ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : সাদিক অ্যাগ্রোতে বৃহস্পতিবার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। অভিযানে প্রতিষ্ঠানটির দুটি খামারের অবৈধ অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক যুবক গত ঈদুল আজহার আগে কোরবানির জন্য ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনে এ নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেওয়ার পর ভাইরাল হয়ে যান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় নানারকম সমালোচনা। প্রশ্ন ওঠে, কে এই ইফাত? এরপর কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে আসতে থাকে একের পর এক কেউটে সাপ। জানা যায়, ইফাতের বাবা এনবিআর সদস্য এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমান। অভিযোগ ওঠে, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি শত শত কোটি টাকা কামিয়েছেন। শুধু তাই নয়। বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে গেছেন তার দুই স্ত্রী ও সন্তানরাও। পাশাপাশি আলোচনা শুরু হয়, ইফাত যে খামার থেকে উচ্চমূল্যে ছাগলটি কিনেছিলেন, সেই সাদিক অ্যাগ্রো নিয়েও। এরপর জানা যায়, অবৈধভাবে জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে এই খামার। এর জেরেই গতকাল উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় সাদিক অ্যাগ্রোতে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় অবস্থিত সাদিক অ্যাগ্রোর দুটি খামারে উচ্ছেদ অভিযান চালায় ডিএনসিসি। দুটি খামারের একটি সাতমসজিদ হাউজিংয়ের ১ নম্বর সড়কের শেষে রামচন্দ্রপুর খালের পাড়ে। অন্যটি মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সড়কের পাশে নবীনগর হাউজিং এলাকার ৭ নম্বর সড়কের শুরুতে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার সময় ১৫ লাখ টাকার আলোচিত সেই ছাগলটি সরিয়ে নেওয়া হয় অন্যত্র।
ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদ সাতমসজিদ হাউজিং এলাকায় মাত্র পৌনে ৫ শতক জমি ভাড়া নিয়ে ২০ শতকের ওপর খামার গড়ে তুলেছিল সাদিক অ্যাগ্রো। প্রতিষ্ঠানটি রামচন্দ্রপুর খালের প্রায় ১৫ শতক জায়গা দখলে নিয়েছিল। আর বেড়িবাঁধ সড়কের পাশে নবীনগর হাউজিংয়ে সাদিক অ্যাগ্রোর খামারটি গড়ে তোলা হয়েছিল পুরোটাই অবৈধ জায়গায়। সিটি করপোরেশনের প্রায় ৩৩ শতক (এক বিঘা) জমিতে তৈরি করা হয়েছিল এই খামার।
দুপুর ১২টার পর প্রথমে সাদিক অ্যাগ্রোর সাতমসজিদ আবাসিক এলাকার খামারটির অবৈধ অংশ ভাঙার কাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন। খামারের পশ্চিম অংশ ভাঙা হয় প্রথমে। এ অংশের নিচতলায় ছিল সাদিক অ্যাগ্রোর কার্যালয়। আর ওপরে টিনের ছাউনি ও বেড়ার একটি রুমে থাকতেন খামারের কর্মচারীরা। স্থাপনাটি ভাঙার কাজ শুরু হলে দোতলার রুমে দুজন অবস্থান নিয়ে উচ্ছেদে বাধা দেন। পরে পুলিশ সদস্যদের সাহায্যে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে খামারের প্রায় ১০ ফুট অবৈধ অংশ ভাঙা হয়।
দুপুর দেড়টার পর সাদিক অ্যাগ্রোর সাতমসজিদ হাউজিংয়ের খামারের পেছনের অংশ ভাঙার কাজ শুরু করেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। এ সময় খামারটির পেছনের দিকে পুরোটাই ভেঙে ফেলা হয়। পেছনের দিকে সাদিক অ্যাগ্রোর খামারের জন্য ৫-১০ ফুট খালের জায়গা দখল করে রেখেছিল বলে জানান সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
এ ছাড়া সাদিক অ্যাগ্রোর খামারের পেছনের অংশেই খাল ভরাট করা জায়গায় রিকশার গ্যারেজ ও বস্তিঘরের মতো বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা ছিল। অভিযানে এগুলোর বেশ কয়েকটি গ্যারেজ ও বস্তিঘর উচ্ছেদ করা হয়। তবে উচ্ছেদ অভিযানের খবর পেয়ে খাল ভরাট করে বসানো বস্তিঘরের বাসিন্দারা ছাউনির টিন ও বাঁশ-কাঠ খুলে ফেলতে শুরু করেন। পরে বাঁশ ও খুঁটিগুলো ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় খালের পাড়ে অবৈধভাবে টিনের ছাউনি দিয়ে বানানো সাতমসজিদ ইউনিট আওয়ামী লীগের কার্যালয়ও ভাঙা হয়।
