ফিচার

নতুন ফসলে ভরপুর আলীকদম বাজার

40d3d589f09fed87e5327fcf449e3b66 64fed33fa766d
print news

জুমের ফসলে জমজমাট হয়ে উঠছে আলীকদম বাজার। হাটের দিনে নানা সবজির পাশাপাশি জুমে উৎপাদিত সবজিতে ভরপুর হয়ে ওঠে বাজারে। সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) আলীকদম সাপ্তাহিক হাটে গিয়ে জুমে উৎপাদিত চিনার ফল, মারফা, মক্কা, টকফল ও নানা জানতের সবজি দেখা যায়। তবে এসব জুমের ফল চড়ামূল্যের কারণে অনেকে দাম জেনে না কিনে ফিরে যাচ্ছেন।

আলীকদমে জুমখেতে এবার ভালো ফলন হয়েছে। তারপরেও চড়া দামের কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতারা বলেন ‘বিয়াকগিনর দাম বাড়ের, এতল্লাই দাম বাইজ্জে’দে’ অর্থাৎ ‘সবকিছু দাম বেশি, তাই জুম ফসলের দাম বেড়েছে।’

আলীকদম উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের সব কয়টির পাহাড়ি উঁচু ভূমি ও পাহাড়ে জুম চাষ হয়। কুরুকপাতা ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি জুম চাষ হয়েছে। একসময় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় জুমে উৎপাদিত পণ্যের দাম পাওয়া না গেলেও বর্তমানে সড়ক পথে যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় আলীকদম সদরে এনে জুম ফসল বিক্রি করছেন জুমিয়ারা।

সোমবার সাপ্তাহিক হাটের দিনে আলীকদম বাজারে গিয়ে দেখা যায়, জমজমাট হাটে আলাদা কদর পাচ্ছে জুমের ফসল। আশপাশের খেতে উৎপাদিত শাক সবজি সরাসরি এই বাজারে আসে। এগুলো যেমন তরতাজা, তেমনি দামেও সস্তা। তবে বিশেষ কিছু পণ্য ‘চিনার ও মক্কা (পাহাড়ী ভুট্টা)’ দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতার কিনতে আগ্রহ কম দেখা গেছে।

বিক্রেতা রাংড়ি ম্রো বলেন, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে জুমের মাটিতে একসঙ্গে বিভিন্ন রকম বীজ বপন করা হয়। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে জুমের ফসল কাটা হয়। পাহাড়ের ঢাল থেকে জুমের পাকা ধান সংগ্রহ করে বছরের খাবার চলে। ধানের পাশাপাশি মারফা, চিনারী, ভুট্টা, তিল, বেগুন, ধনি মরিচ, ঢ্যাঁড়স, কাঁকরোল, কুমড়াসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ও চাষ করা হয়।

অন্য আরেক চাষি তংলে ম্রো বলেন, জুমে বীজ লাগানোর ৩-৪ মাস পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের পর ফসল পাওয়া যায়। জুমে ধানের পাশাপাশি অন্তত ৩৩ জাতের মিশ্র ফসল চাষ হয়। এ বছর বৃষ্টি হওয়ায় জুমের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই জুমিয়াদের চোখে-মুখে হাসি ফুটেছে।

এদিকে উপস্থিত এক ক্রেতা নাজমা আক্তার এসেছেন জুম ফসল কিনতে। চট্টগ্রামে মেয়ের বাড়ি পাঠাবেন জুমের ‘মক্কা ও চিনার’ ফল। মোটামুটি সাইজের প্রতিপিস মক্কা ১৫ টাকা দাম বলে বিক্রেতা। এতে নাজমা বেশ বিব্রতবোধ করেন, দামাদামি করেও দাম কম রাখলেন না বিক্রেতা। উপায় না পেয়ে বাজারে কম দামে পান কিনা দেখতে বাজার ঘুরে দেখেন তিনি। এদিকে জুমের চিনার ফল বিক্রি হচ্ছে কেজিতে। এসব ফল স্বাদে ও সস্তায় পরিচিত থাকলেও তারও দাম বেড়েছে। কেজিতে বিক্রি হতে দেখে বিস্মিত হন স্থানীয় বাসিন্দা মো. রিয়াজ উদ্দীন। তার মতো আরো স্থানীয় মানুষ জুম ফসল কিনতে গিয়ে দাম শুনে দামাদামি করতে শুরু করেন।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি বছর ১ হাজার ৮শ ৭৫ হেক্টর জমিতে জুমে চাষ হয়েছে। নানা জাতের সবজি ও ফল জুমে উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় তা অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি কারণে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে জুমের নতুন ফসল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, স্থানীয় চাহিদার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানের এর চাহিদা থাকায় নানা স্থানে নিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *