মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল:
বরিশাল সিটি কর্পোরশনে অর্থ আত্মসাত, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে চাকুরী হারানো সেই হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমান আবারো নগর ভবনের সুনাম নষ্টের জন্য তার পুরানো কৌশল কাজে লাগিয়ে ঘুষ বানিজ্য,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হয়রানীতে ব্যস্ত ।পরিস্কার -পরিচ্ছন্ন ও সৎ সিটি মেয়রের নাম ভাঙ্গিয়ে মশিউর রহমান শুরু করেছে তার সব অপকর্ম।২০১৯ সালের অক্টোবরে মশিউর রহমানকে তৎকালীন মেয়র দুর্নীতি ,অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করেন।
পরে অভিযুক্ত হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা মশিউরের বিরুদ্ধে পাহাড়সম দুর্নীতির অভিযোগের কারনে বরখাস্ত করা হয়। মশিউর রহমান বরিশাল সিটি করপোরেশন থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। নগরীতে তার রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। যার প্রমাণ পেয়ে প্রথমে ওএসডি করা হয়। মশিউর রহমান সব মেয়রের আমলেই পার্সেন্টেজ নিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ঠিকাদারদের বিল ছাড়াতে মশিউর রহমানকে শতকরা দুই ভাগ দেওয়া বাধ্যতামূলক । তাকে টাকা না দিয়ে কেউ বিল ছাড়াতে পারেন না। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন বকেয়ার পেছনেও বেশি দায়ী মশিউর রহমান বলে অভিযোগ ছিল সব সময়। যখন মশিউরকে বরখাস্ত করা হয় তখন বেশি খুশি হয়েছিল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলেন, ‘মশিউর রহমান সব আমলে মেয়র ও ঠিকাদারদের খুশি রাখার চেষ্টা করেন। কর্মচারীদের বেতন আটকে কীভাবে অন্যদের সুবিধা করে দেওয়া যায় সেই হিসাব কষেন তিনি। বিগত সময়ে যারা মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন তারাও অনেকটা নির্ভরশীল ছিলেন মশিউরের উপর। কারণ মশিউরের কাছেই সব অর্থের হিসাব। মশিউর রহমানের কারণেই আমরা (কর্মচারী) ঠিকমতো বেতন পাইনি।
বিসিসি’র সাবেক মেয়র মরহুম আহসান হাবিব কামাল দায়িত্বে থাকাকালে তার ছেলে মো. কামরুল আহসান রুপমের মালিকানাধীন ৪টি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ না করেও বিল প্রদান এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না নিয়ে ২০৮ প্রকল্পের টাকা ১০ শতাংশ ঘুষের বিনিময়ে পরিশোধসহ দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতে সহযোগীতার অভিযোগ রয়েছে মশিউরের বিরুদ্ধে।
মশিউরের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ:
নাম আ.ব.ম মশিউর রহমান। পদবি বাজেট কাম হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা।বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত। অভিযোগ প্রভাব খাটিয়ে উচ্চতর স্কেল গ্রহণ, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) থেকে প্রথমে বরখাস্ত করা হয়।
ঐ সময় বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়,বরখাস্তের পাশাপাশি মশিউরের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় মামলা করা হবে না, সে বিষয়ে চিঠি পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে কারণ জানাতে বলা হয়। তৎকালীন জনসংযোগ কর্মকর্তা তখন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মশিউর রহমান বাজেট কাম হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকালে প্রভাব খাটিয়ে তার বেতন উচ্চতর স্কেলে উন্নীত করেন। নামে-বেনামে একাধিক ব্যাংক হিসাব নম্বর খুলে বিসিসিতে কৃত্রিম অর্থ সংকট সৃষ্টি এবং আয়ের সঙ্গে সংগতিহীন ব্যায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তদন্তাধীন। বিসিসির হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমান ভুয়া ব্যাংক হিসাব খুলে জালিয়াতির মাধ্যমে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী গোলাম হোসেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। মশিউরের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে বরিশাল নগরের চৌমাথা বাজার থেকে আমতলা মোড় পর্যন্ত সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ পান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোহেল ইঞ্জিনিয়ার্সের স্বত্বাধিকারী গোলাম হোসেন। কাজ শেষে বিসিসির কাছে পাওনা ৮৮ লাখ ২৩ হাজার ৪শ’ টাকার বিল চাইতে গেলে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমান বিভিন্নভাবে টালবাহানা শুরু করেন। পরে গোলাম হোসেন খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ওই টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে উঠিয়ে নিয়েছেন মশিউর রহমান। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ঠিকাদার। এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের তৎকালীন সচিব মো. ইসরাইল হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ সব ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ আরও অনেক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসবের ভিত্তিতে তৎকালীন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ প্রথমে মশিউরকে ওএসডি পরে বরখাস্ত করেন।
এছাড়া মশিউর রহমানকে বিভিন্ন অভিযোগে ২০১৩ সালের ৪ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন থেকে চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে স্ট্যান্ড রিলিজ করেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সিটি কর্পোরেশন শাখা।আদেশে উল্লেখ করা হয়,আগামী ৭ জুলাইর মধ্য যোগদানের নির্দেশ প্রদান করা হলো।
বর্তমান সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াত মেয়র হওয়ার পরে সাদিক বিরোধী হিসেবে মশিউর নিজেকে জাহির করে কুট কৌশলের মাধ্যমে যোগদান করে মশিউর ফিরে গেছেন তার পুরানো দিনের সেই অনিয়ম, দুর্নীতি আর ঘুষ বানিজ্যে।এ ক্ষেত্রে তিনি নবাগত মেয়রের কাছের লোক পরিচয় দিয়ে তার নাম ভাঙ্গানো শুরু করে দিয়েছেন।মশিউরের কাজই হলো কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হয়রানী করা।
এ ব্যাপারে মশিউর রহমানকে প্রথমে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।পরে হোয়াটঅ্যাপসে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রশ্নগুলো সিন করলেও কোন উত্তর প্রদান করেন নি।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত