বাংলাদেশ ফিচার বরিশাল

বরগুনায় কান্না থামছে না তিন শিশুর, অকূল পাথারে টিটুর স্ত্রী

image 833261 1722622234
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,বরগুনা : চার মাসের ছোট্ট তামান্না জানে না বাবা আর কোনোদিন ফিরবে না। পরম স্নেহে কোলে নিয়ে তাকে কখনো আর আদর করতে পারবে না। চির নিদ্রায় পুকুর পাড়ে শুয়ে আছেন তামান্নার বাবা টিটু। তামান্নার মতোই নিষ্পাপ তার ১০ বছরের বোন তানজিলা ও ৭ বছরের ভাই সাইমুন। তানজিলা ও সাইমুন কিছুটা বুঝতে পারে বাবার সঙ্গে আর কখনোই দেখা হবে না। কিন্তু ওদের অবুঝ মন মানে না কিছুতেই। তাই সারাক্ষণ তারা বাবাকেই খুঁজতে থাকে।

এদিকে স্বামী হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন এই তিন সন্তানের মা আয়েশা বেগম। একদিকে স্বামী হারানোর শোক। অন্যদিকে দারিদ্র্য তাকে আঁকড়ে ধরেছে। সন্তানদের তিন বেলার খাবার জোগাড় করতেই এখন তাকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। আর্থিক সংকট আর সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি এখন দিশেহারা।

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন ১৯ জুলাই ধানমন্ডিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান গ্রীন লাইফ হাসপাতালের এক চিকিৎসকের ব্যক্তিগত গাড়িচালক মো. টিটু হাওলাদার (৩৫)। তিনি বরগুনার বেতাগীর হোসনবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ হোসনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহিম হাওলাদারের ছেলে।

আয়েশা বেগম জানান, টিটু হাওলাদার ১১ জুলাই বাড়ি থেকে কর্মস্থল ঢাকায় যান। এর ৮ দিন পর ঢাকা থেকে খবর আসে সে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

আয়েশা বেগম বলেন, আমার স্বামী খেটে খাওয়া মানুষ ছিলেন। তিনি তো আন্দোলন করেননি। তারপরেও বিনা অপরাধে তাকে জীবন দিতে হলো। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে বাবা বাবা বলে দিনরাত কান্নাকাটি করছে। ওদের কান্না কিছুতেই থামাতে পারছি না। শুধু বাবাকেই খুঁজছে। আমি এই অবুঝ সন্তানদের কী দিয়ে বুঝ দেব। সন্তানদের খাওয়ার মতো আমার ঘরে কিছু নেই। এ কদিন মানুষ খাবার দিয়েছে। কতদিন মানুষ খাবার দেবে। ছোট তিনটি সন্তান নিয়ে আমি পরের বাড়িতে কাজও করতে পারছি না। কে আমাদের দেখবে। আমি কার কাছে আশ্রয় পাব।

আয়শা বলেন, ‘উনি ঢাকায় যাওয়ার সময়ও ঘরে কোনো টাকা রেখে যেতে পারেরনি। অভাব-অনটনেই চলত আমাদের সংসার। এর মধ্যে মানুষটা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল। আমি এখন কীভাবে সন্তানদের বড় করব, আর কিভাবে খাবার জোগাড় করব।

আয়েশা বেগমের বড় মেয়ে তানজিলা বাড়ির কাছেই আনোর জলিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে সাইমুন স্থানীয় বয়াতি বাড়ি কওমি মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্র।

মৃত্যুর ২ দিন পর ২১ জুলাই রাতে টিটুর ফুফাতো ভাই মো. রাকিব লাশ নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে আসেন। সেই রাতেই জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে টিটুর লাশ দাফন করা হয়।

রাকিব বলেন, টিটু ভাইয়ের লাশ আনার মতো টাকাও ওদের কাছে ছিল না। ঢাকা থেকে লাশ বাড়িতে আনতে ৪৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে আমি ২৭ হাজার টাকা দিয়েছি। টিটু ভাইয়ের শ্যালক হাসান ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। সরকারের উচিত ছিল পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো। প্রধানমন্ত্রী টিটু ভাইয়ের পরিবারের পাশে থাকলে পরিবারটি খেয়ে-পরে বাঁচতে পারবে।

টিটুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সন্তানের কবরের পাশে বসে বৃদ্ধ বাবা আব্দুর রহিম হাওলাদার কাঁদছেন। তিনি বলেন, এবারে আমার ছেলে ঢাকায় যাওয়ার সময় বলেছিল, বাবা ওদের দেখে রাখবেন। এখন আমার সারা জীবন রিকশা চালিয়ে পরিবার দেখতে হবে। এই ছিল আমার কপালে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মাসুদ জানান, টিটু হাওলাদারের রিকশাচালক বাবা আব্দুর রহিম হাওলাদার এখন বয়সের ভারে তেমন রোজগার করতে পারেন না। টিটুর আরেক ভাই ইমরান হোসেনও রিকশা চালিয়ে সংসার চালায়। ছোট বোন ফাতিমা আক্তার (১৮) প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাদের সঙ্গেই থাকেন। অন্য বোন রুমেনা বেগম (৩৫) থাকেন স্বামীর সংসারে।

বেতাগী উপজেলার চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান খান বলেন, পরিবারটি খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে। আমার সাধ্যমতো তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব। তবে সরকারি ভাবে যদি পরিবারটির দায়িত্ব নেওয়া হয়, তাহলে টিটুর স্ত্রীর, ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে বেঁচে থাকার একটা উপায় হবে।

 

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *