সুনামগঞ্জে আসছে কোটি কোটি টাকার অবৈধ ভারতীয় চিনি


আল হাবিব, সুনামগঞ্জ : সরকারকে রাজ্বস ফাঁকি দিয়ে সুনামগঞ্জের দুই উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিন আসছে কোটি কোটি টাকার অবৈধ ভারতীয় চিনি। আর সেই সেই চিনি প্রতিদিন রাত ১২ টার পর সুনামগঞ্জের পৌর শহর দিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এতে প্রতিনিয়ত যেমন সরকার রাজ্বস হারাচ্ছে তেমনি এই সব এলাকায় দিন দিন বাড়ছে চোরাচালানীদের দৌড়াত্ব। খোজ নিয়ে জানা যায়,হাওরের জেলা সুনামগঞ্জ। এই জেলায় বৈঠাখালী এলাকার সুরমা নদীর উপর আব্দজ জহুর সেতু নির্মাণের পর বদলে যায় এই অঞ্চলের অর্থনীতি। সেই সাথে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত এই সেতুর উপর দিয়ে লক্ষাধিক মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছালেও রাত ১২ টার পর থেকে বদলে যায় এই সেতুর ধরন। নিরব ও অন্ধকার এই দুটিকে পুঁজি করে প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে কোটি কোটি টাকার অবৈধ ভারতীয় চিনি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সরজমিনের আব্দুজ জহুর সেতুর উপর যায় বাংলা টিভি সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি আল হাবিব । তখন ঘড়ির কাটায় রাত ১২ টা ১০ মিনিট, চারদিকে কুয়াশায় ডাকা, তারমধ্যে সাড়ি সাড়ি দ্রুত গতিতে চলন্ত ট্রাকের লাইটের আলোয় আলোকিত আব্দুজ জহুর সেতু। ট্রাকের দিকে লক্ষ করতেই দেখা গেলো পলিতিনের মুড়ানো ট্রাক ভর্তি ভারতীয় চিনি নিয়ে সুনামগঞ্জ-সিলেট মহা সড়কের দিকে যাচ্ছে চোরাকারবারিরা। এদিকে,আব্দুজ জহুর সেতু থেকে ঠিক ২ কিলোমিটার দূরে রাধানগর পয়েন্ট। সেই পয়েন্ট যেতেই অন্ধকারের মধ্যে চৌখে পড়ল একটি মাল ভর্তি ট্রাক। সেই ট্রাকের সামনে কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে গিয়ে ক্যামেরা অন করতেই দেখা যায় আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর পুলিশ সদস্যদের। তারা সেখানে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়েই ট্রাক রেখে দৌড়ে পালিয়ে যায়। (পুলিশের ছবি আছে)
ট্রাক চালক শিবুল জানান, গাড়িতে ভারতীয় চিনি আছে। সেগুলো জেলার জাওয়া বাজার এলাকায় যাবে। পুলিশ ট্রাক আটকে টাকা দাবি করেছিল, পরে আপনাদের দেখে চলে গেছে। এদিকে রাধানগর পয়েন্ট থেকে আরোও ৩ কিলোমিটার দূরে চালবন পয়েন্ট। সেখানে গিয়ে চৌখে পড়ল রাস্তার দুই পাশে পুলিশের চেক পোস্ট বক্স বসানো। তবে সেখানে দায়িত্বরত কোন পুলিশ সদস্যকে পাওয়া যায় নি।
চালবণ পয়েন্ট থেকে আরোও ৫ কিলোমিটার দূরে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ বাজারে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে চায়ের ব্যবসা করেন করম আলী। প্রতিদিন দুপুর ২ টা থেকে রাত ৪ টা পর্যন্ত দোকান খুলা রাখেন তিনি। তার চায়ের দোকানে প্রতিনিয়ত থাকে লোক সমাগম। তবে রাত ১২ টার পর থেকে তার বেচাকেনা জমে উঠে। করম আলী জানান, শুধু পলাশ বাজার দিয়ে চোরাকারবারিরা ভারতীয় চিনি রপ্তানি করে না, এই উপজেলার অন্য সড়ক দিয়েও প্রতিদিন ভারতীয় চিনি বের হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। শুধু করম আলী নয় বাজারে থাকা স্থানীয় বাসিন্দারাও জানালেন, প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে কোটি কোটি টাকার চিনি-আলু দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। প্রতিদিন রাত ১২ টার পর ধনপুর, চিকারকান্দি, বাঘবেড়, চেংবিল, শরীফগঞ্জ, মতুরকান্দিসহ বেশ কয়েকটি সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ৮ থেকে ১০ টি ট্রাক ভর্তি চিনির গাড়ি বের করে চোরাকারবারিরা। প্রতিটি গাড়িতে ৩০০ বস্তা করে ভারতীয় চিনি থাকে। পরে রাধা নগর এলাকায় এসে পুলিশকে ম্যানেজ করে সেই সব চিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। সেই সাথে চোরাকারবারিদের একটি চক্র মোটরসাইকেল মহড়ায় এই সব অবৈধ ভারতীয় চিনির ট্রাক সুনামগঞ্জ পৌর শহরের প্রবেশ মুখ হাসনরাজা তোরণ পযন্ত পৌছে দিচ্ছে। এদিকে অবৈধ ভারতীয় চিনি চোরাকারবারি সাইফুলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সীমান্ত এলাকায় ২০ থেকে ২২ জন ব্যবসায়ী চোরাই পথে চিনি নিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করছে। যার ভাগ সবাই পায়। সেই সাথে সুনামগঞ্জ আব্দুজ জহুর সেতুর উপর থেকে ২৯৮ বস্তা ভারতীয় চিনি নিয়ে যাওয়া একটি ট্রাক স্থানীয় সাংবাদিকরা আটক করে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশের একটি টিম ঘটনা স্থলে এসে ট্রাকটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়। সুনামগঞ্জ রিপোর্টাস ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, সুনামগঞ্জের সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত ভারতীয় অবৈধ পণ্য যাচ্ছে এই দিকে পুলিশের নজরদাড়ি বাড়ানো উচিৎ। তবে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ্ বলেন,চোরা চালানের সাথে কোন পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ থেকে চলতি বছর নভেম্বর মাস পযন্ত পুলিশের বিশেষ অভিযানে সুনামগঞ্জে ১৯২.৯ মেট্রিক টন চিনি জব্দ করা হয়,যার বাজার মূল্য ১কোটি ৯২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। সেই সাথে ১৯৭ জন চোরাকারবারিকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news