদান বাবদ এপর্যন্ত মোট সতেরো লাখ টাকা পেয়েছেন বলে শহীদ কবিরের স্ত্রী সালমামা খাতুন বাসসকে জানিয়েছেন।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.