আমার ছেলেকে পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলেছে,হত্যার বিচার কার কাছে চাইবো?


ইত্তেহাদ নিউজ,কুষ্টিয়া : সংসারের হাল ধরতে জীবিকার তাগিদে প্রায় ২০ বছর আগে রাজধানী ঢাকায় পাড়ি জমান কুষ্টিয়ার মো. আলমগীর শেখ। গত ৮ বছর ধরে ঢাকার রামপুরা এলাকায় হেলথকেয়ার ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেডের গাড়ির চালক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। এতে যা বেতন পেতেন, তা দিয়ে তার ছেলে মেয়ের পড়াশোনা, বাসা ভাড়াসহ সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন গাড়ি চালক আলমগীর। সেজন্য তিনি অবসরে অ্যাপস ভিত্তিক পাঠাও মোটরসাইকেল চালাতেন।
তবে গত ১৯ জুলাই বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন সময়ে রামপুরা বিটিভি ভবন এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার গুলিবিদ্ধ মরদেহটি গত রবিবার গ্রামের বাড়িতে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
আলমগীর কুমারখালীর উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কসবা গ্রামের মুদি দোকানি মো. ইজারুল হকের ছেলে। আলমগীর ৫ ভাইয়ের মধ্যে বড়। ময়নাতদন্ত ছাড়াই গত শনিবার গভীর রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়িতে লাশ পৌঁছে দেয় হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির লোকজন। আর গত রবিবার সকালে কসবা দাড়িগ্রাম সামাজিক কবরস্থানে মরদেহটি দাফন করা হয়। পরিবারে তার বাবাসহ বয়োজ্যেষ্ঠ মা আলেয়া খাতুন, স্ত্রী রিমা খাতুন (৩০), মেয়ে তুলি খাতুন (১১), ছেলে আব্দুল আওলাদ (৭) ও ছোট ভাই আজাদ হক (১৮) রয়েছেন।
স্বজনদের ভাষ্য, ১৯ জুলাই জুমার নামাজ শেষে স্ত্রীকে রান্নার কথা বলে রামপুরা এলাকায় নিজ কর্মস্থলের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন আলমগীর। সেদিন হেলিকপ্টার থেকে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে গুলি ছুঁড়ছিল, হেলিকপ্টার থেকে ছুঁড়া তিনটি গুলি এসে লাগে আলমগীরের শরীরে। এতে তিনি আহত হন।স্বজনরা জানায়, আহত আলমগীরকে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যান তার কোম্পানির সহকর্মীরা। তবে চলমান পরিস্থিতিতে সেদিন হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক ছিল না। ফলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। পর হাসপাতাল থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স করে গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। গ্রামে স্বজনরা সামাজিকভাবে দাফন করেন মরদেহটি।
অপরদিকে ঘটনার প্রায় সপ্তাহখানেক পার হলেও কান্না থামেনি সন্তান হারা মায়ের। বাড়িতে কেউ আসলেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তিনি। আলমগীরকে হারিয়ে অসহায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে স্ত্রী, সন্তান ও ভাই। শুক্রবার (২৬) জুলাই সকালে সরেজমিন গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়।
এ সময় কাঁদতে কাঁদতে মা আলেয়া খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে খুব ভাল এবং নামাজি ছিল। গুলি খেয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে সহকর্মীরা। হেলিকপ্টার থেকে পুলিশ তিনটি গুলি করে ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আমার বেটাতো আর ফিরে আসবে না। এখন ওর বউ ছোয়ালপাল (ছেলে, মেয়ে) দেখবি কিডা? বাড়িছাড়া জাগা জমি বলতে কিচ্ছু নাই। কীভাবে চলবে ওর সংসার? সরকার যদি একটু দেখতে তবে গা বাঁচতাম।’
স্ত্রী রিমা খাতুন বলেন, চাকরির টাকায় সংসার চলতো না। সেজন্য ও ( স্বামী) অবসরে পাঠাও মোটরবাইক চালাতো। এখনতো সব শেষ। শ্বশুর, শাশুড়ি, ছেলে, মেয়ে নিয়ে কি করে খাব? এই ভেবে দিশেহারা তিনি। কোম্পানি ও সরকারের কাছে সহযোগীতা প্রত্যাশা তার।
ছোট ভাই আজাদ হক জানান, বন্ধুরা ভাইকে হাসপাতালে নিলেও ডাক্তার ছিলো না। চিকিৎসা পায়নি। শরীর থেকে গুলিও বের করা হয়নি। গুলিসহ ভাইকে কবর দেওয়া হয়েছে।বাবা ইজারুল হক বলেন, আমি বুড়ো মানুষ। বড় ছেলেই ছিল সকলের ভরসা। ঘরের সাথে ছোট দোকানে তেমন বেচাকেনা হয় না। খুব দুশ্চিন্তায় আছি পরিবার নিয়ে। আর ছেলে হত্যার বিচার কার কাছে চাইবো?
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্থ স্বজনদের খোঁজখবর নেওয়াসহ তালিকা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে কোনো নির্দেশনা আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়