বরিশালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা থেকে খালাস পেলেন সাংবাদিক নোমানী


বরিশাল অফিস: বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক শাহনামার প্রধান বার্তা সম্পাদক,দৈনিক বাংলারবনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজের বাংলাদেশ ব্যুরো প্রধান, দৈনিক বিজনেস বাংলাদেশ,ডেইলী আপডেট দৈনিক দেশবাংলা,দেশের ডাকের বরিশাল অফিস প্রধান,বরিশাল খবরের সম্পাদক ও প্রকাশক,বরিশাল মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের যুগ্ন সম্পাদক,বরিশাল অনলাইন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি, বাংলাদেশ সাংবাদিক কমিউনিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য , গনমাধ্যম সংগঠক, সিনিয়র সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানী,দপদপিয়ার ইউপি সদস্য কামরুল হহাসান ও ড্রাইভার লাবলু গাজী বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনাল থেকে সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর নির্দেশে সন্ত্রাসী সাইয়েদ আহমেদ মান্নার দেয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় খালাস পেয়েছেন।
২৩ অক্টোবর দুপুরে সরকার পক্ষ ও বিবাদী পক্ষের দোতরফা শুনানী শেষে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ গোলাম ফারুক মামলা থেকে বেকসুর খালাসের আদেশ প্রদান করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারি নাজমুল হাসান।
বিবাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড,খান মাসুম বলেন, আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ বাদী ও স্বাক্ষী হাজির করতে পারেন নি এবং বিবাদীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা প্রমান করতে পারেনি বিধায় আদালত বিবাদের বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
আরও পড়ুন:
Bangladeshi journalist Mamunur Rashid Nomani harassed following 2020 assault, detention
বরিশালে বৃষ্টি হলেই নবগ্রাম রোড থাকে পানির নীচে শীর্ষক শিরোনামের সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত সাড়ে দশটার দিকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের বরিশাল মহানগর কমিটির সাধারন সম্পাদক ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নির্দেশে আওয়ামীলীগ নেতা সাইয়েদ আহমেদ মান্না ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেয় সাংবাদিক নোমানীকে। আদালতে নির্যাতিত -নিপিড়িত তাকে আদালতে উপাস্থাপন না করেই কারাগারে পাঠানো হয়। আইনী লড়াই করে ১৪ দিন কারাভোগ করে জামিনে মুক্ত হোন। সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানী।দুর্নীতি অনিয়ম ও মানবাধিকার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছেন অসংখ্য। নোমানী একজন পেশাদার সাহসী সাংবাদিক। তার সংবাদের কারনে দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীরা থাকে আতংকে। এছাড়া মাদক বিরোধী সংবাদের কারনে মাদক বিক্রেতাদের কাছে শত্রু সাংবাদিক হিসেবে নোমানী পরিচিত। ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত সাড়ে দশটার দিকে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ক্ষমতাশীন দল আওয়ামীলীগ এর বরিশাল মহানগর শাখার সাধারন সম্পাদক ও বরিশাল সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর হাতে নির্যাতিত হন সাংবাদিক নোমানী। বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর নির্দেশে বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগ এর সাংগঠনিক সম্পাদক ও ২১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্না,ছাত্রলীগ ক্যাডার রইস আহমেদ মান্না,আতিকুল্লাহ মুনীম,রাজিব,মিলনসহ প্রায় ৮ /৯ জনের একটি সন্ত্রাসী দল মামুনুর রশীদ নোমানীকে প্রথমে লোহার রড দিয়ে বাম হাত ভেঙ্গে দেয়। এ সময় তারা বলে ওবেশী আমাদের বিরুদ্ধে নিউজ করে।