কক্সবাজারে সড়কের জমিতে জমি দখলে নিয়ে অবৈধ ‘মিনি টার্ফ’ মাঠ নির্মিত


ইত্তেহাদ নিউজ,কক্সবাজার : কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগ চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সড়কের জায়গা দখলে নিয়ে তৈরি করা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি অভিযান পরিচালনা করেন। সে সময় কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে চকরিয়া উপজেলার জিদ্দাবাজার এলাকায় সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত কোটি টাকা দামের জমি দখলে নিয়ে তৈরি করা অবৈধ ফুটবল স্টেডিয়াম (মিনি টার্ফ মাঠ) উচ্ছেদ করতে স্কেভেটর গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সড়ক বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
অভিযোগ উঠেছে, ওইসময় সড়ক বিভাগের জমি দখলে জড়িত চক্রের লোকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সময় চেয়ে একটি মুচলেকা দেন কয়েকদিনের মধ্যে সড়কের জমিতে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা নিজেরা ভেঙে সরিয়ে নেবেন। কিন্তু জানুয়ারি থেকে এপ্রিল চারমাস সময় অতিবাহিত হলেও এখনো অপসারণ করা হয়নি সেই অবৈধ স্থাপনা। উল্টো জড়িতরা সড়ক বিভাগের জমিতে স্টেডিয়াম তৈরি করে এখন ঘণ্টা ভিত্তিক ভাড়া হিসেবে ফুটবল খেলার আসর বসিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা।
সড়ক বিভাগের জমিতে অবৈধ ফুটবল স্টেডিয়াম তৈরি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, চলতিবছরের ২৭ জানুয়ারি চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত জায়গা দখলে নিয়ে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সওজের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে বেশকিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর ওইদিন বিকালে চকরিয়া উপজেলার জিদ্দাবাজার এলাকায় সড়ক বিভাগের জমিতে তৈরি করা অবৈধ ফুটবল স্টেডিয়াম উচ্ছেদ করতে আমরা উপস্থিত হই।
তিনি আরও বলেন, অভিযানের একপর্যায়ে অবৈধ দখলে জড়িতরা আমাদের কাছে এসে স্টেডিয়ামটি উচ্ছেদ না করতে সময় চান, বলেন, সড়ক বিভাগের অংশের জায়গা থেকে তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে দ্রুত সময়ে স্টেডিয়ামের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেবে। কিন্তু চারমাস সময় অতিবাহিত হলেও এখনো তাঁরা সেই অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করেনি।
কক্সবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, আমরা অচিরেই চকরিয়ার জিদ্দাবাজার এলাকার ওই স্টেডিয়ামসহ সড়ক বিভাগের জমিতে যেসব অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, সবখানে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সরকারি ভূসম্পত্তি উদ্ধার করবো। অবশ্য সেইজন্য ইতোমধ্যে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে পত্র পাঠিয়েছি। ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়া হলেই অভিযান শুরু করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার উত্তর হারবাং আজিজনগর থেকে খুটাখালী ইউনিয়নের ফুলছড়ি পর্যন্ত ৪৪ কিলোমিটার এলাকায় কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঠিক মাঝ পয়েন্ট থেকে ৭৫ ফুট উভয় অংশের জায়গা অধিগ্রহণ মুলে সড়ক ও জনপদ বিভাগের সম্পত্তি।
অভিযোগ উঠেছে, বিগত রাজনৈতিক সরকারের আমলে কতিপয় দখলবাজ বেশিরভাগ প্রভাব বিস্তার করে সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণ করা বেসুমার জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে স্থায়ী অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে। অবশ্য জবরদখলের এসব ঘটনায় ইতোপূর্বে কক্সবাজার সড়ক বিভাগ চকরিয়া উপজেলা অংশের অবৈধ দখলবাজ চক্রের বিরুদ্ধে অন্তত দুইশত উচ্ছেদ মামলাও করেছে। কিন্তু মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে সড়ক বিভাগের ধীরে-চলো নীতির কারণে উচ্ছেদ তো দুরের কথা অদ্যবদি চকরিয়া উপজেলা অংশের অবৈধ স্থাপনা সমূহ এখনো বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তনের পর সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণ করা কোটি টাকার জায়গা জবরদখল পরবর্তী চকরিয়া উপজেলার জিদ্দাবাজার এলাকায় সড়ক বিভাগের জমি বেচাকেনার ঘটনা ঘটেছে। বদরখালীর বাসিন্দা সরওয়ার আলম সিকদার এর কাছ থেকে খতিয়ানভুক্ত জায়গা কিনে সঙ্গে সড়ক বিভাগের মালিকানাধীন অধিগ্রহণকৃত চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর মৌজার বিএস ৩৪ নম্বর খতিয়ানের বিএস ২৭৭৬, ২৭৭৭, ২৭৭৮ ও ২৭৮০ দাগের কোটি টাকার জমি অবৈধভাবে দখলে নিয়েছেন জিদ্দাবাজার এলাকার মৃত আহমদ হোসেন এর ছেলে জসিম উদ্দিন, তাঁর পার্টনার রমিজ উদ্দিন ও তাঁর ভাই মোহাম্মদ শেকাফ এর নেতৃত্বে একটি দখলবাজ চক্র।
কক্সবাজার সড়ক বিভাগের চকরিয়া সড়ক উপবিভাগ সূত্রে জানা গেছে , চকরিয়া উপজেলার জিদ্দাবাজারের অদূরে মহাসড়ক লাগোয়া সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণ করা কোটি টাকা দামের জায়গা দখলে নিয়ে বর্তমানে সেখানে জসিম উদ্দিন রমিজ উদ্দিন চক্র একটি ফুটবল খেলার স্টেডিয়াম তৈরি করছেন। অবশ্য বিষয়টি জানতে পেরে ইতোপূর্বে কক্সবাজার সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা অবৈধ জবরদখলে জড়িতদের একটি নোটিশও দিয়েছেন।
অভিযুক্ত ফুটবল স্টেডিয়াম তথা টার্ফের উদ্যোক্তা রমিজ উদ্দিন বলেন, টার্ফের মাঠটি মূলত আমাদের মালিকানাভুক্ত জায়গা। এটি সড়ক বিভাগের জায়গা থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। ইতোমধ্যে সওজের চকরিয়া অফিসের লোকজন সরেজমিন পরিদর্শন করে নির্মিত মাঠটি সওজের জায়গা নয় মর্মেও নিশ্চিত করে গেছেন।
তবে সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণ করা জায়গা দখলের বিষয়টি স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত পক্ষের জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা খতিয়ানভুক্ত জায়গা কিনেছি। তবে জায়গার সামনের (এপ্রোচ) অংশে সড়ক বিভাগের যতটুকু জায়গা আমরা ভরাট করেছি, পরবর্তী সময়ে সড়ক বিভাগ যখনই চান আমরা ফেরত দেব। এখন ফুটবল খেলার স্টেডিয়াম করার জন্য আপাতত ব্যবহার করছি।
জানতে চাইলে কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, চকরিয়া জিদ্দাবাজার এলাকার ওই ফুটবল স্টেডিয়ামের সামনের অংশের জায়গা সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি। কাজেই আমরা সেখানকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বেহাত হওয়া সরকারি ভূসম্পত্তি উদ্ধারে আমাদের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।