হারুনের ভাতের হোটেল সুপরিচিত নাম


ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : পদোন্নতি পেয়ে ২০২২ সালের ১২ জুন ডিএমপির ডিবি প্রধান হিসেবে যোগদান করেন আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ। এ পদে ছিলেন প্রায় দুই বছর এক মাস। এর মধ্যে অনেক সমালোচনারও জন্ম দিয়েছেন তিনি। অবশেষে তার ভাত কাণ্ড নিয়ে আদালতের উষ্মা প্রকাশের পর তাকে সরিয়ে দেওয়া হলো ডিএমপির গুরুত্বপূর্ণ এ পদ থেকে। সংযুক্ত করা হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) হিসেবে। প্রশ্ন উঠেছে ভাতকাণ্ডেই কি বদলি হতে হলো হারুনকে?
কেউ কেউ বলছেন ডিবি প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালন করতে গিয়ে অনেক রাজনৈতিক নেতা, সেলিব্রেটি ও ছাত্রনেতাদেরকে নিজ অফিসে নিয়ে ভাত খাইয়েছেন। আবার সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশও করেছেন। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচিত সমালোচিতও ছিলেন তিনি। কেউ কেউ এক কদম এগিয়ে রসিকতার ছলে ডিবি অফিসের সেই ডাইনিং রুমকে ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ বলে মন্তব্য করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি একটি সুপরিচিত নামও ছিল।
ভাতের হোটেল নামটি প্রথম আলোচনায় আসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ভাত খাওয়ানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করার পর। গত বছর ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের সঙ্গে খাবার খান গয়েশ্বর। হাসিমুখে ডিবি প্রধানের সঙ্গে তার খাবার খাওয়ার ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়।
বিএনপি নেতা নিতাই রায় চৌধুরীকেও মধ্যাহ্নভোজ করিয়েছন ডিবি প্রধান। গত বছর ২৯ আগস্ট ব্যক্তিগত কাজে ডিবি কার্যালয়ে গেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীকে দুপুরের খাবার খাওয়ান ডিবি প্রধান হারুন।
ডিবি কার্যালয়ে ভাত খেয়েছেন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমও। গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর ডিবি কার্যালয়ে ভাত খেয়েছেন তিনি।
সমঝোতার পর ডিবি অফিসে খাবার খেয়েছেন অপু বিশ্বাস ও গানবাংলা টিভির সিইও কৌশিক হোসেন তাপস। গত বছর ১৯ ডিসেম্বর সমঝোতার পর ডিবি অফিসে হারুনের সঙ্গে খাবার খান তারা।
সাবেক বিএনপি নেতা (বর্তমানে আওয়ামী লীগ) শাহজাহান ওমরও ভাত খেয়েছেন সেখানে । গত বছর ৬ ডিসেম্বর হারুনের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন তিনি।
ডিবি অফিসে মধ্যাহ্নভোজ করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানও। গত বছর ২৯ নভেম্বর দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে মধ্যাহ্নভোজ করেন তিনি।
সর্বশেষ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে ভাত খাইয়ে তোপের মুখে পড়েছেন হারুন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে তাদেরকে খাওয়ানোর ছবি প্রকাশ করাকে জাতির সঙ্গে ‘মশকরা’ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজত থেকে মুক্তির ব্যাপারে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা।
সোমবার (২৯ জুলাই) রিটের শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত হারুনকে উদ্দেশ্য করে ওই মন্তব্য করেন।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মেহেদী হাসান চৌধুরী আদালতকে বলেন, আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা দিতে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। টিভিতে দেখানো হয়েছে তাদেরকে লাঞ্চ করানো হচ্ছে। তারা ডিবি কার্যালয়ে কাঁটা-চামচ দিয়ে খাচ্ছেন এই ছবি প্রকাশ হয়েছে।
এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, ‘জাতিকে নিয়ে মশকরা করবেন না।’
আর তাতেই সর্বনাশ হলো হারুন অর রশিদের। পদ হারালেন হারুন। রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিদের মতে ভাতকাণ্ডের কারণেই তার ইতি ঘটল ডিবি প্রধান কর্মজীবনের।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়