বিজয়ের উল্লাস,স্লোগানে দ্রোহের আগুন


ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : যতদূর চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে তারা হেঁটেছেন মাইলের পর মাইল। অনেকের কণ্ঠে বিজয়ের উল্লাস, কারও কারও স্লোগানে দ্রোহের আগুন। মুক্ত বাতাসে গলা উঁচু করে শব্দ করার আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তারা।
গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে ভোলেননি আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, সহপাঠী-শিক্ষার্থীরা। এসেছিলেন স্বজনরাও। সবার দাবি-যারা নির্মমভাবে গুলি করেছে, ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে, দ্রুত তাদের বিচার করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে লাখো কণ্ঠে ছিল সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ়তা। যাদের রক্তের বিনিময়ে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে, মুক্তির স্বাদ মিলেছে তাদের প্রতি লাল সালাম ধ্বনিত হয় জনসমুদ্র থেকে।
বৃহস্পতিবার ছিল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির এক মাস পূর্তি। এ উপলক্ষ্যে গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সারা দেশে ‘শহিদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিকাল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে ‘শহিদি মার্চ’ শুরু হয়। এ কর্মসূচি থেকে দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা, শহিদ পরিবারদের আর্থিক ও আইনি সহযোগিতাসহ ৫ দফা দাবি জনানো হয়।
কর্মসূচি থেকে সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। আর এজন্য আমাদের অনেক ভাই শহিদ হয়েছেন। তাদের স্মরণে আজ আমাদের এই শহিদি মার্চ। শহিদদের স্মরণ করে একটি কথাই বলতে চাই, যেই স্পিরিটকে ধারণ করে আমরা রক্তের ওপর দিয়ে লড়াই করেছি। সেই স্পিরিটকে ধারণ করার জন্য, বজায় রাখার জন্য আবারও জীবন দিতে প্রস্তুত থাকব।
আমরা আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট বলে দিতে চাই, হাসিনার মতো কোনো ফ্যাসিস্ট যদি আগামীতেও এই বাংলাদেশে জেঁকে বসার ন্যূনতম চেষ্টা করে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা নতুন রূপ ধারণ করে আসা ফ্যাসিস্টদের রুখে দেবে। আজকে লক্ষাধিক ছাত্র-জনতার এই জনস্রোত প্রমাণ করে শহিদদের রক্তে রঞ্জিত অভ্যুত্থান বৃথা যেতে পারে না।
এদিকে লাখো ছাত্র-জনতার ‘শহিদি মার্চ’-এর এই মিছিল ছিল উচ্ছ্বাসে ভরা। এ যেন মুক্ত-স্বাধীন ও ভয়-শঙ্কাহীন নিরাপদ জীবন। বিগত বছরগুলোতে যা ছিল কল্পনাতীত। আনন্দভরা এই মিছিলে ছিল বিরহের সুর। নিহত ও আহত সতীর্থদের না ভোলার শপথ নেন তারা।
মার্চ শেষে শহিদ মিনারে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর শহিদি মার্চ কর্মসূচি থেকে ৫টি দাবি জানাচ্ছি। এর মধ্যে রয়েছে-১. গণহত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে, ২. শহিদ পরিবারদের আর্থিক ও আইনি সহযোগিতা দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে হবে, ৩. প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টদের দোসরদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে, ৪. গণভবনকে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণা করতে হবে এবং ৫. রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করতে হবে।
শহিদি মার্চে উপস্থিত ছাত্র-জনতা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ছাত্র-জনতার এই গণঅভ্যুত্থান সাত শতাধিক মানুষের প্রাণের বিনিময়ে এবং সহস্রাধিক মানুষের আহতের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে। এই যে এতগুলো মানুষের আত্মত্যাগ তাদের স্মরণে আজকের এই কর্মসূচি। নিহত ও আহতদের যাতে কেউ ভুলে না যায়, সেই ঐতিহাসিক সময়টি মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতেই এই শহিদি মার্চ। এই হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তাদের বিচারের দাবিতে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
এর আগে দুপুর আড়াইটা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকেন। তাদের বেশির ভাগের হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দেখা গেছে। মার্চটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, কলাবাগান, ধানমন্ডি, সংসদ ভবন, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, শাহবাগ হয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শেষ হয়।
এ সময় তারা ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘শহিদদের স্মরণে, ভয় করি না মরণে’, ‘শহিদদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন ভারতে’, ‘সরকার কী করে, হাসিনা ভারতে’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। অনেকে মিছিলের শুরুটা দেখেছেন কিন্তু জানেন না মিছিলের শেষটা কোথায়। এ সময় লোকে লোকারণ্য শহিদ মিনার প্রকম্পিত হয় স্লোগানে-স্লোগানে। ঠিক যেভাবে প্রকম্পিত হয়েছে এক মাস আগে-আজকের দিনে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়