বরিশাল অফিস: বরিশালের নীরব পাড়ায় শান্তিময় এক বারান্দা। সেখানেই বসে পর্দাশীল, স্বল্পশিক্ষিত মেহেরুন্নেছা তার জীবনের সঞ্চয় হারানোর কথা বলতে গিয়ে চোখের কোণা ভিজিয়ে ফেলেন। ছেলের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন, মেয়ের ভবিষ্যৎ, বয়সের শেষভাগে নিশ্চিন্ত জীবন। সব মিলিয়ে একটুকরো আশ্রয়ের মতো ছিল প্রায় আটষট্টি লাখ টাকা। সেই টাকা তিনি বিশ্বাস করে বড় কর্মকর্তা মনে করে জমা রাখেন বরিশাল ডাক বিভাগের আর্মগার্ড আলাউদ্দিন শিকদার ও তার সহকর্মী শহিদুলের হাতে। যদিও এই চক্রের কাজই এমন যে,তারা সিভিল পোশাখে চলতেন একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার মতই।
অভিযোগ অনুযায়ী, নিজেদেরকে কর্মকর্তা ও সহকারী পোস্ট মাস্টার পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভুক্তভোগীর সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করতেন তারা। মেহেরুন্নেছা জানান, তিনি ব্যাংকে যেতে জানতেন না, আর পর্দাশীল হওয়ায় সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে লেনদেনও করতেন না। আলাউদ্দিন ও শহিদুলই বারবার আশ্বস্ত করেন, তার নামে একাউন্ট খোলা হয়েছে, টাকা নিরাপদে জমা থাকছে।
“তারা আমার ছেলে-মেয়ের নামেও একাউন্ট খুলে দিয়েছে বলে বলত। আমি বিশ্বাস করেছি। এত টাকা হাতে হাতে দিতে আমারও ভয় হতো। কিন্তু তারা বলত, আমরাই সব করি,” বলেন মেহেরুন্নেছা।
প্রমাণ হিসেবে তার কাছে রয়েছে আলাউদ্দিন শিকদারের হাতের লেখা হিসাবের কাগজ এবং ভয়েস রেকর্ড যেখানে অভিযোগকারী দাবি করেন, আলাউদ্দিন টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন সাক্ষীদের সামনে। ভুক্তভোগীর ছেলে ইব্রাহিম মুন ও মেয়ে শারীকা মোস্তফাও ঘটনাটি সম্পর্কে জানেন এবং মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সংবাদকর্মী, মানবাধিকার কর্মীদের সামনেই আলাউদ্দিনের ফোনের কথা লাউড স্পিকারে সরাসরি শোনান ভুক্তভোগী।
এ নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব চলছে এবং ডাক বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তিনজনের নামে কোনো একাউন্ট খোলা হয়েছে কি না ও করলে তার স্টেটমেন্ট চেয়ে আবেদন দেওয়া হয়েছে ভুক্তভোগীর । লক্ষ্য একটাই: আটষট্টি লাখ টাকা কোথায় গেল, কিভাবে গেল এবং কাদের হাতে গেল তা সরকারি নথিতে পরিষ্কার করা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায়ই দেখা যায় বিভিন্ন সরকারি অফিসে কর্মরত ব্যক্তি পরিচয়ের সুবিধা নিয়ে অসহায় মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। “বিশ্বাসের দেয়ালটাই ভেঙে গেছে,” বললেন এক প্রতিবেশী।
বরিশাল ডাক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত আলাউদ্দিন শিকদার মেহেরুন্নেছাকে ফোন দিয়ে অনুরোধ করেন বিষয়টি চেপে যেতে আগামী রবিবার সব টাকা ফেরতের আশ্বাস দিয়ে।
মেহেরুন্নেছা শুধু টাকা চান না, চান বিচার। “টাকা গেছে, কিন্তু ইজ্জতও গেছে। আমাকে বোকা ভাবা হয়েছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করছি সত্য যেন প্রকাশ পায়,” বলেন তিনি।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আলাউদ্দিন টাকা,বই কিছুই ফেরত দেননি ভুক্তভোগীকে।
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত