বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু,বোমা-মর্টারশেলের শব্দে কাঁপছে সীমান্তের বাড়িঘর


ইত্তেহাদ নিউজ,কক্সবাজার : মিয়ানমারের মংডু শহরে দেশটির সামরিক বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে আবারও তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়েছে। শনিবার রাত থেকে আজ রবিবার ভোর পর্যন্ত বোমা ও মর্টারশেলের শব্দে কেঁপেছে টেকনাফের বাড়িঘর। স্থলপথের পাশাপাশি আকাশপথেও হামলা চালাচ্ছে জান্তা বাহিনী। রবিবার টেকনাফের সীমান্ত এলাকাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাত থেকে স্থানীয়রা আতঙ্কে রয়েছেন। কেউ সীমান্তের কাছাকাছি যাওয়ার সাহস করছেন না।
সীমান্তের বাসিন্দা আব্দুল হক বলেন, ‘রাতভর মংডুতে তুমুল যুদ্ধ হওয়ায় শব্দে আমরা সীমান্তের মানুষ ঘুমাতে পারেনি। অনেকের ঘরের বাইরে রাত কেটেছে। একটু পরপরই বিকট গুলির শব্দে সীমান্ত কেঁপে ওঠে। ভয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। রাতের মতো এমন গুলির শব্দ আগে কখনও শুনিনি। এ পরিস্থিতিতে যেকোনো মুহূর্তে সীমান্তে আবারও অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।’
টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ার ফরিদ আলম বলেন, ওপারে গোলার শব্দে রাতভর নির্ঘুম কেটেছে। শনিবার সারা রাত গোলাগুলি চলছে ওপারে। তাই আমরা রাত জেগে বসেছিলাম। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ভয়ে ছিল। মিয়ানমারে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জানান, গত বছর থেকে জান্তা সরকার ও আরকান আর্মির যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের কারণে মংডুর সুইজা, সিকদারপাড়া, হারিপাড়া, ফয়েজিপাড়া, উকিয়পাড়া, নাইটডেইল, নোয়াপাড়া, এতিল্লাপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের লোক পালিয়ে গেছে।
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান ও সংঘাতের ফলে আবারও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হয়েছে। এতে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সীমান্ত এলাকায়। টানা সংঘর্ষের ফলে কৌশলে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা। এসব অনুপ্রবেশকারীর বেশির ভাগই আশ্রয় নিচ্ছে উখিয়া-টেকনাফে অবস্থিত আশ্রয় শিবিরগুলোতে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত মিয়ানমারে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে হাজারো রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে। বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা।এছাড়া গত কয়েক মাসে আরও প্রায় আট হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। গত মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
এদিকে, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে স্থানীয়দের নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। অনিরাপদ হয়ে উঠেছে উখিয়া-টেকনাফের জনপদ। এসব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের কারণে প্রতিনিয়ত খুন, গুম, ধর্ষণ ও অপহরণের ঘটনা ঘটছে।
টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সীমান্তে আগের তুলনায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা অনেকটা কমেছে। মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ার কারণে বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সে দেশে চলমান যুদ্ধের কারণে সীমান্তে বিকট ভেসে আসছে। সীমান্তে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা আমরা প্রতিহত করছি। একটি বড় সংখ্যক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের যে খবর বলা হচ্ছে, সেটি মনগড়া। সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকানোর পাশাপাশি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন। এছাড়া সীমান্ত পেরিয়ে যাতে কোনো অপরাধী পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আবারও বিস্ফোরণের বিজট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার রয়েছে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়