ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : রাষ্ট্র মেরামতে ঘোষিত ৩১ দফা শুধু কথার কথা নয়; এর বাস্তবায়ন চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলীয় বিভিন্ন ফোরামে দলের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টির পক্ষে ব্যাখ্যা প্রদানসহ দলের অবস্থান তুলে ধরছেন। গত কয়েক দিন ধরে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এ বিষয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তারেক রহমানের বক্তব্যের পর বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।বিএনপি নেতারা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল,সেই রাষ্ট্রের মালিকানা তাদের হাতে নেই। পতিত শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। এই রাষ্ট্রকে মেরামত ও পুনর্গঠন করতে হলে ৩১ দফা বাস্তবায়ন ধাপে ধাপে করতে হবে।
সর্বশেষ গত বুধবার ঢাকা বিভাগের তৃণমূল পর্যায়ের মতবিনিময় সভায় তারেক রহমান জনগণের সমর্থন নিয়ে জাতীয় সরকার ব্যবস্থায় দেশ পরিচালনা এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত করাসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে ইতিবাচক বক্তব্য দেন। এর আগে অন্যান্য বিভাগের মতবিনিময় সভায় একজন দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়Ñ এমন বক্তব্য রাখেন তিনি।
গত বুধবার মতবিনিময় সভায় যুক্ত ছিলেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায়। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে গত বছর আন্দোলন চলাকালে রাষ্ট্র সংস্কারে প্রথমে ২৭ দফা এবং পরে ৩১ দফা ঘোষণা করা হয়। তখন অনেকেরই ধারণা ছিল এটা হয়তো কথার কথা। কিন্তু ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর আমি এক নতুন তারেক রহমানকে দেখতে পেলাম। দেশে জিয়া পরিবারের মতো এত নির্যাতিত আর কোনো পরিবার আছে বলে জানা নেই। সেই অবস্থায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাকর্মীদের সব ধরনের প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে শান্তির ডাক দেন। তার বক্তব্যে নেতাকর্মীরা মুহূর্তের মধ্যে শান্ত হয়েছেন। আর কোনো ফ্যাসিবাদ রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে দখল করতে না পারে, সেজন্য রাষ্ট্র সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বক্তব্য দেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় কূটনৈতিক মহলে। অনেক দেশ ও সংস্থার কূটনীতিকরা গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কূটনীতিকরা বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও দলের অবস্থান সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। এ সব বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা বলেন, দল ঘোষিত ৩১ দফার ওপর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে বিএনপির বর্তমান অবস্থান জানানো হয়েছে। অনেক দেশই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে জানার আগ্রহ দেখিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা দেখিয়ে তার সঙ্গে কাজ করারও আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
৫ আগস্টের পর বিদেশিসহ সব মহলে বিএনপির গুরুত্ব বেড়েছে কি না- জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি একটি বিশাল দল। সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। বিএনপি অতীতে ক্ষমতায় ছিল। সুতরাং নির্বাচন যখন আসবে, তখন বিএনপির গুরুত্ব তো অবশ্যই বাড়বে।
বিএনপির ৩১ দফা ও রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে তারেক রহমানের বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেন, তারেক রহমান জাতীয় সরকার বা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সরকারের কথা বলেছেন। এই ৩১ দফা বাস্তবায়ন করতে হলে নেতাকর্মীদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা তো অনেক দিন ধরেই অনেকে দাবি জানিয়ে আসছেন। এটা তো ভালো দাবি। অনেকেই সংস্কারের কথা বলে আসছেন। বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে উচ্চকক্ষসহ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং জাতীয় সরকারের কথা বলেছে। এটা ভালো বিষয়। কারণ তারেক রহমান যা বলেছেন, সেখানে তো তার দলের কোনো স্বার্থ আছে বলে আমার মনে হয় না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে জয়ী হলে তাদের আধিপত্য বিস্তারের সম্ভাবনা থাকে। উচ্চকক্ষ থাকলে সেই সুযোগটা কমে যাবে। অন্যদিকে জাতীয় সরকার থাকলে যারা শাসন করতে চায়, তারা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সংস্কার করবেন, কাজ করবেন। এটাও ভালো বিষয়।
৩১ দফার মধ্যে উল্লেখযোগ্য : ৩১ দফার উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে- সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সমন্বয় করা এবং পর পর দুই বারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন না করার বিধান। বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ-জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সংসদে ‘উচ্চকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা’ প্রবর্তন করা হবে।
আস্থা ভোট, অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধনী বিল ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত, এমন সব বিষয় ছাড়া অন্য সব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও বিশিষ্টজনের মতের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে বর্তমান ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ সংশোধন করা হবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নূরুল আমীন বেপারি বলেন, বিএনপি ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারে যে ৩১ দফা দিয়েছেন, সেটি অত্যন্ত সময়োপযোগী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য দলের ভেতর গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। দুর্নীতি বন্ধ করা না গেলে, দলের নেতাকর্মীদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে, তারেক রহমানের এই সংস্কার চিন্তা সুফল পাবে না। বিএনপির রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এ কথা সত্য যে, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি জনগণের বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসবে। সুতারং, সেভাবেই এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত