অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া :
বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক সক্ষমতার দেশ। প্রতিটি অঙ্গনে অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নতি ও অগ্রগতি সাধন করে চলেছে দেশটি। মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী সময়ে অর্থাৎ ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের ৪৮ শতাংশ মানুষ ছিল হতদরিদ্র। আর বর্তমানে বাংলাদেশে দরিদ্রতার হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ- যা ২০১৫ সালেও ছিল ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২০৬৪ মার্কিন ডলার। যা নিকট ভবিষ্যতে আমাদের সুনিশ্চিতভাবেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে শতকরা ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে। ২০২০-২১ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ছিল শতকরা ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৪৭০ টাকা- যা ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৩৮ টাকা- যা ২ হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলার।
সরকারের নেওয়া মেগা প্রকল্পগুলোর অন্যতম একটি পদ্মা সেতু। যেটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দুই যুগেরও বেশি সময়ের লালিত স্বপ্ন। এই সেতু চালুর ফলে দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়বে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যবসাবাণিজ্যেও প্রসার ঘটবে। ইতোমধ্যেই এটাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্পকারখানা।
পদ্মা সেতুতে দেশের মধ্যে পর্যটনের বিরাট সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আয় করারও সুযোগ তৈরি হবে। টু্যর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টুয়াব)-এর মতে, পদ্মা সেতু ঘিরে পর্যটনের বড় একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্য যে পর্যটন স্পটগুলো রয়েছে সেগুলোর জন্যও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। কেননা, যোগাযোগের কারণে সুন্দরবন, বাগেরহাট ও কুয়াকাটায় যে হারে পর্যটকরা আগে যেত এখন পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে আরো বেশি সহজে কম খরচে ও কম সময়ে ওই সব স্পটে পর্যটকরা যেতে পারবে। পাশাপাশি পদ্মার দুই পাড়েও নতুন নতুন স্পট তৈরি হবে। এখানকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও পদ্মা সেতু বড় একটি ভূমিকা রাখবে।
দক্ষিণাঞ্চলে অনেক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে- যা ভ্রমণপ্রেমীদের আকৃষ্ট করে থাকে। সুন্দরবন, কুয়াকাটা, ষাটগম্বুজ মসজিদের মতো অনেক পর্যটন কেন্দ্র ওই অঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থার অনুপযোগিতার কারণে মানুষের কাছে অনাগ্রহের বিষয় ছিল। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে এখন তা নাগালের মধ্যে চলে আসবে। এসব পর্যটন কেন্দ্রের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করে তা থেকেও রাষ্ট্র প্রচুর অর্থ আয় করতে সমর্থ হবে। নানা দিক বিবেচনায় আমরা নিঃসংকোচে বলতে পারি, স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের অনাগত স্বপ্ন পূরণে সারথির কাজ করবে। এ দেশ নিজের অর্থায়নে এত বিশাল সেতু নির্মাণ করতে পারলে, ধীরে ধীরে আরও অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিজ অর্থেই সম্পন্ন করতে পারবে। পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন বাংলাদেশের জাতীয় মনোবল ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পদ্মা সেতুর সুবিধা কাজে লাগিয়ে শিল্পকারখানা গড়ে উঠলে তা অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে। দেশের অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর ভূমিকা নিয়ে এর আগে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, সেতুটি বাস্তবায়িত হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে যাবে। আর প্রতি বছর দারিদ্র্য নিরসন হবে শূন্য দশমিক ৮৪ ভাগ। এর মাধ্যমে আর্থসামাজিক উন্নয়নে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রায় ৬ কোটি মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন আনবে পদ্মা সেতু। কবি কৃষ্ণচন্দ্র ইনস্টিটিউট, খানজাহান আলী সেতু, খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর, জাতিসংঘ পার্ক, দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপেস্নক্স, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের মাজার, রূপসা নদী, শহীদ হাদিস পার্ক, সুন্দরবন, খানজাহান আলী কর্তৃক খননকৃত বড় দীঘি, খুলনা শিপইয়ার্ড, গলস্নামারী স্মৃতিসৌধ ও বধ্যভূমি, জাহানাবাদ বনবিলাস চিড়িয়াখানা ও শিশু পার্ক, তিতুমীর, পিঠাভোগ, প্রেম কানন, বকুলতলা, মোংলা পোর্ট, রাড়ুলী, রেলস্টেশনের কাছে মিস্টার চার্লির কুঠিবাড়ী, সেনহাটি, সোনাডাঙ্গা