এমটিএফই’র ৮০০ সিইও’কে খুঁজছে র্যাব


ভার্চ্যুয়াল জগতে ক্রিপ্টো কারেন্সি জনপ্রিয় হওয়ায় মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমটিএফই (মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ)। চক্রটি দেশ থেকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। চক্রাকার এবং অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি মানুষকে ফাঁদে ফেলেছে। দুবাইভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে দেশের হাজার হাজার মানুষ সর্বস্ব খুইয়েছেন। অনেকেই বিষয়টি না জেনে এবং আবার কেউ কেউ অতি লোভে পড়ে বিনিয়োগ করে নিজেদের অর্থ খুইয়েছেন। দুবাই, ভারত, নেপাল, কানাডা ও আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এতে বিনিয়োগ করে। তবে প্রতারণার শিকারের সংখ্যায় বাংলাদেশের লোকজন বেশি বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাংলাদেশে এমটিএফই’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রয়েছেন প্রায় ৮০০। ১ হাজার জন আছেন সিইও হওয়ার অপেক্ষায়।
এই সিইওদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে র্যাব। এছাড়াও দুবাইয়ে অবস্থানরত এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা মাসুদ ও হৃদয়কে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ বিষয়ে র্যাব’র আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ‘এমটিএফই’র ফাঁদে পড়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়েছেন। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
সূত্র জানায়, এমটিএফই মূলত প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো ব্যক্তি ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে মাসে ৪৫ হাজার টাকা লাভ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
আবার কেউ ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে মাসে ২২ হাজার টাকা লাভ দেয়া হবে বলে জানানো হয়। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন লোভনীয় মুনাফার বিজ্ঞাপন দিতো এমটিএফই। বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং বা ফাইন্যান্সের মাধ্যমে তারা টাকা প্রদান করে বলে জানাতো। গত ৩ বছরে এমটিএফইতে শুধু বাংলাদেশ থেকেই ৪২ লাখ গ্রাহক সংগ্রহ করেছে।
র্যাব জানায়, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, চট্টগ্রাম, রংপুরের বেশি গ্রাহক এখানে বিনিয়োগ করেন। এতে করে বড় অংকের অর্থ খুইয়েছেন তারা। দুবাইয়ে অবস্থানরত মাসুদ এর আগেও পল্টনে একাধিক এমএলএম কোম্পানি পরিচালনা করতেন। একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে মাসুদ দুবাই চলে যান। আগের অভিজ্ঞতায় দুবাইয়ে গিয়ে এমটিএফই’র মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই কাজে তার সহযোগী ছিল হৃদয়।
র্যাব ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে যে, এমটিএফই-এর নামে কোন কোন প্রতিষ্ঠান লেনদেন করেছে। তাদের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কারণ এমটিএফই একটি ডিজিটাল ব্যবসা। র্যাব নিশ্চিত হয়েছে যে, তারা ডলারের মাধ্যমে লেনদেন করেছে। এই প্রতিষ্ঠানে ট্রেডিংয়ে কারেন্সি হিসাবে ব্যবহার হতো ডলার। এই ডলার কিনতে হতো বাংলাদেশি টাকা দিয়ে। পরবর্তীতে এই ডলার হতো ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা। বাংলাদেশে যা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। এমটিএফই-এর সঙ্গে জড়িতরা এটিকে একটি হালাল ব্যবসা হিসাবে গ্রাহকদের সামনে তুলে ধরেছিল। তারা এটিকে ডলার কেনাবেচার সাইট হিসাবেও পরিচিত করে তুলেছিল।
চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো এমএলএম কোম্পানির যোগসাজশ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে একাধিক এডমিন ছিল। কারা এই পেজগুলো চালাতো তাদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে র্যাব।
র্যাব জানায়, এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত মাসুদ একজন ধূর্ত লোক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে রক্ষার জন্য তিনি দুবাইয়ে গিয়ে বড় প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এই প্রতিষ্ঠানের ফাঁদে পড়েছেন। এছাড়াও ভারতের পশ্চিম বাংলাসহ প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটানেও তারা সাধারণ লোকজনকে লোভের ফাঁদে ফেলেছে।
এমটিএফই’র প্রায় ৮০০ সিইও বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এতে দেশব্যাপী বড় একটি প্রতারণার চক্র গড়ে উঠেছিল। অনেকেই না জেনে এবং অন্যকে বিনিয়োগ করতে দেখে এই প্রতিষ্ঠানের ফাঁদে পড়েছেন। র্যাব’র পাশাপাশি এই চক্রকে ধরতে সিআইডিও কাজ করছে।