নোমানীকে উদ্দেশ্য করে সাদিক আবদুল্লাহ তখন বলে আমার বিরুদ্ধে কেন সংবাদ লেখো। এখন তোর হাত পা ভেঙ্গে দিলাম। পরে সাদিক আবদুল্লাহ শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্নাকে নির্দেশ প্রদান করে নোমানীর হাত পা ভেঙ্গে দেয়ার জন্য। মেয়র সাদিকের নির্দেশমত সাইয়েদ আহম্মেদ মান্না নদীর পাড়ে থাকা তার প্রাইভেট কার থেকে লোহার রড এনে নোমানীর হাত ,পায়ে ও পিঠে লোহার রড দিয়ে পিটিয়েছে। লোহার রড দিয়ে পিটানোর কারনে নোমানীর বাম হাতের দ্বিতীয়,চতুর্থ ও পঞ্চম আঙ্গুল ভেঙ্গে যায়। এলোপাতাড়ি পিটানোর কারনে হামলার স্থানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে নোমানী। এ সময় ঐসব ক্যাডারদের হাতে একে -৪৭সহ আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।হামলার ঘটনা ১২ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে দশটার সময়। থানায় নিয়ে রাত ১টা ৩৫ মিনিটে মামলা রেকর্ড করে। ঘটনার সময় দেয়া হয় রাত ১ টা ৩৫ মিনিট। মামলায় সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানীর বিরুদ্ধে মেয়রের ছবি তোলার অভিযোগ এনে সন্ত্রাসী মান্না বহুল বিতর্কিত ও সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬(২) ও ৩৩ (২) ধারায় মামলা দায়ের করে।
সাংবাদিক নোমানীর বিরুদ্ধে কাউন্সিলর সাইদ আহমেদ মান্না বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় ২০১৮ সনের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ (২ ) ও ৩৩ (২) ধারার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। বরিশাল কোতয়ালী থানার মামলা নং – ৩৯,জি আর মামলা নং-৫৭৪/২০২০,জেলা জজ আদালত এর মোকাদ্দমা নং -১৩০৭/২০২০।সাইবার ট্রাইব্যুনালের মামলা নং-৬৯/২০২২।
আরও পড়ুন:
One of the tortured journalist is Mamunur Rashid Nomani
বরিশাল জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করা হলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করেন। সাংবাদিক নোমানীর পক্ষে তার পরিবারের সদস্যরা বরিশাল জেলা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করলে ২৯ সেপ্টেম্বর ‘২০২০ তারিখ জেলা জজ জামিন মঞ্জুর করেন। মামলাটি সাইবার ট্রাইব্যুনালে আসলে দীর্ঘদিন পর ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ও ২৩ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ দুদিন শুনানী করেন বিবাদী পক্ষের আইনজীবীগন।
আরও পড়ুন:
Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act
সাংবাদিক নোমানী সন্ত্রাসীদের হুমকির লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন একাধিকবার। ২০১১ সালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কালে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সাংবাদিক নোমানীর ওপর হামলা করে এতে গুরুতর আহত হোন সাংবাদিক নোমানী।
সাংবাদিক নোমানীর ওপর নির্যাতন এবং মামলা দিয়ে গ্রেপ্তারের নিন্দা ও মুক্তির দাবীতে ১৪ সেপ্টেম্বর’২০ তারিখ থেকে ধারাবাহিকভাবে ঢাকাস্থ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সম্মিলিত সাংবাদিক পরিষদ,বাংলাদেশ অনলাইন সাংবাদিক কল্যান ইউনিয়ন,জাতীয় মানবাধিকার সমিতি,বাংলাদেশ অনলাইন জার্নালিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ অসংখ্য গনমাধ্যম ও সামাজিক সংগঠন মানববন্ধন ও বিবৃতি প্রদান করেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লাবলু জানান,মেয়র সাদিকের নির্দেশ পেয়েই সন্ত্রাসী মান্না নোমানীর হাত ,পায়ে ও পিঠে লোহার রড দিয়ে পিটিয়েছে।এতে ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারায় সে। গনমাধ্যম বিষয়ক বিভিন্ন দেশী ও বিদেশী মানবাধিকার ও গনমাধ্যম সংগঠন সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে মিথ্যা অভিযোগ খারিজ করার জন্য, তার চিকিৎসার খরচের দায়ভার গ্রহণ করার জন্য এবং তাকে কার্যকর সুরক্ষা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছিল। সাংবাদিক নোমানীর ওপরে ক্যাডারদের হামলা,মামলা ও গ্রেপ্তারের নিন্দা ও মুক্তিসহ মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছিল বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। সাংবাদিক নোমানীর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য সিপেজে এবং আর্টিকেল ১৯ ও মিডিয়া ডিফেন্স সহযোগীতা করেছিল। মামলা থেকে খালাম পাওয়ার পর, সাংবাদিক নোমানী স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি খোদার দরবারে। আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি।