বেলা ১১টার পর বেড়িবাঁধ সড়কসংলগ্ন সাতমসজিদ আবাসিক এলাকায় অবস্থিত সাদিক অ্যাগ্রোতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বুলডোজার ও উচ্ছেদ অভিযানে ব্যবহৃত যান ও যন্ত্রপাতি নিয়ে হাজির হন ডিএনসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
প্রথমে ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদ সেখানে উপস্থিত হয়ে জানান- সীমানার বাইরে কিছু করা হবে না। তাই শুরুতে টিনশেড বাড়ি ভেঙে ফেলার পর বুলডোজার লাগানো হয় সাদেক এগ্রোর পশ্চিম পাশের ঘরে। সেটি ভেঙে দেওয়ার সময় বাড়ির মালিক আব্দুর রশিদ তালুকদারের ভাই কাগজ দেখিয়ে বলেন, আমাদের এখানে এর আগে দুইবার উচ্ছেদ হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোক এসে সীমানা প্রাচীর দিয়ে গেছে। সীমানা প্রাচীরের বাইরে আমাদের ঘর। তারপরও ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।
সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক গবাদিপশুর খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমার প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়েছে। গত বছর আমার কাছে সে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। আমি সেই টাকা দিইনি। এজন্য তার ক্ষোভ থাকতে পারে। তিনি বলেন, একটা ছাগল দিয়ে আমি দুর্নীতিবাজ চিহ্নিত করে দিলাম; এটাই কী আমার জন্য কাল হলো? আমি তো ভেবেছিলাম, এ জন্য সরকার আমাকে পুরস্কৃত করবে।
তিনি আরও বলেন, খালের জায়গা হলে উচ্ছেদ করবে এটা আমিও চাই। কিন্তু আমি যে জায়গায় ভাড়া ছিলাম সেটি খালের মধ্যে ছিল না। এরপরও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমার গরু-ছাগল আমি কোথায় রাখব? তাছাড়া বেড়িবাঁধ এলাকার নবীনগর হাউজিংয়ের ৭নং রোডের ১ নম্বর বাড়িটি আমার নিজের জায়গায় ছিল। সেখানে রাস্তার পাশের অংশ ভেঙে দিয়েছে। আমাকে কোনো নোটিশ করা হয়নি। আমি রবিবার মানহানি ও ক্ষতিপূরণ মামলা করব।
তবে এই উচ্ছেদ অভিযান কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নয় বলে দাবি করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই অভিযান চালানো হচ্ছে না। খালের জায়গা যে বা যারা দখল করে রেখেছে, তাদের উচ্ছেদে এ অভিযান চালানো হচ্ছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বিকাল সাড়ে চারটার পরে অভিযান শেষ হয়। এরপর ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, অভিযানে ৬০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে প্রায় ১০ বিঘা জমি উদ্ধার করা হয়। উচ্ছেদ করা মালামাল উন্মুক্ত নিলামে ৬৭ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। আগামী তিন দিন এই উচ্ছেদ কার্যক্রম চলবে।
উচ্ছেদ অভিযান দেখতে আসা স্থানীয় একাধিক অধিবাসীকে বলতে শোনা গেছে, এক ছাগলে মতিউরকে খেলো। আজ গিলে খেলো সাদিক অ্যাগ্রোকে।
সাদেক অ্যাগ্রোর পাশে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টিনশেড বস্তিঘরের ভেতরে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়। সেই বোর্ডে দেখা গেছে, সিএস/এসএ খতিয়ান নম্বর ১-এর ৬৯২ নম্বর দাগে ৫ দশমিক ৬৪০০ একর জায়গা, আরএস জরিপের ১ নম্বর খতিয়ানের ১৮৯৫ নম্বর দাগে ১ দশমিক ৪৩০০ একর এবং সিটি জরিপের ১ নম্বর খতিয়ানে ১১ হাজার ৪১২ নম্বর দাগের ১ দশমিক শূন্য ৯৪৬ একর জায়গাজুড়ে খাল দেখানো হয়েছে। এই খাল পারে রয়েছে ইউল্যাব ইউনিভার্সিটি। তাছাড়া খালের সীমানা পারে সুরের ধারা নামে একটি প্রতিষ্ঠানের টিনশেড পাকা বাড়ি রয়েছে। এই টিনশেড ঘরটিও খালের মধ্যে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত