বগুড়ায় বাঁশ ও বেত শিল্পীদের দুর্দিন ,বিলুপ্ত হতে চলেছে শিল্পটি


আশাদুজ্জামান আশা,বগুড়া :
বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ বাঁশ ও বেতশিল্প বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। বাঁশ দিয়ে ঘরের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করা হতো। আর এসব জিনিসপত্রের কদরও ছিল ভালো মৎস ও শস্যভান্ডার খ্যাত উত্তর জনপদের জেলা বগুড়া। এ জেলায় রয়েছে বিভিন্ন জাতির বসবাস। এ জেলায় এখনও কিছু পরিবার বাঁশ আর বেতকেই জীবিকার প্রধান বাহক হিসাবে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। এই বাঁশ আর বেতই বর্তমানে তাদের যেন জীবিকার প্রধান বাহক। কিন্তু দিন দিন বাঁশ আর বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। জীবন জীবিকার তাগিদে তবুও বাপ-দাদার এই পেশাকে এখনও ধরে রেখেছে কিছু সংখ্যক পরিবার।
জেলা থেকে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও ঐতিহ্যবাহী বেতশিল্প। বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের কদর আর তেমন নেই বললেই চলে। ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই শিল্পটি।এক সময় গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থালী, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বেত ও বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করলেও এখন বিলুপ্তির পথে এ শিল্পটি।এক সময় বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত সবখানেই ব্যবহার করা হতো বাঁশ ও বেতের তৈরি আসবাবপত্র।এখন সময়ের বিবর্তনে বদলে গেছে চিরচেনা সেই চিত্র। এরপরেও বগুড়া জেলার গুটি কয়েক পরিবারের মানুষ ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
বর্তমানে স্বল্প দামে হাতের নাগালে প্লাস্টিক সামগ্রী পাওয়ায় কুটির শিল্পের চাহিদা আর তেমন নেই। তাছাড়াও দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এ শিল্পের কাঁচামাল বাঁশ ও বেত। এখন আর আগের মতো বাড়ির আশেপাশে বাঁশ ও বেত গাছ রাখছে না কেউ। সেগুলো কেটে বিভিন্ন চাষাবাদসহ দালান তৈরি করছে মানুষ। তাই কাঁচামাল আর আগের মতো সহজেই পাওয়া যায় না।এখন আর যেখানে সেখানে দেখা মেলে না আর বাঁশ ও বেত ঝাঁড়। তাছাড়াও প্লাস্টিক ও অন্যান্য দ্রব্যের পণ্য টেকসই ও স্বল্পমূল্যে পাওয়ায় সাধারণ মানুষের চোখ এখন সেগুলোর উপর।
জানা যায়, এক সময় দেশের বিস্তীর্ণ জনপদে বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি হতো গৃহস্থালী ও সৌখিন পণ্যসামগ্রী। বাড়ির পাশের ঝাঁড় থেকে তরতাজা বাঁশ-বেত কেটে তৈরি করতেন হরেক রকমের পণ্য। এসব নিজেদের ব্যবহারের পাশাপাশি, বাজারে বিক্রি করে চলতো তাদের জীবন-যাপন।বগুড়া জেলার বেশ কটি উপজেলায় এক সময় বাঁশ ও বেত শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলো।তবে এখনো গ্রামীণ উৎসব ও মেলা গুলোতে বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যসামগ্রী দেখা যায়।বগুড়া জেলায় কিছু এলাকায় একসময় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামীণ পল্লিতে বাঁশের চটা দিয়ে ,চাটাই, কুলা, ডালা, টুকরি, টোপা, বুক সেলফ, চালুনি, মাছ রাখার খালই, ঝুঁড়ি ও হাঁস-মুরগির খাঁচা সহ বিভিন্ন গৃহস্থালি জিনিস তৈরি করা হতো। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এ কাজে সামিল হতো। আর হাটবারে স্থানীয় বাজারে এমনকি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে এসব বাঁশ-বেতের পণ্য বিক্রি হতো।
কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ প্লাস্টিক পণ্যের আধিক্য এবং এ শিল্পের মূল উপকরণ বাঁশের মূল্য বৃদ্ধিতে বাঁশ-বেতের কারিগররা তাদের পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে গ্রামীণ কারিগররা। অনেকেই আবার এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়
সচেতনমহল মনে করেন, এ শিল্পটি ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের অন্তর্ভুক্ত হলেও সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো সংস্থাই এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার ভূমিকা নিচ্ছে না। বাঁশ ও বেত শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, পরিকল্পনা ও আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। সেই সঙ্গে পেশায় জড়িতদের তালিকা করে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা উচিত। এ বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক বলেন, শিল্পটি আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিরই অংশ। আমরা চেষ্টা করব এদেরকে সার্বিক সহায়তা দিয়ে এ শিল্পকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে।