মিডিয়া

বিদায় রিমন —

IMG 20250731 WA0030 700x390 2
print news

বুলবুল আহসান:
‘একটি মৃত্যুর শেষে মুখ দেখি
আরেক মৃত্যুর,
আমরা জানি না কেউ, কার বাঁচা
আর কত দূর…’
উদ্ধৃতিটি ধার করা কিন্তু যেন আমার নিজেরই এ সময়কার কথা। অসময়ে ফোন এলে ভয়ে ভয়ে থাকি, না জানি কোন দু:সংবাদ।
রিমন – সাইদুর রহমান রিমনের চলে যাওয়ার খবর পেলাম মধ‍্য দুপুরে। বুধবার বিকাল ৩টার দিকে গাজীপুরের শহীদ তাজ উদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
রিমন আমার সহকর্মী ছিলেন ‘সংবাদ’ এ। তাঁকে সংবাদ এ নিয়ে এসেছিলেন আরেক তুখোড় রিপোর্টার, আমার প্রিয়ভাজন সাইফুল আমিন। সাইফুলের দৃঢ় বিশ্বাস, এই ছেলে ভালো করবে। সাইফুলের উপর আমার অগাধ আস্থা কিন্তু সংবাদে লোক নেয়া বেশ কঠিন। কম বাজেটে চলতে হয়, আবার বজলু ভাইয়ের [বজলুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক] অনুমতি লাগে। সাইফুলের লাগাতার তাগাদায় সব বাধা পেরিয়ে রিমন আমাদের সহযাত্রী হলেন। দ্রুতই বুঝতে পারি তাঁর কাজ করার আগ্রহ আছে, নিয়মিত বিটের বাইরে সে কিছু করতে চায়। সে সময় একটা বিষয় নিয়ে রিপোর্ট করার প্ল‍্যান আমার মাথায়। শেরপুরের সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গ্রুপে’র তৎপরতা নিয়ে। ঐ এলাকায় আমার বাড়ি হওয়ার কারনে নানা সূত্র থেকে সব খবরই পাচ্ছি। ভারত সরকার বলছে, সেখানে অবস্থান নিয়ে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গ্রুপে’র সদস্যরা ভারতে মেঘালয়, তুরা এবং সংযুক্ত এলাকায় অস্থিরতা তৈরি করছে আর বাংলাদেশ সরকার বলছে বাংলাদেশের ভূখন্ডে ‘ ভারতের কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গ্রুপে’র অবস্থান নেই। বিষয়টি জটিল, স্পর্শকাতর। মিন মিনে রিপোর্ট করা যাবে না। সব তথ‍্য প্রমাণ হাতে নিয়ে করতে হবে।সাইফুল আর আমি মিলে বাজি ধরলাম রিমনকে নিয়ে। স্বল্প কথার বিনয়ী, চোখ তুলে না তাকানো রিমন রাজি। ঝুঁকির কথা বললাম, সে রাজি। পরিকল্পনামতো সে শেরপুর দিয়ে ঢুকবে ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী সীমান্ত হয়ে হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে কাজ শেষ করবে। ওর নিজের সোর্স ছিল, আমি আমার সোর্স এবং ওর নিরাপত্তার জন‍্য ওই এলাকার ব‍্যাক আপ তৈরি করে দিলাম। ও নিজেই ক‍্যামেরা চালাতো, কাজেই ‘সিঙ্গেল মেম্বার’ টিম। রিমন কাজে নামার একদিন পরেই তাঁকে হারিয়ে ফেলি, আমাদের সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন তো আর মোবাইল ছিল না। আমাদের সমস্ত ব‍্যাকআপ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু রিমন অত্যন্ত সাফল্যের সাথে ঝুঁকি নিয়ে নিজের কাজটি করেন। যেদিন মধ‍্যরাতে রিমন ঢাকায় ফিরেন আমরাও স্বস্তি পাই। রিমনের মাঠের গল্প শুনে শিউরে ওঠি। সশস্ত্র গ্রুপের সদস্যরা তাঁকে ঢাকা পর্যন্ত তাড়া করে। শেষে এই সিরিজ রিপোর্টটি ছাপা হয় রিমনের নামেই। প্রতিক্রিয়া হয় ঢাকা, দিল্লী আর সশস্ত্র গ্রুপগুলোর ক‍্যাম্পে। ঝিনাইগাতী থেকে সশস্ত্রদলের কমান্ডার চিঠি দিয়ে আমাকে লিখেন : ‘রিমন সাহেব রিপোর্ট করেছেন সত‍্য কিন্তু আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি এর পেছনে আছেন আপনি। আপনার বাড়ি এই এলাকায়। আপনার আত্নীয় স্বজনদের খোঁজ নিচ্ছি। এলাকায় আসলে আপনার সাথে দেখা হবে…।’
রিমনকে একজন বিশ্বস্ত পেশাজীবী সাংবাদিক বলেই যেমন জানি, তেমনি একজন আদব কায়দা সম্পন্ন ভালো মানুষ হিসেবেও স্নেহ করি। আজকাল বেয়াদবদের [সবাই না] রাজত্বে রিমন ছিল বিরল ব‍্যতিক্রম। এজন্যই তাঁর চলে যাওয়াটা খুব কষ্টের। সে যেখানেই কাজ কারুক না কেন দেখা বা কথা হলে তাঁর বিনীত, নতচোখ চেহারাটিই মন জুড়ে গেঁথে আছে। রিমন ভালো থাকো।
৩০.০৭.২০২৫

* লেখক :
বুলবুল আহসান

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাবেক সভাপতি।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.