সাংবাদিক নোমানীর পক্ষে মামলার শুনানী করে প্রথম দফায় এ্যাড.কাজী মনিরুল হাসান ও তার এ্যসোসিয়েট সদস্যরা।দ্বিতীয় দিনে শুনানী কালে বরিশাল বারের বিশিষ্ট আইনজীবী এ্যাড.মুহাম্মদ শাহে আলম,এ্যাড,মুনসুর হাল্লাজ,এ্যাড,মাহবুবুল হাসান জুয়েল,এ্যাড,জাকির হোসেন,এ্যাড.খান মাসুম,এ্যাড.খান মোকাররম,এ্যাড.সাইদুল ইসলাম প্রমুখ।রাষ্ট্র পক্ষে এপিপি এ্যাড.ইশতিয়াক আহমেদ রুবেল উপস্থিত ছিলেন।
নোমানীর আইনজীবী এ্যাড,খান মাসুম বলেন,তদন্ত রিপোর্টটি মামলার হুবহু কপি মাত্র। বাদী প্রতিপক্ষের আনীত অভিযোগ এর সত্যতা সম্পর্কে ফরেনসিক প্রতিবেদনে কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া সাংবাদিক নোমানীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৬ (২) /৩৩ (২) ধারার কোন উপাদান বিদ্যমান নাই।জেনে শুনে বুঝে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা সম্পুর্ন মিথ্যা,বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেছেন। সাংবাদিক নোমানী সম্পুর্ন নির্দোষ,নিরাপরাধ। শুধুমাত্র হয়রানী, আর্থিক ক্ষতি সাধন ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই হয়রানীর জন্য মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
One of the tortured journalists is Mamunur Rashid Nomani. Attack on the orders of former Barisal City Mayor
উল্লেখ্য,২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি ধারণ করার কথিত অভিযোগে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘বরিশাল খবর’–এর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী, ইউপি সদস্য কামরুল মৃধা ও গাড়ির ড্রাইভার লাবু গাজীকে পুলিশ আটক করে।
এক নজরে মামলার সংক্ষিপ্ত বর্ননা :
ভিক্টিমের নামঃ মামুনুর রশীদ নোমানী,কামরুল হাসান,লাভলু গাজী।
ডিএসএ এর অধীনে দায়েরকৃত মামলার সংখ্যাঃ ১।
মামলার বাদিঃ আওয়ামীলীগ এর বরিশাল মহানগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ২১ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সাইয়েদ আহমেদ মান্না।
গ্রেফতারের তারিখ ও স্থানঃ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০,ত্রিশ গোডাউণ এলাকা,বরিশাল।
মামলা নম্বর ও তারিখঃ ৬৯/২০২২,
মামলার ধারাঃ ডিএসএ ২৬ (২ ) ও ৩৩ (২),
থানাঃ বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানা।
হামলার ধরন : রড দিয়ে পিটিয়ে বাম হাতের তিনটি আঙ্গুলে ভেঙ্গে দেয়া। হামলার পরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে মামলা দায়ের।
কেন হামলা ও মামলা : বরিশাল এর সিটির সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর নির্দেশে ও তার উপস্থিতিতে আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগ ক্যাডাররা নিউজ করার কারনে হামলা করে পুলিশে সোপর্দ করে ১২ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে দশটার সময়। থানায় নিয়ে রাত ১টা ৩৫ মিনিটে মামলা রেকর্ড করে ঘটনার সময় দেয়া হয় রাত ১ টা ৩৫। পুলিশ চার্জশিট প্রদান করেন ২০২২ সালের ৩০ জুলাই। মামলার পরে ৭৫ দিনের পরিবর্তে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা ১ (এক) বছর ১১ (এগারো) মাস ১৭ (সতের) দিন পর আদালতেচার্জশিট দাখিল করেন।
জামিন প্রদানকারী কর্তৃপক্ষঃ জেলা জজ আদালত,বরিশাল। কারামুক্তির তারিখঃ ২৯ সেপ্টেম্বর , ২০২০।মামলার বর্তমান অবস্থাঃ বেকসুর খালাস।খালাস প্রদানের তারিখ :২৩ অক্টোবর ২৪ সাল।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।