বরিশালে বিসিক মেলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেক উদ্যোক্তা : মানা হচ্ছেনা নির্দেশিকা


মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল : ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের হাতে তৈরি করা নকশা, জরি ও পুঁতি বসানো কাপড়, পাটজাতসহ নানা রকম পণ্যের প্রসার ঘটাতে দশ দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করে বরিশাল বিসিক কর্তৃপক্ষ। ১০ দিন ব্যাপী বিসিক উদ্যোক্তা মেলা গত শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টায় নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে এই মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। তবে মেলায় অংশ নেয়া একাধিক উদ্যোক্তারা নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত। প্রচার প্রচারনা বিহীন এ মেলায় অংশ নিলেও খুশি নন তারা। তবে এ মেলায় উদ্যোক্তাদের পণ্য থাকার কথা থাকলেও স্টল বরাদ্দ নিয়ে অনেক ব্যবসায়ীরা বেশিরভাগই বাজারের হরেক রকমের পণ্য বিক্রি করছেন।
বিসিক কর্তৃক উদ্যোক্তা মেলা আয়োজনের নির্দেশিকা মানা হয়নি অনেক ক্ষেত্রেই।নির্দেশিকার ৪ নম্বর পৃষ্ঠার ৫.২ নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে ভেন্যুর সন্নিকটে উদ্যোক্তা ও দর্শনাথীদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং মেলা চলাকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মেলায় অংশ নেয়া উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। পানির ব্যবস্থা অপ্রতুল। পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ভোগান্তির শেষ নাই। তারা জানান, মেলা নিয়ে কোন প্রচার প্রচারনা নেই। নির্দেশিকায় অতি ক্ষুদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত উদ্যোক্তাদের জন্য পৃথক ভাবে ২-৩ টি স্টল রাখা হবে সেখানে ৬-১০ জন উদ্যোক্তা বিনা মুল্যে পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয়ের সুযোগ পাবেন। তবে এ মেলায় নেই সুবিধা বঞ্চিত উদ্যোক্তাদের জন্য এমন ব্যবস্থা। মেলায় কোন প্রকার বিদেশি পণ্য প্রদর্শন, বিক্রয় করা যাবেনা। অথচ মেলায় বার্মিজ আচার থেকে শুরু করে বিদেশী পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয় হতে দেখা গেছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের হাতে তৈরি পণ্যের প্রসারের জন্য এ মেলার আয়োজন করা হলেও এতে জেলার কম সংখ্যক উদ্যোক্তা অংশ নিয়েছেন। মেলায় দেখা গেছে এ যেন উদ্যোক্তা মেলা নয় পিঠা উৎসবের মেলা। অনেকে স্টল বরাদ্দ নিয়ে শর্ত ও নির্দেশিকা অমান্য করে দেশি বিদেশী বাজারে রকমারি পণ্য প্রদর্শন করছেন এবং বিক্রয় করছেন মেলায় আগত দর্শনার্থীদের কাছে। এতে মেলায় অংশ নেয়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ক্ষুদ্ধ ।
বিসিকের হয়রানির শিকার হওয়ার পাশাপাশি বিসিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেন অনেক উদ্যোক্তা। মেলায় অংশ নেয়া উদ্যোক্তা রুহুল আমিন জানান, আমি নিরাপত্তা নিয়ে খুবই শংকিত। কোন মাল চুরি হলে এর দায় দ্বায়িত্ব মেলা কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে । মেলা নির্দেশিকার ৯ নম্বর পৃষ্ঠায় অংশ গ্রহনের শর্তাবলীর ১২ নম্বরে উল্লেখ করা হয়, মেলায় শব্দ দূষন, পরিবেশ দূষন হয় এমন কোন কার্য্যক্রম গ্রহন করা যাবেনা অথচ এ উদ্যোক্তা মেলায় বসানো হয়েছে হরেক রকমের রাইড। রাইডের এখানে হই হুল্লোড় আর চেচামেচিতে বিরক্ত অংশ গ্রহনকারী উদ্যোক্তারা।তারা জানান, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পক্ষে পণ্য বিক্রিরে পর লাভ করে স্টল ভাড়া দেয়া কঠিন। আমরা চাই এ ধরনের আয়োজন উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার মাধ্যমে ত্বরান্বিত করা হোক।
নানা সীমাবদ্ধতার কথা স্বিকার করে বরিশাল বিসিক শিল্প নগরীর উপ ব্যবস্থাপক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি মেলা সুন্দর করে আয়োজনের। তিনি নির্দেশিকা ফলো করার কথাও জানান। মেলার সভাপতি ও বরিশালের জেলা প্রশাসক মোঃ শহিদুল ইসলামকে কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। ফলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, এ মেলায় অর্ধশত স্টল বসেছে এবং আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত এ মেলা চলবে। মেলায় পাটের তৈরি হস্তশিল্প, মৃৎশিল্প, মেয়েদের থ্রি-পিস ও প্রসাধনী সামগ্রীসহ নানা পণ্যে পসরা সাজিয়ে বসেছেন উদ্যোক্তারা। মেলায় বরিশালের উদ্যোক্তারা ছাড়াও ঢাকা, কুষ্টিয়া, রাঙ্গামাটি থেকেও অংশগ্রহণ করেন উদ্যোক্তারা। ১০ দিন ব্যাপী এই মেলায় প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এই মেলা।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news