ঢেউয়ের উত্থান-পতন, পাড়ের ভাঙা-গড়া নিয়ে নদী নিজেই এক অনন্য জীবন। এই চঞ্চল নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে মানুষের কত বিচিত্র জীবন, জীবিকা ও সংস্কৃতি। আমাদের দেশেই যেমন উত্তর-দক্ষিণ ভেদে নদীকেন্দ্রিক জীবনের কত ফারাক, কত বৈচিত্র্য।
ঘুরে আসলাম দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশন, মনপুরা ও নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ ও হাতিয়া। আজ প্রথম পর্বে থাকছে চরফ্যাশন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।
ঢাকা থেকে লঞ্চে রাতে মনোরম যাত্রাশেষে ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে পৌঁছে যাই আমাদের প্রথম গন্তব্য চরফ্যাশনে। শহরে পৌঁছেই চোখে পড়ল সুউচ্চ, সুরম্য জ্যাকব টাওয়ার। রাত হলেই আলোর ঝলকানিতে এটি হয়ে ওঠে মনোমুগ্ধকর, এটিকে ঘিরে গড়ে ওঠে আড্ডা, কোলাহল। নিজের উচ্চতার সাথে জ্যাকব টাওয়ার যেন চরফ্যাশনকেও পৌঁছে দিয়েছে অনন্য উচ্চতায়।
মেঘনা এখানে মিলে একাকার হয়ে গেছে বঙ্গোপসাগরের সাথে। আর মেঘনার তরঙ্গের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে এখানকার মানুষের জীবনের তরঙ্গ। এখানে নদীই জীবন, জীবনই নদী। নদীকে এখানকার জীবন থেকে আলাদা করে দেখার কোনো উপায়ই নেই। দেখতেও চাই না।
এখানকার মানুষের জীবনের সাথে নদীর ঘনিষ্ঠতা বুঝতে গেলে যেতে হবে ফিস ল্যান্ডিং স্পটগুলোতে। সামরাজ ঘাট, মাদ্রাজ ঘাট, কচ্ছপিয়া ঘাট, বকসি ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাট বেড়ানো হলো, এর সাথে জড়ানো মানুষদের সাথে কথা হলো। এগুলোর মধ্যে সামরাজ ঘাটই সবচেয়ে বড়।
ঘাটগুলোতে পা ফেললে তিনটি জিনিসই চোখে পড়বে বেশি; মানুষ, হরেক রকমের চেনা-অচেনা মাছ এবং ছোট বড় শত শত নৌকা। সামরাজ ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক আলাউদ্দীন ভাইয়ের কাছ থেকে জানা গেল, এই ঘাটে আড়তদার আছে প্রায় শখানেক, মাছ ধরার নৌকা প্রায় দুই হাজার। একেকটি নৌকায় কাজ করে গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন করে জেলে। মাছ ব্যবসা, পরিবহন, এর সাথে সংশ্লিষ্ট অন্য কাজ, যেমন বরফকল ইত্যাদির সাথে কাজ করে হাজার হাজার মানুষ।
এ তো গেল কেবল এক ঘাটের কথা, অন্যগুলোতেও কম বেশি অনেক। এককথায় একটি নদী, হাজার হাজার নৌকা এবং লাখ লাখ মানুষের জীবন এখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।