ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : পশ্চিমবঙ্গের নিউ টাউনে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ার আজীম আনারকে কীভাবে ভারতে খুন করা হয়েছে সে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। কোন কৌশলে তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, খুন করা হয়েছে এবং কীভাবে মরদেহ গুম করা হয়েছে এখন সেসব তথ্য বের করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এরমধ্যে ভারতের কলকাতাভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, এমপি আনারকে হানি ট্র্যাপে ফেলে— অর্থাৎ তরুণীর মাধ্যমে লোভ দেখিয়ে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, এমপি আনারের ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন হত্যার পুরো পরিকল্পনা সাজান। আর এ কাজে তিনি ব্যবহার করেন শিলাস্তি রহমান নামের এক তরুণীকে। যার প্রকৃত নাম সিনথিয়া রহমান।
গত ১২ মে চিকিৎসার কথা বলে ভারতে যাওয়া এমপি আনার শিলাস্তি রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। এই তরুণীকে ব্যবহার করে মূলত এমপি আনারকে ভারতে আনা হয়।
হত্যার ছক কষা আক্তারুজ্জামান শাহীন ১০ মে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু ওই সময় শিলাস্তি ওরফে সিনথিয়া ভারতে থেকে গিয়েছিলেন। এমপি আনারকে ভারতে নেওয়ার পাশাপাশি শিলাস্তি সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। এরপর আনারের মরদেহ গুম করতেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তিনি।
কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, কিলিং মিশন সাকসেসফুল হওয়ার পর শিলাস্তি রহমান ওরফে সিনথিয়া রহমান গত ১৫ মে বিমানযোগে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে ফেরেন।
হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন এবং এই তরুণী উভয়ই চরমপন্থি সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (পিবিসিপি) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমটি দাবি করেছে।
গত ১২ মে কলকাতায় যাওয়া এমপি আনার ১৩ মে নিউ টাউনের একটি বাড়িতে নির্মম হত্যার শিকার হন। হত্যার পর তার মরদেহ টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর সেগুলো ট্রলি দিয়ে সেই বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে গুম করে ফেলা হয়।এদিকে শিলাস্তি রহমান নামের এই তরুণীকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। বর্তমানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেছেন, ঢাকায় বসে ২/৩ মাস আগে আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ঢাকায় না পেরে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্যকে কৌশলে নেওয়া হয় কলকাতায়। সেখানে তাকে হত্যার পর শরীর টুকরা টুকরা করে হাড্ডি থেকে মাংস আলাদা করা হয়। এরপর হলুদ মিশিয়ে ব্যাগে ভরে ওই বাসা থেকে বের করা হয়। তবে কোথায় মরদেহের খণ্ডিত অংশ ফেলা হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ডিবি প্রধান বলেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার পরিকল্পনা হয় দুই থেকে তিন মাস আগে। তারা পরিকল্পনা করেছিল ঢাকায় হত্যা করবে। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের নজরদারি ও ঢাকায় হত্যাকাণ্ডের পরে সব হত্যার ক্লু পুলিশ বের করে নেবে বলেই হত্যাকারীরা কলকাতায় এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
হারুন অর রশীদ বলেন, অপরাধীরা বিদেশের মাটিতে অপরাধ করলে বাংলাদেশ পুলিশের নজরে আসবে না বলেই কলকাতা বেছে নেয়। বাংলাদেশের মাটিতে অপরাধ করার সাহস পায়নি। তবে তারা এ হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে থাকতে পারেনি। আমরা তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। আরও কয়েকজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামানের বাসা একটি গুলশানে, একটি বসুন্ধরা এলাকায়। এই দুই বাসাতেই অনেকদিন ধরে পরিকল্পনা করেছে। আনারকে হত্যার নেপথ্যে রাজনীতি বা অর্থনৈতিক যে কারণেই থাকুক না কেন বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা কলকাতায় গত ২৫ তারিখ একটি বাসা ভাড়া নেয়। তারা ৩০ এপ্রিল ওই বাসায় ওঠে। যিনি হত্যার পরিকল্পনা করেছেন তিনিও আরেকজনসহ মোট তিনজন বিমানে করে কলকাতার ভাড়া বাসায় ওঠেন।
তারা দুই মাস ধরে খেয়াল রাখছে কখন আনারকে কলকাতায় আনা যাবে। সেখানে আরও দুজনকে হায়ার করা হয়। তারা ওই বাসায় আসা যাওয়া করবে। তারা হলেন, জিহাদ বা জাহিদ ও সিয়াম। মাস্টারমাইন্ড গাড়ি ঠিক করে। কাকে কত টাকা দিতে হবে। কারা কারা হত্যায় থাকবে, কার দায়িত্ব কী হবে। কিছু কাজ আছে বলে ৫/৬ জন রেখে ১০ মে বাংলাদেশে চলে আসেন আখতারুজ্জামান শাহীন।
হারুন অর রশীদ বলেন, গত ১২ মে আনার তার ভারতীয় বন্ধু গোপালের বাসায় যান। ১৩ তারিখ ওই ভাড়া বাসায় ওঠেন। ফয়সাল নামে একজন তাকে রিসিভ করেন। সেখান থেকে নিয়ে যিনি মূল হত্যাকারী তিনি আনার ও ফয়সালকে নিয়ে গাড়িতে করে ওই বাসায় যান। আগে থেকে অবস্থান করা মোস্তাফিজও বাসায় ঢোকেন। সেখানে আগে থেকে ভেতরে ছিল জাহিদ, সিয়াম। আধা ঘণ্টার মধ্যে নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
কে এই শিলাস্তি?
আনোয়ারুল আজীম খুনের পেছনে কয়েকজন বাংলাদেশি জড়িত। এ ঘটনার সাথে উঠে আসছে এক তরুণীর নাম। তিনি হলেন শিলাস্তি রহমান। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমপিকে হত্যার জন্য কলকাতার নিউ টাউনে অভিজাত ‘সঞ্জিভা গার্ডেনে’র যে ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া হয়েছে, সেখানে অবস্থান করেছিলেন ওই তরুণী।শিলাস্তি রহমান এমপি আনার খুনের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী বলে জানা যাচ্ছে। তবে তার বিষয়ে এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত তথ্য হাতে পাওয়া যায়নি।
‘টুকরো মরদেহ’ উদ্ধারের আশা হারুনের:হত্যার পর হাড়-মাংস আলাদা করে হলুদ মিশিয়ে ব্যাগে ভরা হয়
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা শাখা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, আমাদের কাছে আটক তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কলকাতা থেকে আসা তদন্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি দল। আমাদের তদন্ত সংশ্লিষ্ট তথ্যও আমরা শেয়ার করেছি। তারা চেষ্টা করছে, আশা করছি খুব শিগগিরই তারা হত্যার শিকার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ উদ্ধারে সক্ষম হবেন।বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা তদন্ত করতে ঢাকায় আসা কলকাতার তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন ডিবি কর্মকর্তারা। এরপর রাত ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিবি কর্মকর্তা হারুন।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, চার সদস্যের ভারতীয় পুলিশের প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় আসে। সেখানে তারা এ হত্যাকাণ্ড জড়িত যে তিনজন বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এছাড়া তারা কলকাতায় যে দুজন গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের তথ্য বাংলাদেশের তদন্তকারীদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন।ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেছেন, ঢাকায় বসে ২/৩ মাস আগে আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ঢাকায় না পেরে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্যকে কৌশলে নেওয়া হয় কলকাতায়। সেখানে তাকে হত্যার পর শরীর টুকরা টুকরা করে হাড্ডি থেকে মাংস আলাদা করা হয়। এরপর হলুদ মিশিয়ে ব্যাগে ভরে ওই বাসা থেকে বের করা হয়। তবে কোথায় মরদেহের খণ্ডিত অংশ ফেলা হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ডিবি প্রধান বলেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার পরিকল্পনা হয় দুই থেকে তিন মাস আগে। তারা পরিকল্পনা করেছিল ঢাকায় হত্যা করবে। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের নজরদারি ও ঢাকায় হত্যাকাণ্ডের পরে সব হত্যার ক্লু পুলিশ বের করে নেবে বলেই হত্যাকারীরা কলকাতায় এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত