মোহছেন আউলিয়া শুয়ে আছেন চেরাগী পাহাড়ে


মসরুর জুনাইদ: মোহছেন আউলিয়া ,এই আউলিয়া কখন এবং কিভাবে বাংলাদেশে আগমন করেন তার ইতিবৃত্ত জানা যায়নি।ইয়েমেনে জন্ম নেওয়া বাংলার সুফি মতবাদের অন্যতম প্রবর্তক হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়া (র.) সুদূর আরব থেকে সমুদ্রপথে চট্টগ্রামে আসেন প্রায় ৭০০ বছর আগে।তাঁর প্রকৃত নাম শাহ্ মছনদ যাহা সুলতানি ও মোঘল আমলের শিলালিপি এবং চট্টগ্রামে প্রাপ্ত সূফী ও পীরদের তালিকার প্রাচীন আরবি পাণ্ডুলিপিও লাখেরাজ সম্পত্তি তদন্ত বিষয়ক কোর্ট প্রসিডিং এ প্রমাণিত।ভক্তদের কাছে তিনি মোহছেন আউলিয়া (রহ.) বা ‘মোছন’ আউলিয়া নামে অধিক পরিচিত।প্রাচীন লেখকগণ তাকে হযরত শাহ মোছন আউলিয়া বলেন। বর্তমানে অনেকে তাকে মোহছেন বা মুহসিন আউলিয়া বলে থাকেন।তবে, তিনি কীভাবে বাংলাদেশে এসেছেন তা জানা না গেলেও; আরেক সুফি হজরত বদর শাহ (রহ.)-এর সঙ্গে পানিপথেই চট্টগ্রাম আসেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।চট্টগ্রামে প্রাপ্ত আরবি ভাষায় লিখিত পীর ও সুফী সম্পর্কিত বিভিন্ন পান্ডুলিপিতে শাহ বদরে আলমের সাথে শাহ মোহছেন আউলিয়া নাম উল্লেখ রয়েছে।কথিত আছে, তিনি পাথরকে নৌকা বানিয়ে পানিপথে ভারত থেকে চট্টগ্রাম আসেন। বন্দরনগরীতে এসে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত দেয়াং পাহাড়ে আস্তানা গড়েন। পরবর্তীতে সেখানেই তার মাজার প্রতিষ্ঠিত হয়।জনশ্রুতি আছে, চট্টগ্রাম শহরের প্রবর্তক বদর আউলিয়া (রহ.) তার মামা। নগরের চেরাগী পাহাড়ে শুয়ে আছেন সেই ধর্ম প্রচারক।সুফি সাধক মোহছেন আউলিয়া দীর্ঘদিন ধরে এবাদত রেয়াজতে মগ্ন অবস্থায় ৯৮৫ হিজরি ৯৭১ বাংলা ৬ আষাঢ় ১৫৬৫ সনে মৃত্যুবরণ করেন।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার দেয়াং পাহাড় ঘেরা বটতলী ইউনিয়নের রুস্তমহাট এলাকায় হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়ার মাজার।জনশ্রুতি অনুযায়ী, ৮২৫-৮৭০ হিজরির কোনো এক সময়ে ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারের জন্য হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়া (রহ.) বার আউলিয়ার পূণ্যভূমি চট্টগ্রামে আগমন করেন।পরে আনোয়ারা উপজেলার ঝিওরি গ্রামে অবস্থান নেন। তৎকালীন শঙ্খ নদীর উপকূলে হুজুরা শরীফ নামে একটি আধ্যাত্মিক সাধনালয় গড়ে তোলেন।এ হুজুরা শরীফকে কেন্দ্র করে এককালে শঙ্খ নদীর উপকূলে ঝিওরি গ্রাম গড়ে উঠেছিল।
তবে মাজার পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা যায়, হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহ.) কখন এবং কিভাবে বাংলাদেশে আগমন করেন তার ইতিবৃত্ত জানা যায়নি।ড. মুহাম্মদ এনামুল হকের ‘পূর্ব পাকিস্তানে ইসলাম’ নামক গ্রন্থে হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়ার (রহ.) ওফাতকাল ১৩৯৭ খ্রিস্টাব্দ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।ঝিওরি গ্রামে প্রথম তাকে সমাধিস্থ করা হয় এবং সেখানেই মাজার গড়ে ওঠে। কিন্তু পরে শঙ্খ নদীর ভাঙনের কবলে পড়লে সেই সমাধি স্থানান্তর করা হয় আনোয়ারার বটতলীতে।এটা শাহ্ মোহছেন আউলিয়ার (রহ.) দ্বিতীয় মাজার।মোহছেন আউলিয়ার মাজার পাকা ঘর হলেও উপরের অংশটুকু ছনের ছাউনি। ছাউনি বদলানোর সময় কর্মরত লোকদের শরীরে যতবার ঘাম বেরুবে ততবার কাজ বন্ধ রেখে তাদের গোসল করে আবার কাজ শুরু করতে হয়।উল্লেখ্য, বটতলীস্থ শাহ্ মোহছেন আউলিয়ার (রহ.) মাজারে একখানি কালো পাথরের শিলালিপি সযত্নে রক্ষিত আছে। লিপিখানিটি আরবিতে লেখা।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর ২০ জুন ৬ আষাঢ় মোহছেন আউলিয়ার বার্ষিক ওরশ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।প্রতিবছর ওরশ শরীফে লাখ লাখ লোক সমবেত হয়ে থাকেন।জানা যায়, প্রতি বছর বার্ষিক ওরসকে ঘিরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের বরুমহাট দরগাহ প্রাঙ্গণে ভক্তরা কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণের মধ্য দিয়ে ওরসের কর্মসূচি পালন করে।ওরসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ ভক্তগণ দরবারে আসত।ওরসকে ঘিরে রাতব্যাপী বটতলী রুস্তমহাট ও আশপাশ এলাকায় ভক্তরা কবিগান, জারিগান ও ধর্মীয় গানের আসরের আয়োজন ছাড়াও পুরো এলাকায় মেলা বসত।মোহছেন আউলিয়া (রহঃ) সম্পর্কে যত কিংবদন্তি আছে সবই সমুদ্র সম্পর্কিত। এছাড়া, চট্টগ্রামের প্রতিটি মাজারকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু লোকবিশ্বাস রয়েছে।যে মাজার যত বেশি প্রাচীন, সেগুলো সম্পর্কে লোককথাও বেশ বিস্তৃত। লোককথা ইতিহাসের ভিত্তি হতে পারে না।কারণ ইতিহাস ধারণার ওপর নয় বরং সঠিক ঘটনার ওপরে নির্ভর করে। তবে এটা সত্য যে, লোককথার সূত্র ধরে অনেক সময় সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায়।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়