চেতনাবাজির চাপে আমজনতা অচেতন


❑ আহমেদ মুন্না :
এদেশে শুধু মানুষ মরে, বুকের তাজা রক্ত দিয়ে, প্রাণ দিয়ে মানুষ বদল করে। এতে কিছু অসৎ মানুষের ভাগ্য বদল হয়। আঙুল ফুলে রাতারাতি কলাগাছ হয়। কিন্তু নৈতিক চরিত্র বদল হয় না। সিস্টেমের বদল হয় না। যে লঙ্কা যায়, সে-ই রাবণে পরিনত হয়। গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলে ক্ষমতায় গিয়ে সবার প্রথম কাজ হয় সেই গণতন্ত্রকে হত্যা করা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলা ফাটিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে সর্বপ্রথম কাজই হয় দুর্নীতির চর্চা, দুর্নীতির লালন-পালন এবং এর পৃষ্ঠপোষকতা করা। সবাই নাকি জনগণের জন্যই রাজনীতি করে! অথচ সবাই ক্ষমতার মসনদে বসে সেই জনগণেরই অধিকার হরণ করে। জনগণের সম্পদ লুট করে। গত ৫৪ বছর এই চিত্রই দেখে আসছে বাংলার হতভাগ্য জনগণ।
প্রত্যেক আমলে নতুন নতুন চেতনার দোকান খুলে চেতনা ব্যবসা শুরু হয়। বিগত ১৬ বছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোকান, বঙ্গবন্ধুর চেতনার দোকান খুলে লুটপাটের মহোৎসব চালিয়েছে আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীরা। বছরব্যাপী মুক্তিযোদ্ধা বনাম রাজাকার ম্যাচ খেলে জাতিকে বিভক্ত করে নিজেদের আখের গুছিয়ে পালিয়েছে। মানুষ অনেক আশাবাদী হয়েছিল এবার হয়তো তারা চেতনামুক্ত হতে পারবে। কিন্তু এখন আবার শুরু নতুন আরেক জুলাই চেতনা ব্যবসা। আগের মুক্তিযুদ্ধ আর মুজিব চেতনার দোকান ভেঙে দিয়ে সেখানে গড়ে উঠেছে জুলাই চেতনার নতুন দোকান। নতুন দোকানে এখন রমরমা ব্যবসা, কাস্টমারে ভরপুর আর বেঁচাকেনাও বেশ তুঙ্গে!
পরবর্তী আকর্ষণ শহীদ জিয়ার চেতনা আপকামিং। আরেক দোকান রেডি করছে সুযোগসন্ধানীরা। জোরেশোরে চলছে সেই চেতনার দোকান নির্মাণের প্রস্তুতি। এসব চেতনার দোকান পাকাপোক্ত হওয়ার আগেই ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে না পারলে ভবিষ্যতে বিএনপির অবস্থা আওয়ামী লীগের চেয়েও শোচনীয় হবে। তাতে ১৬ বছর লাগবে না। ৮ বছরও লাগবে না। জুলাই চেতনার দোকান বন্ধ করতে না পারলে এনসিপি ভবিষ্যতে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। অন্যরা ফিরে আসার সুযোগ পেলেও তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে অভিশপ্ত এক ইতিহাসের অন্ধকার কুঠুরিতে। কারণ, যারা দ্বিতীয় স্বাধীনতার দাবিদার সঙ্গত কারণেই দ্বিতীয় স্বাধীনতা ব্যর্থ হলে এর দায় এবং দায়িত্ব অন্য সবার চেয়ে তাদের কাঁধেই বেশি বর্তাবে।
#পুনশ্চঃ বিশেষ কোনো দলের প্রতি ভালোবাসা কিংবা বিদ্বেষ থেকে এই লেখা লিখিনি। চেতনার দোকানে চেতনাবাজির ভিড়ে এখন অচেতন হয়ে পড়া দেশের কোটি কোটি আমজনতার মুখপাত্র হয়ে তাদের মনের কথাগুলো লেখার চেষ্টা করেছি। একজন গণমাধ্যম ও সুশাসন কর্মী হিসেবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক ও সচেতন করা আমার পেশাগত, নৈতিক, সামাজিক আর ঈমানি দায়িত্ব বলে মনে করি।