ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক : ইসরায়েলের আপত্তি সত্ত্বেও আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউরোপের তিন দেশ- স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড। তিন দেশ আশা করছে, তাদের এ যৌথ পদক্ষেপ একই পথে হাঁটতে উদ্বুদ্ধ করবে অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রকেও। পাশাপাশি এ থেকে কূটনৈতিক একটি চাপ তৈরি হবে যা গাজায় যুদ্ধবিরতি ও হামাসের হাত থেকে জিম্মি মুক্তিতে সহায়তা করবে।
মঙ্গলবার (২৮ মে) প্রথমে স্পেনের স্বীকৃতির খবর সামনে আসে। পরে জানা যায়, একই পথ অনুসরণ করেছে নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ডও। জাতিসংঘের ১৪৩ সদস্য এরই মধ্যে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। নতুন করে সে তালিকায় যোগ হলো ওই তিন দেশ।
ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি প্রশ্নে ২৭ সদস্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন অনেকটাই দ্বিধাবিভক্ত। চেক রিপাবলিক, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া আগেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। স্লোভেনিয়া আগামী বৃহস্পতিবার (৩০ মে) স্বীকৃতি দিতে পারে। মাল্টাও জানিয়েছে, তারা এ বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিনকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় সুইডেন ২০১৪ সালে।
স্পেনের মন্ত্রিসভা মঙ্গলবার ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেয়। এর পরপরই ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো স্যানচেজের সমালোচনা করেন। তিনি দাবি করেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে স্যানচ্যাজ ইহুদি গণহত্যার ইন্ধনে শামিল হয়েছেন।
স্পেনের সরকারি মুখপাত্র পিলার আলেগ্রিয়া বলেছেন, মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের পেছনে একটিই উদ্দেশ্য রয়েছে। আর তা হলো- ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের শান্তি অর্জনে সহায়তা করা।
ইসরায়েল অবশ্য তিন দেশের সিদ্ধান্ত নিয়েই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা জানানোর পরপরই স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয় ইসরায়েল। পাশাপাশি তেল আবিবে থাকা তিন দেশের রাষ্ট্রদূতকেও তলব করে তারা।
এদিকে, নরওয়ে সরকারের স্বীকৃতি দেওয়ার খবর জানায় বার্তা সংস্থা এএফপি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী এসপেন বার্থ এইডে বলেন, ‘৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সবচেয়ে উৎসাহী পক্ষগুলোর একটি ছিল নরওয়ে।’
অন্যদিকে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে এক বিবৃতি প্রকাশ করে আয়ারল্যান্ড। সে বিবৃতিতে দেশটি বলে, মঙ্গলবার সকালে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে সরকার স্বীকৃতিতে অনুমোদন দেয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকার ফিলিস্তিনকে সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং ডাবলিন ও রামাল্লার মধ্যে পরিপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে সম্মত হয়েছে।’
আইরিশ প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি শান্তির আশাকে বাঁচিয়ে রাখার সঙ্গে জড়িত। তিনি আরও বলেন, শান্তি ও সুরক্ষা বজায় রেখে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের পাশাপাশি বসবাস করার ক্ষেত্রে যে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানই একমাত্র পথ, এ স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে সে বিশ্বাসই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ফিলিস্তিনকে শান্তি প্রক্রিয়ার শেষে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্পেন ও নরওয়ের পাশাপাশি এই পদক্ষেপ নিলাম শান্তির আশাকে বাঁচিয়ে রাখতে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উদ্দেশে হ্যারিস বলেন, ‘আমি আবারও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানাব বিশ্বের কথা শুনতে এবং গাজায় আমরা যা হতে দেখছি সে মানবিক বিপর্যয়কে বন্ধ করতে।’
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, আন্তর্জাতিক আদালত ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেসকে (আইডিএফ) দক্ষিণ গাজায় অভিযান থামানোর নির্দেশ দিয়েছে। তার ওপর নতুন করে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে তিন দেশের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি ইসরায়েলের ওপর কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করবে। সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমা দেশগুলোও অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাত্রা বৃদ্ধি করেছে।
স্পেন, নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড- তিন দেশই জানিয়েছে যে তারা ১৯৬৭ সালের যুদ্ধপূর্ব সীমান্তের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, যেটিতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন দুই দেশেরই রাজধানী হবে জেরুজালেম। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী স্যানচেজ জানিয়েছেন, দুই পক্ষ একমত না হলে সীমানা সংক্রান্ত আর কোনো পরিবর্তনকে স্বীকৃতি দেবে না মাদ্রিদ।
পশ্চিম তীরের প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার এই বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে।
এদিকে, ডেনমার্কের পার্লামেন্টে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি বিল উত্থাপিত হলেও তা পাস হয়নি। পরে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্বাধীন দেশ হওয়ার জরুরি শর্তগুলো পূরণ করতে পারেনি ফিলিস্তিন।
বিলটি প্রথম উত্থাপিত হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। চার বাম ঘরানার দল এটি উত্থাপন করে। সে সময় থেকেই এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলে আসছিল। মঙ্গলবার ভোট হয় বিলটি নিয়ে এবং তা ব্যর্থ হয়। সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, রয়টার্স
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত