শাওন ছিলেন হলি আর্টিজনের নিরীহ কর্মচারী


ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : ‘আমি সবাইরে বলছি আমার ছেলে জঙ্গি না। আমি যেখানে থাকি, সেখানে আইয়েন, সবাইরে জিজ্ঞাস করেন, এ ছেলেডা কী রকম? আমি দিন আনি দিন খাই। আমার ছেলেডা রেস্টুরেন্টে গিয়া দুইডা বছর চাকরি করছে। রোজার সময় এমন গন্ডগোল হৈলো, আমার ছেলেরে সন্দেহ কোইরা পুলিশেরা যে মাইর মারছে, ছিডা গুলি করছে। ওর মাথায় বাইরাইছে। আমি সবার দরজায়-দরজায় গেছি, আমার কথা কেউ শুনে নাই গরিব বোইলা।’
কথাগুলো বলছিলেন হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহত জাকির হোসেন শাওনের মা মাকসুদা বেগম। সোমবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী কবরস্থানে ছেলের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন তিনি। মাকসুদা আরও বলেন, ‘এই কবরস্থানে আমি মাডি দিছি আমার সন্তানেরে আইন্না। পুলিশ ওরে থানায় নিয়া নির্যাতন করছে। ঢাকার থেকে আনতে পথে পথে লাশের গাড়ির তল দিয়া রক্ত পড়ছে। আমার কষ্টে বুকটা ফাইট্টা যায়। এই আঘাত কোনো মা সহ্য করতে পারবো না। আমি সরকারের কাছে বিচার চাই। কোনোদিন যদি বিচার পাই, আমি মোইরা গেলেও শান্তি পামু।’ মাকসুদা বেগম দীর্ঘদিন ধরে সিদ্ধিরগঞ্জের দক্ষিণ কদমতলী এলাকার হৃদয়মনি ক্রিয়েটিভ স্কুল এলাকায় পিঠা বিক্রি করেন। ছয় সদস্যের পরিবারে শাওনই সংসারে বেশি অর্থনৈতিক সহযোগিতা করতেন। তার মৃত্যুর পর থেকে তাদের চলতে হচ্ছে অনেক অর্থকষ্টে। হলি আর্টিজানে নিহত দেশি-বিদেশি ২০ জনের পরিবারকে সরকার ২০১৭ সালে ২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়। প্রত্যেক পরিবার পায় ১৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা করে। কিন্তু শাওনের পরিবার সেই তালিকায় ছিল না। অথচ রাষ্ট্রীয় তদন্তেই নিশ্চিত হয়েছে, শাওন ছিলেন নিরপরাধ কর্মচারী। তাই বর্তমান সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছে শাওনের পরিবার।
২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জন নিহত হন। পরদিন যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গি। একই সঙ্গে প্রাণ হারান ওই রেস্তোরাঁর শেফ সাইফুল ইসলাম চৌকিদার। গুরুতর আহত অবস্থায় আটক হন সহকারী বাবুর্চি জাকির হোসেন শাওন। পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। হামলার পরপরই সাইফুল ও শাওনকে জঙ্গিদের সহযোগী বলে সন্দেহ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই করা অভিযোগপত্রে দুজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তদন্তে প্রমাণ হয়, তারা কেউই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তারা ছিলেন হলি আর্টিজনের নিরীহ কর্মচারী।