সোলার পার্ক ইত্যাদি ব্যাপক প্রসার ঘটার আশা করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতু ঘিরে তৈরি হয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। স্বপ্নের এই সেতু চালুর আগেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই আসছে অসংখ্য মানুষ। ভ্রমণপিপাসু এসব মানুষের চাহিদা মেটাতে পদ্মার দুই পাড়ের মানুষের যেন আন্তরিকতার কমতি নেই। আতিথেয়তার সবটুকু দরদ দিয়েই পর্যটকদের সেবা দিচ্ছেন তারা। আদি পেশা বদল করে মাওয়া-জাজিরার অনেকেই এখন পর্যটনকেন্দ্রিক নতুন ব্যবসা কিংবা অন্য পেশায় আত্মনিয়োগ করছেন। এ দিকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের পর্যটনের উদ্যোক্তারাও নতুন সেবা দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন পদ্মা সেতু চালু হলে শুধু যোগাযোগই নয়, পর্যটনের পাশাপাশি শিল্প-বাণিজ্যেও অনেক দূর এগিয়ে যাবে এই এলাকার মানুষ। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের স্পটে পরিণত হবে পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু ঘিরে দিনকে দিন বাড়ছে পর্যটনের অমিত সম্ভাবনা। বিশেষ করে গত মাসে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ সেতুটি মাথা তুলে দাঁড়ানোর পর থেকেই প্রতিদিনই সেতুটি দেখতে ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ। সবার মধ্যেই একটি ইতিবাচক মনোভাবও তৈরি হয়েছে। তবে তাক লাগানো সেতুটির পর্যটন গুরুত্ব কাজে লাগাতে পরিকল্পিত উদ্যোগের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনাও নিয়েছে সেতু বিভাগ।
পদ্মাপাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য আকৃষ্ট করছে সব বয়সের মানুষকেই। মাওয়া-জাজিরায় সেতুর পুরো কাঠামো দাঁড়ানোর পর এসব এলাকার আকর্ষণ বেড়ে গেছে বহু গুণে। বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতীক এই সেতু দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন পর্যটকরা। পদ্মারপাড় ও সেতুর আশপাশে নৌযানে চড়ে মন ভরে দেখছেন স্বপ্নের সেতু। পদ্মার পূর্ব পাড়ে মুন্সীঞ্জের লৌহজংয়ের অনেক স্থানেই গড়ে উঠেছে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় অনেক লোকজনই এখন নতুন নানা পেশার সঙ্গে জড়িত হয়েছেন। ট্রলার ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা এখানে বেশ জমজমাট। দৈনিক আয়রোজগার বেশ। আবার অনেকে গড়েছেন রেস্টুরেন্ট। বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত পর্যটকদের খাবারের জোগান দিতে অনেকে আদি পেশা ছেড়ে হোটেল ও মাছের ব্যবসা ধরেছেন। শিমুলিয়া ঘাটের গোলচত্বর ঘিরে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক খাবার হোটেল ও কার পার্কিং। পারিবারিক পুরনো ব্যবসা বাদ দিয়ে এখানে হোটেল দিয়েছেন অনেকে। পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর কয়েক মাস পর থেকেই তার এই হোটেল ব্যবসা বেশ জমে উঠেছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার লোক এখানে আসছে। আরো অনেকেই বাপ-দাদার পুরনো পেশা বাদ দিয়ে দর্শনার্থীদের সেবামূলক ব্যবসা গড়েছেন এখানে। আগতদের অনেকেই জানালেন, যেহেতু একটি বড় প্রজেক্ট পদ্মা সেতু ফলে অনেক রিসোর্টও গড়ে উঠেছে। অনেকে পরিবার নিয়েও আসছে পদ্মা সেতু দেখার জন্য। তাই এখানে থাকার ব্যবস্থাটা যদি ভালো হয় আশা করা হচ্ছে সামনে এটি দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।
পদ্মা সেতু চালুর আগেই দুই পাড়ের সংযোগ সড়কের উভয় পাশেই শুরু হয়েছে পর্যটকদের জন্য নানা বিনোদনের আয়োজন। স্থানে স্থানে কার পার্কিং, চা-কফির দোকান, খাবার হোটেল, বিশ্রামাগার, সুদৃশ্য যাত্রী ছাউনি নির্মাণও করা হচ্ছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গার চার রাস্তা মোড়ে গোলচত্বরে নির্মাণ করা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় কয়েকটি স্পট। আরো রয়েছে উন্নয়নের নানা চোখ ধাঁধানো কর্মযজ্ঞ। একই সঙ্গে ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের দুই পাশে এখন কেবলই দেখা যায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ। বিশেষ করে দপদপিয়া, বিমানবন্দর, গড়িয়ারপাড়, শিকারপুর এলাকায় মহাসড়কের দু'পাশে বেসরকারি খাতে অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে একের পর এক। আর এসবই হচ্ছে পদ্মা সেতুকে টার্গেট করে।
নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু শেষ হলে শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশের পর্যটন শিল্প বিকাশেও বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেতুর কাজ শেষ হলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিশ্বনন্দিত গন্তব্য রয়েল বেঙ্গল টাইগারসমৃদ্ধ সুন্দরবন ও সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের অভাবনীয় সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে বিশাল পর্যটন শিল্প। এছাড়া পদ্মা সেতুকে ঘিরে ভবিষ্যতে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার কথাও ভাবছে সরকার।
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য জাদুঘর ও প্রজাপতি পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পর্যটক আকর্ষণের জন্য অত্যন্ত গোছানো ও দৃষ্টিনন্দন করে এ প্রাণী জাদুঘর ও পার্কটি গড়ে তোলা হচ্ছে। এটি পদ্মা সেতুরই একটি অংশ।
পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ছোট-বড় শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। পদ্মার চরাঞ্চলে অলিম্পিক ভিলেজ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিটি, হাইটেক পার্ক, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু সংলগ্ন জাজিরার নাওডোবা এলাকায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা তাঁতপলস্নী গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে আবাসন, শিক্ষা-চিকিৎসাসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। ঢাকার বাইরে পদ্মা সেতুর আশপাশের এলাকায় গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতু সংলগ্ন মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী, চরজানাজাত ও শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে এসব এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে শহরায়ণ হবে এই এলাকা।
পদ্মা সেতুর কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা গতিশীল হবে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা স্বল্পসময়ে পণ্য পরিবহণ করে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি ও আমদানি করতে উৎসাহিত হবেন। খুলনায় দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিমায়িত মৎস্য ও পাটশিল্পের অধিকাংশ। পদ্মা সেতু হলে এই খাতে রপ্তানি আয় আরও বাড়বে।
পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের কুয়াকাটা ও সুন্দরবনসংলগ্ন ছোট ছোট বিভিন্ন দ্বীপে মালদ্বীপের মতো পর্যটন উপযোগী করা যাবে। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, সুন্দরবন ও পায়রা বন্দরকে ঘিরে দেখা দেবে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন চর ও দ্বীপকে কেন্দ্র করে মালদ্বীপের মতো পর্যটনের বিশাল জগৎ তৈরি করা সম্ভব। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সেই সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যাবে। এখন কক্সবাজারের চেয়ে কম সময়ে সুন্দরবন ও কুয়াকাটায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। কক্সবাজার যেতে যেখানে সময় লাগে ১০-১২ ঘণ্টা সেখানে কুয়াকাটায় পৌঁছানো যাবে মাত্র ৬ ঘণ্টায়, ফলে নিঃসন্দেহে পর্যটকের উপস্থিতি উলেস্নখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে। পায়রা বন্দরের সঙ্গে বুলেট ট্রেন চালুর কথা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কুয়াকাটা ও আশপাশে বেশ কিছু দ্বীপের সঙ্গে ভালো ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। তাহলে পর্যটকরা আকৃষ্ট হবে। এ জন্য ইতোমধ্যে অনেক দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর ও এর আশপাশে বিনিয়োগ করা শুরু করেছে।
পদ্মা সেতুকে ঘিরে পদ্মার দুই পারে সিঙ্গাপুর ও চীনের সাংহাই নগরের আদলে শহর গড়ে তোলার কথাবার্তা হচ্ছে। নদীর দুই তীরে আসলেই আধুনিক নগর গড়ে তোলা সম্ভব। তবে সে জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। এই সেতু ঘিরে কী কী হতে পারে, কোথায় শিল্পকারখানা হবে, কোথায় কৃষিজমি হবে সেসব ভেবেচিন্তে করতে হবে। এই সেতুকে ঘিরে পর্যটনে যুক্ত হবে নতুন মাত্রা। অনেক আধুনিক মানের হোটেল মোটেল রিসোর্ট গড়ে উঠবে।
২০৩৫-৪০ সালে বাংলাদেশ যে উন্নত দেশ হবে, সেক্ষেত্রে এই সেতু নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সব মিলিয়ে বলা যায়, স্বপ্নের এই সেতুকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ। সোনালি স্বপ্ন এখন কল্পনা নয়, সত্যিই দৃশ্যমান। অনেকগুলো স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। নিশ্চয়ই এ সেতু অর্থনীতির সেতুবন্ধন ও নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে, সমগ্র জাতি সে প্রত্যাশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা সরাসরি সারাদেশের সঙ্গে যুক্ত হবে। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব হবে। ঢাকা থেকে খুলনা, মোংলা, বরিশাল, কুয়াকাটা অর্থনৈতিক করিডর খুলে যাবে। এ সেতুকে ঘিরে বিশদ অঞ্চলজুড়ে গড়ে উঠবে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক। ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং দেশের শিল্পায়নের গতি হবে ত্বরান্বিত। সেতু ঘিরে পদ্মার দু'পাড়ে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক প্রসার এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া : উপাচার্য , বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত