মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল : নলছিটিতেএকের পর এক সংঘটিত হচ্ছে খুন হামলাসহ নানান অপরাধ। বিভিন্ন সময়ের চেয়ে বর্তমানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। নলছিটি জুড়ে অস্থিতিশীল অবস্থা। ১৫ ঘন্টায় দুটি খুনের ঘটনায় সকলের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।অপরাধ দমনের পরিবর্তে অপ্রতিরোধ্য গতিতে একের পর এক হামলা খুনের ঘটনায় উপজেলাজুড়ে চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সাধারন মানুষের মাঝে। অপরাধ দমনে নলছিটি থানা পুলিশ চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চরম অবহেলার অভিযোগ রয়েছে নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্বে। ওসির কর্মকান্ডে উপজেলার বিভিন্ন মহল অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, নলছিটি উপজেলায় ১৫ ঘন্টার ব্যবধানে দুই খুন এবং একমাসে আওয়ামী লীগ নেতাসহ খুন হয়েছেন ৩ জন।ঘটনাগুলো প্রকাশ্যেই বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। গত ৭ জানুয়ারি রাতে উপজেলার সিদ্ধকাঠি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কাজী ফুয়াদ (৪০) কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।উপজেলায় ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে মোটরসাইকেল সমিতির সভাপতি ও শ্রমিকলীগ কর্মী মো. ইমরান হোসেন হাওলাদারকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।২৫ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ রানাপাশা গ্রামে খলিলুর রহমান কে হাতুড়ি পেটা করে হত্যা করেছেন তার ছেলে। গত এক মাসে উপজেলা তিনটি হত্যাকান্ড সংগঠিত হওয়ায় ওসি মুরাদ আলীর বিরুদ্ধে বইছে সমালোচনার ঝড়।সচেতন মহল মনে করছেন, উপজেলায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায়ে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয়ে দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আর এসব ঘটনায় অভিযুক্তরা অনেকেই অধরাই রয়ে গেছে।এদিকে সম্প্রতি একজনকে কুপিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরবর্তীতে একজন আসামী গ্রেপ্তার হলেও পুলিশ হেফাজতে থেকে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের দাবি পুলিশ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দিয়েছে।
আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপের পাশাপাশি মহাসড়কে পুলিশি চেকপোষ্টের নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজিও করছে এই থানার সদস্যরা। আর তার মদদে রয়েছেন স্বয়ং ওসি মুরাদ । আইনী বিধি অনুযায়ী অপরাধ দমনে চেকপোষ্ট বসালেও তার আড়ালে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলছে মহাসড়কে।জানা গেছে, লাইটপোস্টের স্থানে চেকপোস্ট না বসিয়ে প্রতিনিয়ত ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্য চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে পুলিশ সদস্যরা। সন্দেহ মনে হলেই আটকের পরিবর্তে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের।
এছাড়া গভীর রাতে বিভিন্ন বাসে পরিবহন করা জাটকা সহ অবৈধ মাছ তল্লাশি চালিয়ে আটক করলেও মাসোয়ারা চুক্তিতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে এসব অবৈধ সব কর্মকান্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ওসি মুরাদ বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল।এদিকে মাদক নির্মুলে পুলিশের এই সেক্টরটিতে জিরো টলারেন্স নীতিতে অটুট থাকলেও নলছিটি থানায় তা ব্যতিক্রম। মাদকননির্মুলের পরিবর্তে মাদক ব্যবসায়ীদের গোপনে মদদ দিচ্ছে থানার পুলিশ সদস্যরা। উপজেলাজুড়ে সন্ধ্যা নামলেই বিভিন্নস্থানে মাদক বেচা-বিক্রির হাট বসায় মাদক কারবারিরা। দেখেও যেন থানা পুলিশ না দেখার ভান করে।মাদক কারবারিদের নানাবিধ সুবিধা দিয়ে লুটছে বিপুল অর্থ। যার মোটা অংকের একটি ভাগ দিতে হয় ওসি মুরাদকে। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে মাদক বিক্রি থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা নাম প্রকাশ্যে এক ব্যক্তি। তিনি জানিয়েছেন, উপজেলার বিভিন্নস্থানে মাদকের হাট বসে। আর গভীর রাতে এমন সিন্ডিকেট পরিচালনা করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। এদের বিরুদ্বে থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। এছাড়া তারা সন্দেহের তালিকায়ও থাকা সত্ত্বে কোন অভিযান কিংবা আটক করছে না পুলিশ।
উল্টো এই থানা পুলিশের যোগসাশজে বীরদর্পে প্রকাশ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। এছাড়া মাদকের বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করলেও অভিযানের আগেই মাদক বিক্রেতাদের জানিয়ে দেয়া হয় সময় ও স্থান। এতে অভিযুক্তরা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকেই যায়। আর অভিযান পরিচালিত হচ্ছে এমন কর্মকান্ডও প্রকাশ্যে দেখিয়ে নজড় কাড়ে উর্ধতন মহলের। যার ধরুন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে স্বল্প পরিমানে মাদক উদ্বার দেখায়। অনেক সময়ে অর্থের বিনিময়ে আসামী ছেড়ে দিয়ে পলাতক বলে মিডিয়ায় বক্তব্যও দেন তিনি।আবার অনেক সময়ে অর্থের চুক্তি কাঙ্ক্ষিত না হলে মাদক কারবারিকে আটক দেখানো হয়।নলছিটি থানার পুলিশের বিরুদ্বে চাঞ্চল্যকর আরও কিছু তথ্য। জানা গেছে, দক্ষিণঞ্চলের বড় একটি রুটে পরিবহন যাতায়াতে এই উপজেলা হয়ে গন্তব্যে ফিরতে হয়।অবৈধ সব ব্যবসায়ীরা সড়ক পথে চোরাচালানের মাধ্যমে প্রতিরাতে বিভিন্ন মাধ্যমে পরিবহন করে পলিথিনের ব্যবসা। নিরাপদে পরিবহনে মোটা অংকের মাসোয়ারা নিয়ে তাদের মদদ দিয়ে আসছে থানা পুলিশ।অবৈধভাবে পলিথিনের একাধিক তথ্য আসলেও গত কয়েকমাসে অভিযান চালিয়ে পলিথিন জব্দের ইতিবাচক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করতে পারেনি থানা পুলিশ। আর এতে অবৈধ কারবারিরা তাদের স্বার্থ হাসিল করে চলেছে নির্ভয়ে। আর ফায়দা লুটছে মদদদাতা ওসি মুরাদ ও তার থানার সদস্যরা।এছাড়া উপজেলার নানাবিধ নেতিবাচক কর্মকান্ডের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে চরমভাবে। উপজেলারজুড়ে চুরি-ছিনতাই, ডাকাতিও ঘটছে প্রতিনিয়ত। রাতের টহল পুলিশ নিয়োজিত থাকলেও দায়িত্বপালনে শুন্যঅবস্থানে রয়েছে তারা। অপরাধ দমনের বিপরীতে তারাই যেন অপরাধ সংঘটিতের সুযোগ করে দিচ্ছে বলে মনে করছে উপজেলাবাসী।
এদিকে জানা গেছে, ভুক্তভুগীরা জিডি করতে গেলে পরামর্শ কিংবা আইনী ব্যবস্থার বিপরীতে পদে পদে হয়রানীরও অভিযোগ উঠেছে এই থানার বিরুদ্বে। অনেকের গুরুত্বর অভিযোগ থাকলে অভিযোগ না দিতে পেরে ফেরত চলে যেতে হয়। আবার অভিযোগ দিলেও টাকা না দিলে যাওয়া হয়না ঘটনাস্থলে। ব্যবস্থা নেয়া হয়না অভিযুক্তদের বিরুদ্বে। এছাড়া কেউ জিডি করতে গেলে সরাসরি না নিয়ে বাইরের কম্পিউটারের দোকান থেকে অনলাইনে জিডি করতে বলা হয়। বয়স্ক এক ভুক্তভুগী জানান, আমি থানায় একটি জিডি করতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাকে বলা হয়, আপনি কম্পিউটারের দোকান থেকে জিডি করেন। আমরা পরে দেখব। এদিকে অনেকের জিডি কিংবা অভিযোগ নিলেও লেখার আগে টাকা দিতে হয় । নচেৎ সেটি গ্রহণযোগ্য হবেনা বলে ফেরত দেয়া হয়।
এব্যাপারে নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুরাদ আলী সাংবাদিকদের জনান,আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথা।তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আপনার কাছে তথ্য প্রমাণ থাকলে নিউজ করতে আমি নিষেধ করবো না।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল বলেন, দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্ৰহন করা হবে।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত