বাংলাদেশ চট্টগ্রাম

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান

1741963819
print news

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্কমিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) বিকেলে তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে দেখে সাংবাদিকদের সামনে ব্রিফিংকালে এ আহ্বান জানান।পরে তিনি প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে অংশ নেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, পবিত্র রমজান মাসে আমি সংহতির বার্তা নিয়ে কক্সবাজারে এসেছি। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি সংহতি জানাই। আর তাদের উদারভাবে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশি জনগণের প্রতিও আমার সংহতি রইল।‘আমি এখানে এসেছি শুধু তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরার জন্য নয়, বরং তাদের সম্ভাবনার ওপর বৈশ্বিক দৃষ্টি আকর্ষণে করতেও। এখানে বসবাসকারী ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আত্মসম্মানবোধ-সম্পন্ন। তারা সংগ্রামী। বৈশ্বিক সমর্থন তাদের প্রয়োজন। ’

তিনি বলেন, কয়েক দশকের বৈষম্য ও নিপীড়নের পর আট বছর আগে রাখাইন রাজ্যে ভয়াবহ গণহত্যার ফলে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা দেশ (মিয়ানমার) ছাড়তে বাধ্য হন। সম্প্রতি আরও অনেক রোহিঙ্গা এসেছেন, যারা নির্মম নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছেন, যা সামগ্রিকভাবে মুসলিমবিরোধী বিদ্বেষকে উসকে দিয়েছে।‘রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এখানে এসেছেন সেই মৌলিক চাহিদার জন্য, যা বিশ্বের যেকোনো মানুষেরই থাকে—সুরক্ষা, সম্মান এবং নিজেদের ও পরিবারের নিরাপত্তা। আমি আজ অনেকের সঙ্গে দেখা করেছি ও কথা বলেছি—তাদের সাহস আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে, আর তাদের দৃঢ়চেতা মনোভাব আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে,’ বলেন জাতিসংঘ মহাসচিব।‘অনেকেই মিয়ানমারে তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এবং এখানে আসার পথের কষ্টকর অভিজ্ঞতা শুনিয়েছেন। তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে চান—মিয়ানমারই তাদের মাতৃভূমি। নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনই এই সংকটের মূল সমাধান। ’

মিয়ানমারের সব পক্ষের প্রতি সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী, বেসামরিক জনগণের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিন এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও সহিংসতা আরও উসকে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন—যেন গণতন্ত্রের শেকড় গজাতে পারে।‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ, বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যে। যতদিন না রাখাইনে সংঘাত ও পরিকল্পিত নিপীড়ন শেষ হচ্ছে, ততদিন সুরক্ষার জন্য আশ্রয় খোঁজা ব্যক্তিদের পাশে থাকতে হবে আমাদের। ’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, আমরা গভীর মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে। অর্থ সহায়তা কাটছাঁটের কারণে ২০২৫ সালে মানবিক সহায়তার জন্য আগের বছরের তুলনায় মাত্র ৪০ শতাংশ তহবিল পাওয়া যেতে পারে— যা বড় ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে। এর পরিণতি হবে ভয়ংকর—মানুষ কষ্ট পাবে, আর অনেকেই প্রাণ হারাবে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখনই মানবিক সহায়তায় বিনিয়োগ করা জরুরি, কারণ এই লোকেরা এরইমধ্যে সীমাহীন কষ্ট ভোগ করেছে। সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। আমাদের স্বীকার করতে হবে যে বাংলাদেশের জনগণ বিশাল ত্যাগ স্বীকার করে তাদের ভূমি, বনভূমি, সীমিত পানি ও সামান্য সম্পদ শরণার্থীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করছে।

গুতেরেস আরও বলেন, আমি শেষবার কক্সবাজারে এসেছিলাম ২০১৮ সালে। শরণার্থী শিবিরগুলোতে অনেক পরিবর্তন ও উন্নতি দেখেছি। তবে এখনো নানা ধরনের বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এই শিবির ও আশ্রয়দাতা বাংলাদেশি জনগণ সরাসরি জলবায়ু সংকটের মুখোমুখি।

‘গ্রীষ্মকালে তীব্র তাপদাহ, আর আগুন লাগার ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় ও বর্ষার মৌসুমে বন্যা ও ভয়ংকর ভূমিধস বাড়িঘর ধ্বংস করে, জীবন কেড়ে নেয়। এখানকার মানুষ শুধু খাদ্য সহায়তা নয়, বরং শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগও চায়। ’জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, যখন ভবিষ্যতের আশা কমে যায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই সহিংসতা, অপরাধ ও নিরাপত্তা সংকট বাড়ে। কিছু রোহিঙ্গা পরিবার নিজেদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত দেখে জীবন বাজি রেখে বিপদসংকুল সমুদ্রযাত্রায় ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছে।

‘মানবিক সহায়তা যেন তাদের কাছে পৌঁছায়, সেটি নিশ্চিত করা আমাদের বিশেষ দায়িত্ব। তাদের সামনে এ প্রমাণ হাজির করতে হবে যে, বিশ্ব তাদের ভুলে যায়নি। ভালো সময়েও এই মানবিক সহায়তা কখনোই যথেষ্ট ছিল না। আর এখন তো সময় আরও কঠিন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং বহু মানবিক ও উন্নয়নমূলক এনজিও বড় ধরনের তহবিল সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। এটি মানুষের জীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে—তাদের বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত খাবার, চিকিৎসা ও জরুরি সেবা, সুরক্ষা —সবই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। শরণার্থীরা সম্পূর্ণভাবে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, বাজেট সংকোচনের ভয়াবহ প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে কক্সবাজারে থাকা অসহায় মানুষের ওপর। তহবিল সংকোচনের ভয়াবহ মূল্য মানুষকে জীবন দিয়ে দিতে হয়। শেষ পর্যন্ত এর স্থায়ী সমাধান মিয়ানমারেই হতে হবে।‘শরণার্থীদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত আমরা হাল ছাড়ব না। এর আগে আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি সংহতি এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন—তেমনি বাংলাদেশের প্রতিও। ’

‘এই পবিত্র রমজান মাসে আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই— রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও তাদের আশ্রয়দানকারী বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের প্রতি সংহতি শুধু কথায় নয়, কার্যকর পদক্ষেপ ও বাস্তব সহায়তার মাধ্যমে প্রদর্শন করুন,’ বলেন তিনি।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.