বরিশাল অফিস : বরিশাল বিআরটিসি বাস ডিপো খেয়ে ফেলছে সিন্ডিকেট। ট্রিপ চুরি, অর্থ আত্মসাৎ, দরপত্র ছাড়াই বহিরাগতদের বাস ইজারা দেওয়াসহ নানা দুর্নীতিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) বরিশাল ডিপোটি ডুবতে বসেছে। দেশের একমাত্র সরকারি পরিবহন বিআরটিসি বাসে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বহিরাগত ও অবৈধভাবে নিযুক্ত কন্ডাক্টরদের দিয়ে। সংস্থার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের হাতে রেখে প্রভাবশালী চালক ও বহিরাগতরা বাস পরিচালনার মূল নিয়ন্ত্রক বনে গেছে। ভাড়া বাবদ আদায় করা অর্থের বেশির ভাগই সরকারি কোষাগারে জমা না রেখে তা পকেটে পুরে নেওয়া হচ্ছে। ডিপোর রেজিস্টারে আয়ের প্রকৃত হিসাব রাখা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে ডিপো ম্যানেজার, বহিরাগত , ইজারাদার ও চালকদের বড় সিন্ডিকেট গিলে খাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সংস্থাটিকে। বিভিন্ন সময়ে তদন্তে অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন দুর্নীতির জন্য অপরাধী শনাক্ত হলেও কারো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। উল্টো দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুললেই বদলিসহ নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।
বরিশাল ডিপো থেকে দুর্নীতিবাজদের বদলী করা হলে আবার তদবীর করে ফিরে আসেন এখানে। কেউ কেউ আছেন বিশ বছর যাবৎ আবার কেউ কেউ আছেন চাকুরীর শুরু থেকেই।দুজনের বাড়ি বরিশাল অথচ তারা গোপালগঞ্জের ঠিকানা দিয়ে চাকুরী নিয়ে বরিশাল কর্মরত রয়েছেন। বরিশালে বিআরটিসি বাস চালকের নামে চললেও দুর্নীতিবাজরা চালকদের বদলিসহ চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়ে প্রতিনিয়ত ওয়েবিল তৈরি করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়। চালকরা বদলি ও চাকরি হারাবার ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
অনিয়মের কারণে যে পরিমাণ অর্থ কোষাগারে জমা হওয়ার কথা তা জমা হয়না। বরিশাল ডিপোতে টায়ার, টিউব, লুব্রিকেন্ট, তেল, গ্যাস, কম্প্রেসর কেনা, রোজভিত্তিক চালক ও কন্ডাক্টর নিয়োগ, বাস মেরামতে অনিয়ম ও দুর্নীতি। এছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ স্বেচ্ছাচারী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ঘটনা নিত্যদিনের। প্রকৃত ট্রিপ রেকর্ড না করে ট্রিপ চুরি, ভালো গাড়ির যন্ত্র পুরনো গাড়িতে লাগিয়ে মেরামত বিল করা, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেশি দেখানো হচ্ছে। বরিশাল ডিপো থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ট্রিপ কম দেখানো হয় অচল দেখিয়ে। বরিশাল ডিপোতে ট্রিপ চুরি, রুট পরিবর্তন করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বরিশাল বাস ডিপোতে অবাণিজ্যিক রুটে বাস পরিচালনা দেখিয়েও রাজস্ব কম জমা দেওয়া হচ্ছে।
দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে আঁতাত না করলে চালকদের বদলি করা হয়। তাঁদের দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হয়। ডিপোর অসংখ্য চালক জানান,ট্রাফিক ইনচার্জ ও পরিযান পরিদর্শক মোঃ মশিউর রহমান ড্রাইভারদের ডিউটি চার্ট করেন।বরিশাল ঢাকা রুটটি লাভ জনক। আর এই রুটে ড্রাইভারদের ডিউটি দেয়া হলে মোঃ মশিউর রহমানকে দিতে হয় তিন শত থেকে চারশত টাকা। ওয়েবিল থেকে এক শত টাকা এবং তেলের শ্লিপ পাশ করানোর জন্য একশত টাকা দিতে হয় তাকে। কোন ড্রাইবার যদি প্রতিবাদ করে তাকে পনিশমেন্ট বাবদ অলাভজনক রুটে দেয়া হয়।এই টাকা ভাগাভাগি হয় ডিপো ম্যানেজার মোঃ জামশেদ আলীর সাথে বলে ডিপো সুত্র জানায়। ড্রাইভাররা টাকা দিয়ে তাঁদের খুশি না রাখলে বিভিন্ন হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।বাস দুর্ঘটনাকবলিত বা নষ্ট হয়েছে দেখালেই একবার চলাচলের টাকা আর জমা পড়ে না। সবার যোগসাজশে ওই টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়। ঢাকা,কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন রুটে যে রাজস্ব আদায় করে কম জমা দেওয়া হচ্ছে বলেও সুত্র জানায়।
বেশির ভাগ বাসচালকের সঙ্গে ‘অলিখিত’ চুক্তি করে বাসগুলো চালানো হচ্ছে। চালক তাঁর পছন্দের লোকজনকে কন্ডাক্টর নিয়োগ করে তাদের দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়ার টাকা তোলেন। চালকের এই টাকা দিনের শেষে ডিপো ব্যবস্থাপকদের কাছে জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। পথে কত ট্রিপ হচ্ছে তার হিসাব রাখার দরকার মনে করছে না কর্তৃপক্ষ। চালকদের সঙ্গে অলিখিত চুক্তিতে বাস চালাতে হচ্ছে।ডিপোর গেটের সাথে বিআরটিসির জায়গায় বাসের কাউন্টার পরিচালনা করেন বেসরকারি লোকজন। বহিরাগত লোকদের নিয়োগ দিয়ে বাস চালানো হচ্ছে ঢাকা রুটে। এতে সহায়তা করছেন বিআরটিসিরই কর্মকর্তারা।
ড্রাইভাররা বলেছেন, ডিপোর দুর্নীতির মূল হোতা হচ্ছে ডিপোর ম্যানেজার। দুর্নীতি দূর হলেই বিআরটিসির উন্নতি হবে। খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গনমাধ্যমকে বলেছিলেন,বিআরটিসির দুর্নীতির মূলে আছেন ডিপোর ব্যবস্থাপকরা।
এ ব্যাপারে বিআরটিসি বরিশালের ট্রাফিক ইনচার্জ মোঃ মশিউর রহমান বলেন বাস্তবতার সাথে মিল নাই। সব ভুয়া তথ্য । তথ্য প্রদান কর্মকর্তা ফারুক আহম্মেদ এর মোবাইলে কল করা হলে তিনি জানান,আমি তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা নই হয়তো ভুলে লিখেছে।
উল্লেখ্য, বরিশালের বিআরটিসি বাস ডিপোতে ১ ডিসেম্বর শুক্রবার দিনগত রাত সাড়ে এগারোটার দিকে ইয়াবা ও ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামসহ আটক হয় দুজন। ডিবি পুলিশের এস আই রাফসান এ অভিযানের নেতৃত্ব প্রদান করে। মাদকসহ দুজন আটকের ঘটনা জেনে যায় ডিপো ম্যানেজারসহ গনমাধ্যমের সবাই।ভিড় করে অসংখ্য গনমাধ্যমকর্মী ও স্থানীয় লোকজন। এসআই রাফসানের সাথে দহরম শেষে ছেড়ে দেয়া হয় আটক ইব্রাহীম ও সুজনকে। ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যায় মুল হোতা ওসমান ও রবিউল ।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত