ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে জাবি শিক্ষার্থীর যৌন হয়রানির পোস্ট

5d3ac5ff3ecb6d3441c97ea55b6857bc
print news

ঢাকা প্রতিনিধি :  জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের দ্বারা ছাত্রী হেনস্থার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নিজ বিভাগের শিক্ষকের দ্বারা নিগৃহীত হওয়ার অভিযোগ তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন এক নারী শিক্ষার্থী। শনিবার (২৩ মার্চ) নিজের ফেসবুক আইডি থেকে করা এক পোস্টে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজু সাহার দ্বারা যৌন হেনস্তা ও পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়ার দাবি করেন।গত ১৯ মার্চ নিজ ফেসবুক ওয়ালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মৃত্যুর খবর শেয়ার করে তিনি লেখেন, ‘এটা অহরহ হয়! আমার নিজেরও একজনের নাম বলে দিতে খুব ইচ্ছা করছে…। কী বিভৎস গেছে আমার সময়গুলো, একজন শিক্ষকের জন্য।’এর দুইদিন পর ২১ মার্চ আরেক ফেসবুক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ‘অবন্তিকাকে মরতে হয়েছে তার সঙ্গে হওয়া অন্যায় প্রমাণ করতে…। এখন কি আমাকেও সেটাই করতে হবে? মানুষ এমন বাজে কেন? না মরা পর্যন্ত কি অন্যায় অন্যায়ই থেকে যায়?’এরপর ২৩ মার্চ করা ফেসবুক পোস্টে শিক্ষকের নাম উল্লেখপূর্বক তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘ওনার নাম সাজু সাহা.. অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র।’ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি বিষয়টা নিয়ে নিজেও খোলাসা করে তেমন কিছু বলিনি, তাই এই পোস্টটা দিচ্ছি। আমি আগেই জানতাম ভিক্টিম ব্লেইমিং করা হবে। যে মানুষের ডিপার্টমেন্টে ক্লাসমেটদের সঙ্গে এত সমস্যা থাকার পরেও কখনও অ্যাটেন্ডেন্স ৯ এর নিচে আসে নাই, তার শেষের দিকে কেন অ্যাটেন্ডেন্স ‘শূন্য’ আসলো, এটা কেউ প্রশ্ন করেনি। আমি কাউকে এক্সপোজ করার উদ্দেশ্যে পোস্ট করছি না। আমি অনেকের কাছে হেল্প চেয়েছিলাম। কেউ আমাকে সাহায্য করেনি। আমি চাইলে ধরে ধরে তাদের নাম ও বলে দিতে পারি। উনি শুধু আমাকে (পরীক্ষায়) ফেইল করাননি, এটাই বেশি। পাস করিয়ে দিয়েছেন, যেন আমি কিছু বলতে না পারি।’

শিক্ষকের ব্যাপারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওনার এত কনফিডেন্স যে, আমি কিছু প্রমাণ করতে পারবো না। কারণ উনি প্রমাণ করার মতো কিছু রাখেননি। তবে যা আছে, তা ওনার দোষ প্রমাণ করতে যথেষ্ট। এত হ্যারাজমেন্ট, এর পরও আমার বিশ্বাস ছিল উনি গিল্টি ফিল করবেন। কিন্তু ওনার মধ্যে অনুতপ্ত হওয়ার কোনও চিহ্ন নেই। শুধু ডিপার্টমেন্ট (পড়াশোনা) শেষ করার জন্য আমি ওনার সঙ্গে ভালো আচরণ করে গেছি…।অভিযুক্ত শিক্ষকের আগের আচরণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও বিশ্বাস করতে পারিনি উনি এই ধরনের কাজ করতে পারেন.. এত অমায়িক, এত ভালো একটা আচরণ! আমার খারাপ সময়ে আমাকে এত সাপোর্ট দেওয়া। বুঝতে এত দেরি করে ফেলেছি যে, উনি আসলেই মুখোশধারী। তিনি আমাকে ডিরেক্টলি বলছেন, আমি ভুল মানুষকে চুজ করেছি। আমি ভেবেছিলাম তুমি লিবারেল। তুমি হুক-আপ কালচারে বিশ্বাস কর.. কিন্তু তুমি দেখি কনজারভেটিভ।’ … উনি মেসেজ ডিলিট করেছেন। আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে কল দিতেন, আর এতে আমি কিছুই নাকি প্রমাণ করতে পারবো না। উনি শুধু বলেছেন, ওনার হেল্প লাগবে দেশের বাইরে এমবিএ করা নিয়ে।এরই মধ্যে এই শিক্ষার্থীর দেওয়া পোস্টে বিভিন্ন জন বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করেছেন। সেসব বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে তিনি বলেন, ‘আমি কেন দেখা করেছিলাম ডিপার্টমেন্টের বাইরে? ওনার ভাষ্যমতে, ক্যাম্পাসে কেউ আমাদের একসঙ্গে দেখলে বাজে কথা বলবে। উনি আমাকে কাউন্সেলিং করার নামে আমাকে হ্যারেজ করেছেন। উনি আমার কাছে অনুরোধ করেছেন, যেন আমি কাউকে কিছু না বলি। বললে ওনার পলিটিক্যাল ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে।একদিনের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি পোস্টে আরও বলেন, ‘উনি যে রিকশায় আমার গায়ে জোর করে হাত দিসেন, তার কি প্রমাণ আমি দেবো? রিকশাওয়ালাকে খুঁজে নিয়ে আসবো? এটা কি আদৌ সম্ভব! আমি এরপরও ভয়ে ওনার সঙ্গে খারাপ আচরণ করিনি। ডিপার্টমেন্টের দুজন সিনিয়রের কাছে হেল্প চেয়েছিলাম। এখন মানুষ আমাকে দাবায় দিচ্ছে এটা বলে যে, আমার কাছে কোনও কনক্রিট এভিডেন্স নেই। উনি যে ক্যাফেতে বসে তার প্রোপোজাল অ্যাক্সেপ্ট করার জন্য আমার পা ধরতে চেয়েছেন, এর কি প্রমাণ আমি দেবো?’তিনি আরও বলেন, ‘একজন শিক্ষককে ডিফেইম করে আমার কোনও লাভ নাই.. আমি ডিপার্টমেন্টে এত ভালো কিছু শিক্ষক পেয়েছিলাম, অথচ তাদের জানানোর সাহস পর্যন্ত আমার হয়নি। উনি এতই স্বচ্ছ, তাহলে আমাকে কেন সিগন্যাল ডাউনলোড করে আমার বার্থডের দিন রাতে নাটক কেন করেছেন। উনি ফোনে বা টেক্সটে কিছু না বলে আমার সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছেন!ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও বলেন, ‘আমার সঙ্গে এই ঘটনার পর উনি অনেকদিন আমাকে বলেছেন, ডিপার্টমেন্ট থেকে রিজাইন দিয়ে দেবেন। এই ক্যাম্পাসে থাকবেন না। ওনার নাকি আমাকে ফেইস করার মুখ নেই। অথচ উনি ঠিকই শিক্ষকতা করছেন আর সাফার করে গেছি আমি। ওনার আচরণ এতই অমায়িক। আর উনি এতই সাবধান একজন মানুষ। উনি আমাকে ডিরেক্টলি বলেছেন, আমি ওনার সাথে হুক-আপ করলে উনি আমাকে ক্যারিয়ার, ডিপার্টমেন্ট, বাইরে যাওয়া নিয়ে হেল্প করবেন। একসঙ্গে পড়াশোনা করে বাইরে যাবেন। আমার বিচার লাগবে না। আমি অ্যাশিওরেন্স চাই উনি যেন, এমনটা আর কারও সঙ্গে করার সাহস না পান।’

পোস্টের কমেন্টে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি লিবারেল, এ জন্য কারও অধিকার নেই আমার গায়ে জোর করে হাত দেওয়া। কিন্তু সব কিছুর একটা লিমিট থাকে।একজন শিক্ষকের উক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করে কী লাভ হবে। কেউ তো কিছু করতে পারবে না। শুধু শুধু মানুষ জানবে। উনার (অভিযুক্ত শিক্ষক) বিচার লাগবে, সেটা আমিই করবো। তুমি পোস্ট ডিলিট করে আমাকে ১০টা দিন সময় দাও। ১০ দিন পর ডিপার্টমেন্ট এই ওনার বিচার আমি করবো।এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সাজু সাহা ক্লাসমেট আর সিনিয়রদের দিয়ে চাপ দিচ্ছিলেন যেন পোস্ট ডিলিট করে দেই। আজকালের মধ্যে আমি ক্যাম্পাসে গিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দেবো।এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজু সাহা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি নিজেও অবাক। আসলে হঠাৎ করে করে এ ধরনের অভিযোগ, আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। আমার কাছে এটার কোনও ভিত্তিই নাই। আমি কি করেছি, সেটাও আমি বুঝতেছি না। তার পোস্ট পড়ে আমি যতটুকু বুঝলাম, আমার কাছে বিষয়টা স্ট্রেইঞ্জই লাগছে। এটা ও-ই ভালো বলতে পারবে। আমি দেখেছি বিষয়টা— এটা নিয়ে কী করা যায়… আমি আইনগতভাবেই যাবো। আমি লিগ্যালি হ্যান্ডেল করবো।এ বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. আরিফুল হক বলেন, ‘আমি বিষয়টি দেখেছি। এই বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি। যদি আসে তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *