ঝালকাঠি জেলা কারাগার দুর্নীতির আতুর ঘর ,জিম্মি বন্ধীরা!


ঝালকাঠি প্রতিবেদক ॥ ঝালকাঠি জেলা কারাগারে লাগামহীন দুর্নীতির মহাচক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে আসামি ও কয়েদিরা। ঝালকাঠি জেলা কারাগার এ যেন এক দূরনীতির আতুর ঘর। কারা অভ্যšত্মরে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বড় একটি ক্ষেত্র হলো কারা ক্যান্টিন। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ মূল্যে বন্দিদের কাছে খাবার বিক্রি করে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়াও বন্ধীদের সরকারি খাবারের নিয়ম তোয়াক্কা না করে কারাকর্তিপক্ষ নিুমানের খাবার দিচ্ছে যা,বন্ধীদের খাওয়ার উপযোগী নয় যে,কারণে কারাকর্তিপক্ষের ইচ্ছে-মত হাঁকানো মূল্যে কারা ক্যান্টিনের খাবার ক্রয়করে খেতে হয় বন্ধীদের। এক কথায় কারাকর্তিপক্ষের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বন্ধীরা। অপরদিকে বন্ধীদের সাথে ১৫দিন পর ফোনে ১০মিনিট করে কথা বলার নিয়ম করে কারা কর্তিপক্ষ। কিন্তু কারা কর্তিপক্ষকে প্রতিস্বাক্ষাতে দুই হাজার টাকা নজরানা দিলেই প্রতিদিন স্বাক্ষাত মেলে এমন অভিযোগ বন্ধীদের স্বজনদের। এসব অভিযোগ ঝালকাঠি জেলা কারাগারের জেলার মো.আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে। ঝালকাঠি জেলা কারাগারে জেলার মো.আক্তার হোসেন যোগদানের পর থেকেই জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে লাগামহীন এ দূরনীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
অভিযোগে আরো জানাজায়, কারা ক্যান্টিনে গরুর মাংশের কেজি বিক্রি হয় ১৬শ টাকায় এরপর রান্নার খরচসহ গুনতে হয় ২২শ থেকে ২৪শত টাকা। এরকম প্রতিটি পণ্য ক্রয় করতে হয় মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ দিয়ে। এ দূরনীতির টাকা জেলার আক্তার হোসেন নিজেই হাতিয়ে নেন।
ঝালকাঠি জেলা কারাগারের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, সারা দেশ থেকে যার একটা অংশ কারা অধিদপ্তরেও যায়। যে কারণে তাদের তদারকি না থাকায় জেলা কারাগারটি দূরনীতির স্বর্গরাজ্যে পরি-নত হয়েছে।
ঝালকাঠি জেলা কারাগার থেকে মুক্তি-পাওয়া কয়েকজন বন্ধীদের সাথে কথা হলে তারা জানান,সাক্ষাৎ বাণিজ্য, কারা হাসপাতালের সিট বাণিজ্য, খাবার বাণিজ্য, চিকিৎসা বাণিজ্য, পিসি বাণিজ্য, কারা অভ্যন্তরে নিষিদ্ধ মালামাল প্রবেশ বাণিজ্য এবং জামিন হলে দ্রুত মুক্তির বাণিজ্যের নামেও বিপুল অঙ্কের ঘুস বাণিজ্য করে আসছে জেলার আক্তার হোসেন। বন্ধীরা কোন প্রতিবাদ করলে তাদের উপর নির্যাতন ও সেলে আটক রাখা হয়। যে কারণে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয় না।
কারাগারের এসব অনিয়ম-দুর্নীতি দীর্ঘদিন চলমান থাকলে কারা অভ্যন্তরে আইন শৃঙ্খলার অবনতি যে কোনো সময় ঘটার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ক্যান্টিন থেকে বিক্রীত মালামালের তালিকা পিসি কার্ডে মূল্যসহ অবশ্যই লিপিবদ্ধ করার জন্য দাবি জানান কয়েকজন বন্ধী।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি জেলা কারাগারের জেলার মো.আক্তার হোসেন শেখ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি যোগদানের পর এরকমরে কোন ঘটনা নেই। এরপর জেলা কারাগারের গুণকীর্তন করে বলেন,জেলা প্রশাসক মহোদয়,এডিসি মহোদয়,মেয়র মহোদয়, পিপি মহোদয়, সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মহোদয় তারাও জেলা কারাগার পরিদর্শন করেন। তাদের কাছে জেনে নেবেন। তারাতো মাসে একবার পরিদর্শনে যান এবং বন্ধীরা ভয়ে কথা বলতে পারেন না। প্রতিদিনের দূরনীতি তারা কি করে জানবেন,এমন প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পরেননি তিনি।
আরও পড়ুন….
ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা!
সমঝোতায় ঝালকাঠি কারাগারের জেলার বহাল তবিয়তে :
ঝালকাঠি জেলা কারাগারের জেলার মো. আক্তার হোসেন শেখের বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব ও অশালীন আচরণের বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শক ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ, অডিও-ভিডিও কলের রেকর্ডিং ফাঁসের সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হওয়ার পরেই জেলার অভিযোগকারীর স্বামীকে জিম্মি ও ভয়ভিতি প্রদর্শন করে কারাগারের মধ্যে সাদা কাগজে স্বাক্ষর ও দশ লাখ টাকার বিনিময়ে সমঝোতা করেছেন বলে বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছে । গত ৩১ আগষ্ট থেকে ধরাবাহিকভাবে অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকাগুলোতে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। সংবাদ প্রকাশের পর দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কারাবন্দি নলছিটির মামুন অর রশিদের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার জেলার আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে কারা মহাপরিদর্শক ও ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ৩০ আগষ্ট।৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে সুমাইয়াকে কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করার পরে কোন বক্তব্য না দিয়ে কল কেটে দেন।
এবাপারে মানবাধিকার কর্মী নীলা জানান, ‘নৈতিকস্থলন জনিত কারণে অবিলম্ভে ঝালকাঠী কারাগারের জেলারের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তি দেয়া হোক। যারা এমন কথা বলে তারা জেলার পদে থাকার নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছে। তার মুখের ভাষাই বলে দেয় তিনি একজন অসামাজিক ও লুচ্চা শ্রেনী মানুষ।’
এ বাপারে ঝালকাঠীর সুশীল সমাজ,রাজনীতিবীদ ও সাংবাদিকরা জানিয়েছেন ,কারাগারের জেলার একজন দুর্নীতিবাজ তিনি টাকা ও সারাদিন নারীদের সাথে কল করে কথা বলে সারাদিন ব্যস্ত থাকে। তারা দ্রুত জেলারকে অপসারণের দাবী জানান।
আরও পড়ুন….
হাজতির স্ত্রীকে কু-প্রস্তাব দিলেন ঝালকাঠি কারাগারের জেলার
আক্তার হোসেন শেখ
অভিযোগ অস্বীকার করে ঝালকাঠি জেলা কারাগারের জেলার মো. আক্তার হোসেন শেখ বলেন, অভিযোগটি সত্য না। এটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক ও বানোয়াট।
তবে সমঝোতার জন্য ঝালকাঠি বার সংলগ্ন একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় জেলারকে দেখা গেছে। সেখানে ঝালকাঠির কয়েকজন সাংবাদিক মধ্যস্থতা করেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সুত্র এর মাধ্যমে জানা যায়। এছাড়া বেশ কিছু সাংবাদিক তাদের নিজ ওয়ালে মোটা অংকের অর্থের বিনিময় জেলারের সাথে ভুক্তবোগী নারীর রফাদফা হয়েছে মর্মে পোষ্ট দিতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন….
যমুনা টেলিভিশনের ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল সাহা তার নিজ ফেইসবুক ওয়ালে লিখেন, ‘জেলার ও নারী অভিযোগকারী যদি মীমাংসা হয়েও যায়, তারপর তদন্তকারী কমিটি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।